আইনজীবি সমিতির নির্বাচনে সভাপতি সরকার হুমায়ুন, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার প্রধান

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

আইনজীবি সমিতির নির্বাচনে সভাপতি সরকার হুমায়ুন, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার প্রধান
নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম (নীল প্যানেল) নিরঙ্কুশভাবে জয়ী হয়েছেন। নির্বাচনে সভাপতি পদে এই প্যানেলের এড. সরকার হুমায়ুন কবির এবং সাধারণ সম্পাদক পদে এড.এ এইচ এম আনোয়ার প্রধান বিজয়ী হয়েছেন। ২৮ আগস্ট রাত সাড়ে ১২টার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার এড.বারী ভূইয়া ভোট গণনা শেষে বিজয়ী প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন।
নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের এই দাপুটে বিজয়ী হওয়ার পেছনে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খান এবং সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং সংগঠনের নেতাদের একতাবদ্ধ রাখার ফল হিসেবে দেখছেন আইনজীবীরা। নির্বাচনে ১৭টি পদের ১৬টি বিএনপি সমর্থিত প্যানেল এবং একটিতে জামায়াত সমর্থিত প্যানেলে এক প্রার্থী জয়ী হন। কার্যকরী সদস্য পদে জামায়ত ইসলাম সমর্থিত বাংলাদেশ ল’ইয়াস কাউন্সিলের এড.আফরোজা জাহান জয়ী হয়েছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা ও অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির (২০২৫-২৬) কার্যকরী পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়। আইনজীবী সমিতি ভবনের দ্বিতীয় তলায় ভোটগ্রহণ চলে। এবারের নির্বাচনে ১১৭৩ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১০৫৩ জন। যা মোট ভোটের প্রায় ৮৯ শতাংশ।
সকাল থেকেই আদালতপাড়া ছিল সরগরম। প্রার্থীদের সমর্থক ও রাজনৈতিক দলের কর্মীদের শোডাউন, স্লোগান, নির্বাচনী ক্যাম্পে জমায়েত ছিল চোখে পড়ার মতো। ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করতেও দেখা যায় প্রার্থীদের। নিরাপত্তা নিশ্চিতে আদালত প্রাঙ্গণে মোতায়েন ছিল পুলিশ। তিনটি প্যানেল থেকে ১৭টি পদে ৪৭ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন। এই নির্বাচনকে নারায়ণগঞ্জ বারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নির্বাচন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
আইনজীবিরা জানান, বহুদিন পরে তারা নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ পেয়েছে। তাছাড়া সকাল থেকে আদালদ পাড়ায় জামায়াত বিএনপি নেতাকর্মীদের মিলন মেলায় পরিণত হয়।
রাতে আইনজীবি সমিতির নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশন এড, আব্দুল বারী ভূইয়া মাইকে ঘোষণা দেন, আইনজীবি সমিতির নির্বাচনে সভাপতি পদে বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নীল প্যানেলের এ. সরকার হুমায়ুন কবির ৬০০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি এড. হাফিজ মোল্লা পেয়েছেন ৩০৬ ভোট, আরেক প্রার্থী এড. মো. রেজাউল করিম খান রেজা পেয়েছেন ১৪১টি ভোট।
সাধারণ সম্পাদক পদে এড. এইচ এম আনোয়ার প্রধান ৭১৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ গোলাম মোর্শেদ গালিব পেয়েছেন ১৮৬ ভোট, আরেক প্রার্থী এড. মাঈনুদ্দিন মিয়া পেয়েছেন ১২৮ ভোট। সিনিয়র সহসভাপতি পদে এড. কাজী আব্দুল গাফফার পেয়েছেন ৬৯৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন , তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাহাঙ্গীর দেওয়ান পেয়েছেন ১৫৭ ভোট, আরেক প্রার্থী শামসুজ্জামান খোকা পেয়েছেন ১৪৯ ভোট। সহ-সভাপতি পদে এড.মো. সাদ্দাম হোসেন পেয়েছেন ৫৫৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোহাম্মদ আলী ২৬১ ভোট এবং আরেক প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন ১৩৩ ভোট পেয়েছেন।
যুগ্ম সম্পাদক পদে এড. ওমর ফারুক নয়ন ৬৭৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আলআমিন পেয়েছেন ২১২ ভোট, আরেক প্রার্থী আব্দুল মোমেন পেয়েছেন ১২৪ ভোট। কোষাধ্যক্ষ পদে নির্বাচিত এড. মোহাম্মদ শাহাজাদা দেওয়ান ৬৫৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. আফজাল হোসেন পেয়েছেন ১৩২ ভোট, আরেক প্রার্থী ইস্রাফিল পেয়েছেন ১২৯ ভোট। আপ্যায়ন সম্পাদক পদে নির্বাচিত এড. মাইন উদ্দিন রেজা পেয়েছেন ৭৯৭ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. নিজামউদ্দিন পেয়েছেন ১৫০ ভোট, আরেক প্রার্থী এড. শাহআলম শামীম পেয়েছেন ৫৫ ভোট। লাইব্রেরী সম্পাদক পদে নির্বাচিত অ্যাড. হাবিবুর রহমান পেয়েছেন ৫৯০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন, নিকটতম প্রার্থী মো গোলাম সারোয়ার পেয়েছেন ৩০১ ভোট,
আরেক প্রার্থী মো. আলী আজ্জম পেয়েছেন ১২১টি। ক্রীড়া সম্পাদক পদে নির্বাচিত এড. আমিনুল ইসলাম পেয়েছেন ৬৪৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন, তার নিকটতম প্রার্থী ইমরান হোসেন পেয়েছেন ২৫৫ ভোট, আরেক প্রার্থী শহীদ সারোয়ার তিনি পেয়েছেন ১০৪ ভোট। সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদে নির্বাচিত এড.সারোয়ার জাহান পেয়েছেন ৫৭২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন, তার নিকটতম প্রার্থী এড. নারগিস পারভীন ২৯৬ ভোট এবং আরেক প্রার্থী মজিবুর রহমান পেয়েছেন ১৪৩ ভোট। সমাজ সেবা সম্পাদক পদে নির্বাচিত এড. রাজিব মন্ডল পেয়েছেন ৬০০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন, তার নিকটতম প্রার্থী মো.নূর-ই-আলম পেয়েছেন ২৪৭ ভোট,
আরেক প্রার্থী শাহনাজ পারভীন হীরা পেয়েছেন ১৬০ ভোট। আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক পদে এড. মামুন মাহমুদ ৫৮৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি এড. মাসুদুর রহমান ২৫৯ ভোট, আরেক প্রার্থী এড. মনি গাঙ্গুলী পেয়েছেন ১৫৫ ভোট। তাঁর এছাড়া বিজয়ী এড. হুমায়ুন আনোয়ার নীল প্যানেলের সদস্য পদে এড. ফাতেমা আক্তার সুইটি পেয়েছেন ৬৯৭ ভোট, এড. তেহসিন হাসান দিপু পেয়েছেন ৫৭৪ ভোট, এড. দেওয়ান আশরাফুল পেয়েছেন ৭৩৪ ভোট, এড. আবু রায়হান পেয়েছেন ৬৯৪ ভোট এবং জামায়াত ইসলামের প্রার্থী কার্যকরী সদস্য এড.আফরোজা জাহান পেয়েছেন ৫২৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।
সকাল থেকে নির্বাচনী মাঠে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান মনির, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সাংসদ এড. আবুল কালাম, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজীব, যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাউসার আশা, মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহামন রনিসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এছাড়াও আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির প্রভাবশালী নেতা জাকির খানও।
অন্যদিকে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মাঈনুদ্দিন আহমাদ, মহানগর আমীর মাওলানা আবদুল জব্বার, সেক্রেটারি ইঞ্জিনিয়ার মানোয়ার হোসেন, জেলা সভাপতি মমিনুল হক সরকারসহ অন্যান্য নেতারা।
প্রসঙ্গত, এই নির্বাচনের মাধ্যমে আবারো ফিরে এসেছে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের হারানো জৌলুস। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার থাকাকালীন গত একদশকের সময় ধরে আইনজীবী সমিতির নির্বাচন কুক্ষিগত করার প্রক্রিয়া বিদ্যমান ছিল। নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির ইতিহাসে এবারের মতো প্রাণচাঞ্চল্য, উৎসবমুখর আর প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতি আইনজীবীদের একটি বড় অংশ অতীতে প্রত্যক্ষ করেনি বলে মত সিনিয়র আইনজীবীদের। এই নির্বাচনে নজর ছিল বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক । নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের প্রশাসনের জন্য ‘টেস্ট কেইস’ বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামী নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি মাওলানা আবদুল জব্বার। আনন্দপূর্ণ এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রশাসন সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বলে মত বিশ্লেষকদের।
নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভূঁইয়া। অন্যরা হলেন- এডভোকেট বোরহানউদ্দিন সরকার, অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান মোল্লা, এডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক, এডভোকেট সুমন মিয়া ও এডভোকেট মতিউর রহমান মতিন। ৩ সদস্যের আপিল বোর্ডের প্রধান হলেন, এডভোকেট নবী হোসেন। বাকি দুইজন হলেন এডভোকেট আজিজুল হক হান্টু ও অ্যাডভোকেট মনজুরুল হক খান।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম মনোনীত এড. সরকার হুমায়ূন কবীর ও এড. এইচ. এম. আনোয়ার প্রধানের পূর্ণ প্যানেল, জামায়াত সমর্থিত বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল মনোনীত এড. হাফিজুর রহমান ও এড. মো. মাইনউদ্দিন মিয়ার পূর্ণ প্যানেল এবং আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রার্থী এড. রেজাউল করিম খান রেজা ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এড. শেখ মো. গোলাম মোর্শেদ গালিবের আংশিক প্যানেলসহ ৪৭ প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন।
সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট এ. হাফিজ মোল্লা, অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ূন কবীর, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল করিম খান রেজা; সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট কাজী আ. গাফ্ফার, অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান খোকা, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর দেওয়ান; সহ-সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট মো. সাদ্দাম হোসেন, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন; সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট মো. মাইনউদ্দিন মিয়া, অ্যাডভোকেট শেখ মো. গোলাম মোর্শেদ গালিব, অ্যাডভোকেট এইচ. এম. আনোয়ার প্রধান; যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট এ.কে.এম. ওমর ফারুক নয়ন, অ্যাডভোকেট আল-আমিন, অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল মোমেন; কোষাধ্যক্ষ পদে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শাহাজাদা দেওয়ান,
অ্যাডভোকেট মো. আফজাল হোসেন, অ্যাডভোকেট ইস্রাফিল; আপ্যায়ণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মাইনউদ্দিন রেজা, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন; লাইব্রেরী সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট মো. আলী আজ্জম, অ্যাডভোকেট মুহা. গোলাম সারোয়ার, অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান; ক্রীড়া সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট মো. শহীদ সারোয়ার, অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মো. ইমরান হোসেন; সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট নার্গিস পারভীন, অ্যাডভোকেট মো. সারোয়ার জাহান, অ্যাডভোকেট মো. মজিবুর রহমান; সমাজসেবা সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট শাহনাজ পারভীন হীরা, অ্যাডভোকেট রাজিব মন্ডল, অ্যাডভোকেট মো. নূর-ই-আলম; আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট মণি গাঙ্গুলী, অ্যাডভোকেট মামুন মাহমুদ মিয়া, অ্যাডভোকেট মো. মাসুদুর রহমান।
এ ছাড়া ৫টি কার্যকরী সদস্য পদে লড়বেন অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আনওয়ারুল আজিম চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মো. গোলাম মোস্তফা, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান, অ্যাডভোকেট ফাতেমা আক্তার সুইটি, অ্যাডভোকেট আফরোজা জাহান, অ্যাডভোকেট মো. তেহসিন হাসান, অ্যাডভোকেট দেওয়ান আশরাফুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট রাকিবুল হাসান, অ্যাডভোকেট আবু রায়হান, অ্যাডভোকেট তাওফিকুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আবদুর রব নির্বাচনে লড়েন।