থমকে আছে না.গঞ্জ-৫ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের গণসংযোগ

লতিফ রানা
প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

থমকে আছে না.গঞ্জ-৫ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের গণসংযোগ
# প্রার্থীরা কোন সীমানা নিয়ে নির্বাচনী কাজ করবে বুঝতে পারছে না
# অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে এলাকায় গ্রহণ যোগ্যতা তৈরি করতে হয় বলে দাবি
# আসন পুনর্বিন্যাসে বন্দরের প্রার্থীদের কোন গুরুত্ব থাকবে না : বন্দরবাসী
গত ২৮ আগস্ট ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সে সময় আগামী রমজানের আগে ভোট আয়োজনের জন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব। যেহেতু আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে রমজান শুরু হওয়ার কথা সে হিসেবে সব কিছু ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। হিসেব মতে মাঝখানে বাকি আছে মাত্র ৫ মাস। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনে বিভিন্ন দলের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক সম্ভাব্য প্রার্থীরা দল ও এলাকার জনগণের কাছে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণে গণসংযোগসহ কৌশলী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে নির্বাচন কমিশনের আসন সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাবের কারণে আটকে আছে নারায়ণগঞ্জ এর তিনটি আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের প্রচারণা। বিশেষ করে গ্যাঁড়াকলে পড়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তাদের মতে নারায়ণগঞ্জের অন্য দুটি আসনে (নারায়ণগঞ্জ-৩ ও ৪) সীমানা পরিবর্তনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তেমন একটা বিপাকে পড়তে না হলেও বিপাকে পড়তে হবে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও জনগণকে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছে প্রকাশ করাদের সর্বশেষ তালিকায় ৯ জনের নাম পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ৫ জনই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি থেকে মনোয়ন পাওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে। যাদের মধ্যে রয়েছেন মডেল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ, বিএনপির মনোনয়নে তিনবার নির্বাচিত সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এবং সাবেক সিটি মেয়র প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব এবং কেন্দ্রীয় যুবদলের সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা সাগর। বাকিরা হলেন জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের বর্তমান সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর সাবেক আমীর মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমাদ (চুড়ান্ত ঘোষণা), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী এবিএম সিরাজুল মামুন। সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় আছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র যুগ্ম সমন্বয়ক আহমেদুর রহমান তনু এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বন্দরের মুসাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বন্দর উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক তাক লাগানো চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন এর নাম। তবে নির্বাচনের নতুন সীমানা বাস্তবায়নে বন্দরবাসী সহ বন্দরের বিএনপি মনোনয়ন প্রত্যাশী এডভোকেট আবুল কালাম ও গোলাম মোস্তফা সাগর এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাকসুদ হোসেন যদি প্রার্থী হন তাহলে খুবই মুশকিলে পড়বেন বলে স্থানীয়দের অভিমত।
এরই মধ্যে মাসুদুজ্জামান মাসুদ, সাখাওয়াত হোসেন সহ বেশ কয়েকজন মনোনয়নপ্রত্যাশী পূর্বের সীমানার পক্ষে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। পূর্বের সীমানা বহাল রাখতে আবেদন করেছেন এডভোকেট আবুল কালাম ও মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমাদ। সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন গোলাম মোস্তফা সাগর। তাদের মতে, একটি নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে তাকে অবশ্যই সেই নির্বাচনী এলাকার মানুষজন ও পরিবেশের সাথে পরিচিত হতে হয়। তাদের চাহিদার গভীরতা, না পাওয়ার ক্ষোভসহ বিভিন্ন সমস্যার সাথে নিজেদের সহানুভূতি বিনিময় করে, স্থানীয় সমস্যাগুলোর সমাধান না হওয়ার পিছনে পূর্ববর্তী জনপ্রতিনিধিদের দুর্বলতাগুলো তুলে ধরে নিজেদের যৌক্তিক আশ্বাস প্রদানের মাধ্যমে বছরের পর বছর কাজ করে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে হয়। একই সাথে তাদের বিভিন্ন দুর্বল স্থানগুলো মেরামতের চেষ্টায় নিজেকে ব্যস্ত রাখার সাথে সাথে সেই এলাকার একজন প্রার্থী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করতে হয়। গত ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত দেশের বিভিন্ন আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া প্রস্তাবে নারায়ণগঞ্জের তিনটি আসনের সীমানা পরিবর্তনের বিষয়টি এলাকার মানুষ ও প্রার্থী হতে ইচ্ছুক ব্যাক্তিদের সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। তাদের মতে হঠাৎ করে অন্য কোন এলাকার লোক, যে কিনা সেই এলাকার সম্পর্কে কিছুই জানে না, তার উপর ভরসা করা যায় কিনা সেখানকার মানুষ সেটাই জানে না, সেখানে কিভাবে সে প্রার্থী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারে।
পূর্বের সীমানা অনুযায়ী বন্দরের ইউনিয়ন ও নাসিক এর অংশসহ পুরো বন্দর উপজেলা, সদর উপজেলার দুটি ইউনিয়নসহ শহর সংলগ্ন নাসিক এলাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন গঠিত। ফতুল্লা থানাসহ নাসিকের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন এবং সোনারগাঁ উপজেলার পুরোটা এলাকা নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের অন্তর্ভূক্ত ছিল। কিন্তু প্রস্তাবিত নতুন সীমানা অনুযায়ী পুরো বন্দর উপজেলাকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে বন্দরের ইউনিয়নভূক্ত এলাকা সোনারগায়ের পূর্বের সীমানার সাথে এবং বন্দরের নাসিক ৯টি ওয়ার্ড শীতলক্ষ্যার পশ্চিমপারের নাসিকের ১৮টি ওয়ার্ড মিলে পুরো নাসিক এলাকাকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন হিসেবে দেখানো হয়েছে।
এরই মধ্যে মাসুদুজ্জামান মাসুদ দলীয় সবুজ সংকেত আছে এবং তার প্রতি স্থানীয় বিএনপি নেতা কর্মীদের ব্যাপক সমর্থন আছে বলে দাবি করেন। ইতিমধ্যে তিনি বিভিন্নভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাওয়াসহ নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনকে পূর্বের সীমানায় রাখার দাবি জানান। বিএনপির মনোনয়নে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের তিনবারের নির্বাচিত সাবেক এমপি এডভোকেট আবুল কালামও নিজেকে নির্বাচনের প্রস্তুত করে নিচ্ছেন। এরই মধ্যে প্রচারণা স্বরূপ বিগত সময় দায়িত্ব পালনে তার তত্ত্বাবধানে বন্দরের বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরছেন তার সমর্থকরা। আবুল কালাম গণসংযোগসহ দলীয় কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যাপকভাবে। এরই মধ্যে বন্দরবাসী প্রাণের দাবি পূর্বের সীমানা বহাল রাখার জন্য ইসি বরাবর আবেদনসহ এলকাবাসীকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। দলের নেতা কর্মীদের সাথে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বলেও জানান তিনি। ২০১৬ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন সাখাওয়াত হোসেন খান। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার অনেক সমর্থকই তাকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখতে চায়। সেই হিসেবে তিনিও দলীয় মনোনয়নের আশা প্রকাশ করেন। একই আসন থেকে মাসুকুল ইসলাম রাজীবও বিএনপির মনোনয়নের দাবিদার। তবে দলের সিদ্ধান্তের উপরই ভরসা করতে চান তিনি। গোলাম মোস্তফা সাগর জাতীয় পর্যায়ে বিএনপি নিয়ে কাজ করার সুবাদে এবং বন্দরের বিএনপি নেতা কর্মী ও সাধারণ মানুষের সাথে ভালো সম্পর্ক দাবি করে তিনিও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানিয়েছেন। মাওলানা মাঈনুদ্দিন আহমেদ ও সিরাজুল মামুন এর নিজ নিজ দল থেকে প্রার্থী হিসেবে চুড়ান্ত করা হয়েছে জানা গেছে। আহমেদুর রহমান তনু এনসিপির মনোনয়নের বিষয়ে আশাবাদী এবং নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। অন্যদিকে মাকসুদ হোসেন এরই মধ্যে নিজেকে আসন্ন নির্বাচনের একজন প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন বলে জানা গেছে।