কুখ্যাত ওসমান সাম্রাজ্যের অপরাধীদের বিচার শুরু

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
-copy-68b94fe016215.jpg)
কুখ্যাত ওসমান সাম্রাজ্যের অপরাধীদের বিচার শুরু
# অপরাধীদের শাস্তির দাবী নিহত পরিবারের
# দুই হত্যা মামলায় চার্জশিট আদালতে জমা
২০২৪ সনের ৫ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে পরে দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে শাসন করা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার পতন ঘটে। তার পদত্যাগের আগেই আওয়ামী লীগের অনেক এমপি মন্ত্রী ছাত্রজনতার রোষানলে পড়ার আগে পালিয়েছেন। তার মাঝে নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি শামীম ওসমান এবং সেলিম ওসমান সহ পুরো ওসমানীয় সম্রাজ্যের পতন ঘটে। অথচ গত বছরের ৫ আগষ্টের আগ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে ওসমানরা একক আধিপত্য করে সর্বত্রে শাসন শোষন, অনাচার,অত্যাচারের মাধ্যমে মানুষকে জিম্মি রেখে নিজেদের মাতাব্বুরি প্রতিষ্ঠা করে সকল ধরনের অপকর্ম করেছে। তাদের অপকর্মে যারাই বাধা হয়েছে তারাই নানা ভাবে হেনস্থার শিকার হয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে মানুষের উপর গুলি চালিয়ে হত্যা চালান। আর এজন্য নারায়ণগঞ্জে তাদের নামে প্রায় শতাধিক মামলা হয়েছে। তার মাঝে অর্ধ শতাধিক হত্যা মামলা হয়েছে। এই হত্যা মামলা গুলোতে ওসমানীয় সম্রাজ্যের সন্ত্রাসীরা আসামী হয়েছে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ সদর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় দায়ের করা দুটি হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ৪৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বুধবার ২৭ (আগষ্ট) পিবিআই এর দাখিল করা চার্জশিট নারায়ণগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উত্থাপন করা হয় বলে জানান কোর্ট ইন্সপেক্টর মো: কাইউম খান। এর আগে (২৬ আগস্ট) চার্জশিটের প্রতিবেদনে আদালতের নেজারত শাখায় হস্তান্তর করা হয় বলে সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল রাশেদ।
দাখিল করা দুইটি অভিযোগপত্রে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, তার ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়ন, ভাতিজা আজমেরী ওসমান, অয়ন ওসমানের শ্বশুর ফয়েজ উদ্দিন লাভলু, শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটু, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া সাজনু, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, অয়ন ওসমানের শ্যালক মিনহাজুল ইসলাম ভিকিসহ ৪৮ জনকে অভিযুক্ত করেছে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২৪ সালের ২১ জুলাই বিকেলে আন্দোলন চলাকালীন সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আব্দুল লতিফ নামে ৪০ বছর বয়সী রিকশাচালক। নিহত আব্দুল লতিফের বাবা মো.নেজাবুদ্দিন ৯ সেপ্টেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ১২ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পিবিআই। অভিযোগপত্রে এজাহারনামীয় ১২ জন আসামী ছাড়াও আরও দু’জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আব্দুল লতিফ হত্যা মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ধার্য্য করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত অন্যরা হলেন- সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়া, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি, সাবেক কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল, সাবেক কাউন্সিলর ওমর ফারুক, সিদ্ধিরগঞ্জের আশরাফ, ইয়াসিন আরাফাত রাসেল, আবু বকর সিদ্দিক ওরফে আবুল। চার্জশিটভুক্ত সকলেই সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী বলে পরিচিত। এ মামলায় অন্যান্যদের পাশাপাশি ওমর ফারুক ও শাহজালাল বাদল এজাহারনামীয় আসামি না হলেও তদন্তে ঘটনায় সম্পৃক্ততা পাওয়াতে তাদের নামযুক্ত করা হয়েছে বলে জানান কাইউম খান। সাবেক কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি ও ইয়াসিন আরাফাত রাসেল কারাগারে বন্দি আছেন বলেও জানান তিনি। নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় পঞ্চাশের অধিক মামলা হলেও এই প্রথম কোনো মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় গত বছরের ২৭ আগস্ট দায়ের করা হোসিয়ারি শ্রমিক রাসেল হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামী শামীম ওসমান, শামীম ওসমানের ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়ন, ভাতিজা আজমেরী ওসমান, অয়ন ওসমানের শ্বশুর ফয়েজ উদ্দিন লাভলু, শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর রহমান টিটু, মহানগর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি এড. খোকন সাহা , মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া সাজনু, জাকিরুল আলম ভূঁইয়া হেলাল, অয়ন ওসমানের শ্যালক মিনহাজুল ইসলাম ভিকিসহ মোট ৩৪ জনকে আসামী করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। এই মামলার এজাহারনামীয় ১৫ আসামি পাশাপাশি আরও ১৯ জনকে অভিযুক্ত করে পিবিআই চার্জশিট দাখিল করেছে।
অপরদিকে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের অর্ধশত হত্যা মামলায় শামীম ওসমান বাহিনীর ওসমানীয় সম্রাজ্যের রতি মহারতিরা আসামী হয়েছেন। কিন্তু জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া থেকে শুরু করে নিহত সকলের পরিবারের একট্ইা দাবী আসামীদের শাস্তি যেন নিশ্চিত করা হয়। আদালতে চার্জশীট দিয়ে যেন তা শেষ না হয়ে যায়।
তাছাড়া ওসমানরা নারায়ণগঞ্জের মানুষের জনরোষের গণধোলাই থেকে বাঁচতে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে সকলে। তাদের অনাচারের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে এখন তছনছ হয়ে গেছে। সামনে দিন গুলোতে তারা নারায়ণগঞ্জে ফিরে আগের মত দাঁড়াতে পারবে কি না তা নিয়ে রয়েছে জনতার মাঝে নানা আলোচনা হচ্ছে। তবে সচেতনমহল বলছে জুলুমকারীরা কারো কাছে ভালো মানুষ হতে পারে না। তাদের পতন ঘটাই ছিলি স্বাভাবিক। দুই হত্যা মামলায় তাদের যেন শাস্তি নিশ্চিত করা হয়।