নয়া সমীকরণে পুনর্বিন্যাস হওয়া তিনটি আসন

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
-copy-68be92163d5e1.jpg)
নয়া সমীকরণে পুনর্বিন্যাস হওয়া তিনটি আসন
নারায়ণগঞ্জের তিনটি সংসদীয় আসনে সীমানা পুনর্বিন্যাসে নির্বাচন কমিশনারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর থেকেই নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক মহলে শুরু হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বর্তমানে এই সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক মহলের কিছু নেতৃবৃন্দ স্বাগত জানলে ও অনেকে নির্বাচন কমিশনারের সিদ্ধান্তকে নিয়ে তুলছেন নানা প্রশ্ন। এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৩ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বেশির নেতাকর্মীরাই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের নয়া সমীনা গঠন নিয়ে অসন্তোষ নেতৃবৃন্দের সংখ্যা কম। তা ছাড়া আগামী এয়োদশ নির্বাচনকে ঘিরে পুনর্বিন্যাসিত তিনটি আসনে নয়া সমীকরণ যোগ হতে যাচ্ছে যাকে ঘিরে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মাঝে হট্টগোলের আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে ৪ আসন এককভাবে ফতুল্লা নিয়ে গঠিত হওয়ায় সেখানকার একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী হতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বর্তমানে কয়েকজন নিজেদের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে ব্যানার-ফেস্টুন ও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে টাইমলাইনে আসতে চাইছেন। একইভাবে ৩ আসনে সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁও থেকে আরো কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী মনোনয়ন চাইবেন বলে আলোচনা চলছে এর বাহিরেও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ নিজের সিদ্ধিরগঞ্জ নিয়ন্ত্রণে রাখতে দ্রুতই ৩ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে ঘোষণা দিতে পারেন। একইভাবে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বেশির ভাগ অংশ বন্দর থাকায় সেখান থেকে এবার একাধিক প্রার্থী বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার আশঙ্কা পাওয়া যাচ্ছে। যাকে ঘিরে নয়া সমীকরণে পরতে যাচ্ছে সীমানা পুনর্বিন্যাস হওয়া তিনটি আসন।
এদিকে বর্তমানে পর্যালোচনায় এসেছে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে সীমানা পুনর্বিন্যাসে যোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে। বর্তমানে এই আসনে সিগন্যালের আশায় মাঠে না নেমে নেতাকর্মীদের দিয়ে মেডিকেল ক্যাম্প দিয়ে আলোচনায় থাকতে চাইছেন সাবেক পদত্যাগকারী নেতা শাহ-আলম। ২০১৮ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় ক্ষোভে পদত্যাগ করেছিলেন তিনি। এরপর প্রায় এক দশক তিনি রাজনীতি থেকে কার্যত আড়ালে ছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বসন্তের কোকিলের মতো আবার সক্রিয় হতে চাইছেন এবং হাইকমান্ডের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা গেছে। তা ছাড়া চলতি বছরের গত ৩ এপ্রিল ফতুল্লায় নিজ কার্যালয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন শাহ আলম। সেখানেই তিনি আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে বলেন, আমি নমিনেশন পাওয়ার যোগ্যতা রাখি। ইনশাআল্লাহ এবার নির্বাচন করব। জনগণের প্রিয় প্রতিনিধিকেই এবার সুযোগ দেওয়া হবে। নিজের নেতৃত্বের শক্তি তুলে ধরে তিনি দাবি করেন, তার সময়ে জেলা বিএনপির কমিটিতে ফতুল্লার ৩৬ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তার ভাষায়, মানুষ তখন বলেছিল এটা ফতুল্লার কমিটি নাকি জেলার কমিটি! আমি চাইতাম সবাইকে জায়গা দিতে। কিন্তু তার বিগত দিনের সেই পদত্যাগ কান্ড এবার তার জন্য কাল হয়ে দাড়াঁতে পারে। তা ছাড়া এই আসনে আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি। তিনি বিগত দিনে শামীম ওসমানের দ্বারা অত্যাচারিত-নিপীড়িত হয়েছিলেন।
এ ছাড়া ও দলের দূ সময়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার থাকা এই রনি নির্বাচন করতে প্রয়োজন তিন ক্রাইটেরিয়ায় এগিয়ে থাকলে ও ফিটনেসে তিনি পিছিয়ে পরেছেন। তা ছাড়া গত ৫ আগষ্টের পরবর্তী সময়েসহ তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। তা ছাড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ সমীনা পুনর্বিন্যাসের পর থেকেই দুটানায় রয়েছে। অন্যদিকে এই আসনের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক সাংসদ সদস্য আলহাজ¦ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ৪ আসন থেকে মনোনয়ন চাইলে ও বর্তমানে তার মূল চাওয়া হিসেবে বিবেচনায় রয়েছে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন। কারণ তার সবচাইতে বেশি ভোটের স্থান হিসেবে পরিচিতি সিদ্ধিরগঞ্জ সীমানা পুনর্বিন্যাসে ৩ আসনের সাথে যুক্ত হয়েছেন। তা ছাড়া নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব। তিনি ও এবার নয়া মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় এই আসনে এবার কতটুকু মূল্যায়িত হবেন সেটাই দেখার বিষয়। তা ছাড়া আগামী নির্বাচনে বিএনপি জোটের সাথে নির্বাচনে গেলে মুফতি মনির কাশেমী বিএনপির প্রার্থী হবেন। কিন্তু এবার পাচ্ছেন না ধানের শীষ প্রতীক। লড়তে হবে নিজ দলের প্রতীকে। এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে নির্বাচন করে আলোচনায় এসেছিলেন। বিতর্কিত সেই নির্বাচনে পেয়েছিলেন লাখ খানেক ভোট। মূলত ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার কারনেই অচেনা মুখ হয়েও বিপুল ভোট লাভ করেন। এবার ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের পর ফের নির্বাচন করতে মুখিয়ে আছেন তিনি। ইতোমধ্যে বিএনপির সাথে জোট করলে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে ছাড় পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তার। তবে বিগত নির্বাচনের মত এবার জোটের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার সুযোগ থাকছে না। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রার্থীকে তার নিজ দলের প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করতে হবে।
তা ছাড়া নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বর্তমানে শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ নির্বাচনী মাঠে গত কয়েকমাস যাবৎ সক্রিয় রয়েছেন। দলীয় সকল কার্যক্রমে তার পক্ষে কাজ করছেন মহানগর বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের একটি গ্রুপ। বর্তমানে আসনটিতে তিনি মাঠে রয়েছেন এককভাবে। তা ছাড়া সীমানা পুনর্বিন্যাসের পরে আসনটিতে বন্দর বড় হওয়ায় তিনি বর্তমানে বন্দরে বেশি সময় পাড় করছেন। নিয়মিত তারেক রহমানের ৩১ দফা নিয়ে কাজ করছেন। অন্যদিকে অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু। মহানগর বিএনপিকে যেভাবে গত ৩ বছর যাবৎ আগলে রেখেছেন ঠিক সেভাবেই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনকে আগলে রাখতে তারা ও মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছেন। বর্তমানে তারা জনগণের সুখে দু:খে তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। দলীয় কার্যক্রমে একটিভ রয়েছেন। অন্যদিকে এই আসনে সাবেক এমপি আবুল কালাম ও এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশী। যা তিনি বিএনপির ৪৭ তম প্রতিষ্ঠাবর্ষিকী উপলক্ষে শহরে ধানের শীষ হাতে নিয়ে শোভাযাত্রার মাধ্যমেই জানান দিয়েছেন। কিন্তু সীমানা পুনর্বিন্যাসে এই আসনে বন্দর থেকে আরো মনোনয়ন প্রত্যাশী বাড়তে পারে। সেই সমীকরণ চলছে।
নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন সিদ্ধিরগঞ্জ-সোনারগাঁও একত্রিত হওয়ায় এই আসনে চোখ রয়েছে অনেকেরই এদিকে ৩ লাখ ৭০ হাজার ভোটের সোনারগাঁওয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার ভোটের সিদ্ধিরগঞ্জ একত্রিত হওয়ায় এই আসনে ভোট টানতে মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেকেই। বর্তমানে সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে আলহাজ¦ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন। তিনি ইতিমধ্যে গত ৭/৮ মাসে কয়েকবার সোনারগাঁও গনসংযোগ করে সেখানে একটি ভালো অবস্থান সৃষ্টি করে ফেলেছেন। তা ছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জে তার ব্যাপক ভালো অবস্থান রয়েছে। সেই সুবাদে তিনি নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে মনোনয়ন পেলে বিপুল পরিমানে ভোট পেয়ে জয় লাভ করবেন বলে আশা রয়েছে। তা ছাড়া গত ৫ আগষ্টের পরবর্তীতে নানা অভিযোগ ও শিক্ষাগত যোগ্যতায় গিয়াসের থেকে অনেকটাই তলানিতে রয়েছেন আজহারুল ইসলাম মান্নান। বর্তমানে গিয়াসের এন্ট্রিতে মান্নানের সর্বনাশ। এদিকে বর্তমানে ৩ আসনে গিয়াস ব্যতিত শক্ত মনোনয়ন প্রত্যাশী না থাকায় আরো অনেকেই এই আসনে গিয়াস ঠেকাও মিশনে হতে যাচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী সেই আলোচনা চলছে। বর্তমানে নয়া সমীকরণে পরতে যাচ্ছে ৩ আসনটি। এদিকে গত বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে নারায়ণগগঞ্জ ৩, ৪ ও ৫ আসনে সীমানায় পরিবর্তন আশায় নারায়ণগঞ্জের ৩টি আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সংকট সৃষ্টিতে তিনটি আসনে নয়া সমীকরণ তৈরি হতে যাচ্ছে।