কেন্দ্রের হুঁশিয়ারির পর নিশ্চুপ কিছু মনোনয়নপ্রত্যাশী
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
কেন্দ্রের হুঁশিয়ারির পর নিশ্চুপ কিছু মনোনয়নপ্রত্যাশী
নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনে মনোনয়ন নিয়ে শেষ সময়ে বেড়েছে মানসিক চাপ। সাধারণত নেতা-কর্মীদের বেড়েছে আগ্রহ। কে পাবেন মনোনয়ন সে হিসেব আগেই ঠিক করে রেখেছেন দলের হাই কমান্ড। এখন আসন ভিত্তিক নেতাদের ডেকে দেওয়া হচ্ছে নানা ধরনের নির্দেশনা। সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্র হতে নির্ধারিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার কঠোর নির্দেশের পাশাপাশি,কোন বিরোধের নিষেধ করা হয়েছে।
তা ছাড়া যদি কেউ মত বিরোধ করে সেই হিসেবে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারী দেন হাইকমান্ড। এ ছাড়া ও কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা হচ্ছে যে নির্বাচন ঘিরে ষড়যন্ত্র হচ্ছে,এখন নিজেদের মধ্যে বিরোধ থাকলে এটা দলের ভেতরে প্রভাব ফেলবে।ইতিমধ্যে তাদের হঁশিয়ারীর ইতি.. না টেনে তারা আরো বলেছেন, যারা নতুন মুখ তারা একটু পিছনেই থাকবেন কারণ যারা গত ১৭ বছর আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে নির্যাতিত যারা পরীক্ষিত তারাই পাবে মনোনয়ন।
যাকে ঘিরে ইতিমধ্যে কিছু মনোনয়ন প্রত্যাশী নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছেন। এদিকে গত (১৯ ও ২০ অক্টোবর) সারাদিন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ও তাদের অনুসারীরাসহ ‘আল হামদুলিল্লাহ’ লিখে পোস্ট করে নিজেদের পক্ষে জানান দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে চলছে শেষ সময়ের হিসেব-নিকেশ। এ সময়টাকে কঠিন সময় বলেও মনে করছেন অনেকে। তারা ভাবছেন এ সময়ে যারা দলকে ম্যানেজ করতে পারবে তারাই পাবেন মনোনয়ন। যদিও দল বলছে তারা বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত নিয়েই মনোনয়ন দিবেন। এদিকে আলোচনা উঠছে, চলতি মাসেই কে মনোনয়ন পাবে সেইদিকে একটু সিগন্যাল লক্ষ্য করা যাবে।
বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, জনপ্রিয়তার শীর্ষে,প্রতি আসনে ২ থেকে ৩ জন করে প্রার্থীকে মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে বলা হবে। কোন কারণে কারোটা বাতিল হলে যেন অপর প্রার্থী থাকে। আর তফসিল অনুযায়ী মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের দিন একজনকে রেখে অন্যদের প্রত্যাহার করে দেওয়া হবে। ফলে এখনই কেউ চূড়ান্ত সংকেত বা নির্ধারিত হবে না। চূড়ান্ত জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরো কিছুদিন।
এদিকে গত ২ মাস যাবৎ নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ব্যাপক দ্বন্দ্ব লক্ষ্য করা যায়। কেউ নিজেকে মেইড ইন নারায়ণগঞ্জ দাবি করছেন আবার কেউ অন্যজনকে মেইড ইন ওসমান বলে দাবি করছেন। তা ছাড়া বিভিন্ন পক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে স্বগরম হয়ে উঠেছিলো নারায়ণগঞ্জের অলিগলি। তা ছাড়া তারেক রহমানের ৩১ দফার লিফলেট বিলির মাধ্যমে নিজেদের প্রচারণাসহ ডেঙ্গু প্রতিরোধে মাঠে জোরালো অবস্থান বিভিন্ন অনুদানে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের এগিয়ে আসার বিষয়ে দেখা গেলে ও গত (২০ অক্টোবর) নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী এড. সাখাওয়াত হোসেন খান, এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু, মাসুকুল ইসলাম রাজীব, আবুল কালামের ছেলে আবুল কাউসার আশা, মাসুদুজ্জামান মাসুদ। কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের সাথে আলাপ আলোচনায় বসলে ও সেখানে এদের মধ্যে কিছু সিন্যাল আসেনি বলে জানা গেছে।
কিন্তু সেখান থেকেই বেড়িয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ফেসবুকে (আল হামদুলিল্লাহ)‘র ঝড় তুলে ফেলে। কিন্তু এর একদিন পরপরই মাসুকুল ইসলাম রাজীব নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের দিকে ঝুঁকতে শুরু করে। একই সাথে মডেল গ্রুপের কর্ণধার মাসুদুজ্জামান মাসুদ ইতিমধ্যে মাঠ থেকে বাহিরেই আছে। একই সাথে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে ছেড়ে এড. সাখাওয়াত হোসেন খান ও এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু বর্তমানে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে তারেক রহমানের ৩১ দফা পৌঁছে দেওয়ার কাজ করলে ও প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু জাফর আহম্মেদ বাবুল বর্তমানে চষে বেড়াচ্ছেন (সদর-বন্দর) অলিগলি। তা ছাড়া কিছুদিন পূর্বে ও নারায়ণগঞ্জবাসী অনেকেই বাবুলের নাম না শুনলে ও বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন জুড়ে প্রাইম বাবুলের জয়ধ্বনী।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ-১ রূপগঞ্জ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ৪ থেকে ৫ জন থাকলে ও আলোচনায় দুইজন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির ও বর্তমান কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু। ইতোমধ্যে দুইজনকে কেন্দ্রে ডাকা হয়েছে। গুলশান কার্যালয়ে তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন হাই কমান্ড। দুই পক্ষের লোকজনই ইতিবাচক সাড়া দেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু গুলশানের ডাকে বাকিরা নিশ্চুপ হয়ে পরেন। নারায়ণগঞ্জ-২ আড়াইহাজার আসনে দলের ঢাকা বিভাগের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ ও সহ-অর্থনৈতিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন মনোনয়ন প্রত্যাশী।
দল এ দুইজনকে নিয়ে ভাবছেন। এখনো তারা ডাক না পেলেও এরা দুইজনের আওয়াজে বাকিরা নিষ্কিয় প্রায়। আসন পুনর্বিন্যাসের পর সিদ্ধিরগঞ্জ যুক্ত হয়েছে সোনারগাঁয়ের সাথে। ফলে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে সমীকরণ জটিল হচ্ছে। এখানে জেলা বিএনপির সদস্য ও সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন শক্ত অবস্থান গড়েছেন। অপর প্রার্থী সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপি সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান কিছুটা বেকায়দায় আছেন। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপিদর হেভিওয়েট প্রার্থী মামুন মাহমুদ যুক্ত হয়েছেন নারায়ণগঞ্জের এই আসনেটিতে।এ তিন জনের মধ্যেই আসছে মনোনয়ন।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনটি জোটভুক্ত দল জমিয়তকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বিএনপি। জমিয়তের প্রার্থী হতে পারেন মনির হোসাইন কাশেমী। তবে জোট হলেও ধানের শীষ না পেলে তিনি নির্বাচন করবেন না। কপাল খুলতে পারে অথবা শাহ্ আলমের বা মশিউর রহমান রনিরঅন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী এড. সাখাওয়াত, এড. টিপু, সাবেক এমপি আবুল কালাম, মাসুদুজ্জামান ও বাবুল। এদের মধ্যেই ৫ আসনে কোন একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।
এদিকে কিছুদিন পূর্বে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব ফেসবুকে পোস্টে লিখেছেন, ‘মনোনয়ন যাকেই দেয়া হবে তার পক্ষেই দলের সব নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এটাই দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা’। পরবর্তীতে গত সোমবার ২০ অক্টোবর রাতে গুলশান কার্যালয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে চারজন মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তলব করা হয়। সেই তলবে হাজির হয়ে দলের নির্দেশনা জেনে শুনে রাজীব ফেসবুকে পোষ্ট দিলে আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে প্রার্থীদের তলবে এক ফ্রেমে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, মহানগর বিএনপি আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু ও যুগ্ম আহবায়ক আবুল কাউসার আশা।
সেখানে তাদের মধ্যে সকলের মুখে হাস্যজ্জল দেখা গেছে।মনোনয়নপ্রত্যাশী মাসুদুজ্জামান মাসুদ ফেসবুকে পোস্ট করেছেন, ‘সময়ে এসেছে ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে দাঁড়ানোর। তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ’। এর আগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাসুদুজ্জামান মাসুদের বক্তব্যে ছিলো এমন বাক্য ঘিরে।
বিএনপি কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যাকেই মনোনয়ন দিবেন তার পক্ষে তৃণমূল নেতাকর্মীরা থাকবে। কে ত্যাগী, নির্যাতিত, দলের গুরুত্ব বহন করে সব কিছু তারা জানেন। তাই শো-ডাউন আর লিফলেট বিতরণ করে দলের হাইকমান্ডে নজর কাড়াতে লাগবে না।
চলতি মাসে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা আভাস পাওয়া গেছে। দ্রুত সময়ে ঘোষণা দেয়া হলে এক মঞ্চে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দেখার অপেক্ষা করছে তৃণমূল। এদিকে বর্তমানে মাঠ ছেড়ে যাওয়া কিছু মনোনয়ন প্রত্যাশীকে দেখা গেলে ও নতুন নতুন কিছু নয়া রূপে জন্ম হচ্ছে।


