ওরা ভূঁইফোড় বিএনপি নেতা
দুর্দিনের কান্ডারী নন বসন্তের কোকিল
পরিচয় প্রকাশ গুপ্ত
প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
দুর্দিনের কান্ডারী নন বসন্তের কোকিল
নারায়ণগঞ্জে ভোটার প্রিয় ধানের শীষ প্রতীক দখলে নিতে দুই শিল্পপতি মাঠে আলোড়ন সৃষ্টি ও হৈ চৈ বাঁধিয়ে দিয়েছেন। দুজনেরই দাবী, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন তিনিই পাবেন এবং তিনিই পারবেন বিরাট ব্যবধানে দলকে পাশ করাতে। দল তাকেই পাকা কথা দিয়েছে এবং মাঠে প্রচার প্রচারনা চালাতেও বলেছে। এ দুজন হলেন, প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু জাফর আহমেদ বাবুল ও মডেল গ্রুপের চেয়ারম্যান মাসুদুজ্জামান মাসুদ।
এদিকে প্রশ্ন উঠেছে, দলীয় মনোনয়নের আসল দাবীদার কে? এ প্রশ্নের সার্বজনীন উত্তর, দলীয় মনোনয়নের আসল হক্কদার হচ্ছেন দলের পরীক্ষিত নেতাকর্মী। যারা শ্রম দিয়ে ঘাম দিয়ে দলকে বিকশিত করে, দলকে জনসম্পৃক্ত করে। দলীয় কর্মসূচী রাস্তবায়নে যারা রাজপথে সমাবেশ ও বিক্ষোভ করে, শ্লোগান দেয়, দেয়াল লিখন আঁকে এবং প্রয়োজনে জীবণের ঝুঁকিও নেয়। এসব করেই একজন তরুণ কর্মী এক সময় দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে উঠেন। একজন তরুন ভবিষ্যতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, নিদেনপক্ষে, একজন এমপি হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই রাজনীতির অঙ্গনে প্রথম পা রাখে। দলীয় মনোনয়নের হক্কদার আসলে তারাই। বর্তমানে দু’শিল্পপতি দলীয় নেতাকর্মীর এ হক্ক আত্মসাৎ করতে টাকার বস্তা নিয়ে মাঠে নেমেছেন। তবে আল্লাহ হক্ক আত্মসাৎকারীকে পছন্দ করেন না। হক্কদার ক্ষমা না করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমাও করেন না।
বিএনপির তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ, বর্তমানে এ দু’শিল্পপতি নানা ভাবে নিজেদের বিএনপির পুরনো কর্মী প্রমানের চেষ্টা করছেন। হিন্দু বৈরাগীদের মতো তারা গায়ে জিয়া নামের নামাবলী ধারণ করে ও মুখে “জিয়া” “জিয়া” জপ তুলে এখন জনপদে ঘুরে বেড়াচ্ছেন’, ধানের শীষের ভোটারদের মাঝে বিএনপির ৩১ দফা কর্মসূচীর লিফলেট বিলাচ্ছেন। এবং এসব করছেন তারা বিএনপি নেতাকর্মী সমভিহারে, যেন সাধারন মানুষ তাদের বিএনপি মনে করেন। এজন্য পাইকারী দামে তারা বিএনপি নেতাকর্মী কিনে নিয়েছেন। মাসুদুজ্জামান মাসুদ বিএনপি হিসেবে ঢাকায় নিজের সদস্য পদ নবায়নও করে এসেছেন।
এদিকে, শিল্পপতি মাসুদ ও বাবুল দুজনেই নিজেদের পুরনো বিএনপি ও যুবদল নেতা বলে আত্মপরিচয় দিচ্ছেন। মাসুদুজ্জামানের দাবী, তিনি দু’যুগ পূর্বে ১১নং ওয়ার্ড যুবদল কমিটিতে ছিলেন। এদিকে, শিল্পপতি বাবুলের দাবী, ১৯৭৮ সালে বিএনপির প্রথম জেলা কমিটিতে তিনি সাধারন সম্পাদক পদে ছিলেন। এ ব্যপারে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, ১৯৭৮ সালে কেন্দ্রীয় বিএনপি গঠিত হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির প্রথম কমিটি গঠিত হয় এক বছর পর ১৯৭৯ সালে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুস সবুর সেন্টু বলেন, ১৯৭৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে সম্মেলন করে জেলাও মহানগর কমিটি গঠিত হয়েছিল। আঃ মতিন চৌধুরী ও কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম ছিলেন জেলা কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারী, অধ্যাপক রেজাউল করিম ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক। অপর দিকে, শহর কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারী ছিলেন যথাক্রমে হাজী জালালউদ্দিন (জালাল হাজী) ও হাসান জামাল। এ কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন হানিফ কবির এবং সিনিয়র সহ সভাপতি ছিলেন শিল্পপ্ি এসএ খায়ের।
জনাব সেন্টুকে “আপনি এখন কোন শিল্পপতির সঙ্গে আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মাসুদুজ্জামানকে সমর্থন দিয়েছি। “কত টাকার বিনিময়ে” জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সহব্যস্ত হয়ে বলেন, “নাউজুবিল্লা, টাকায় গরু ছাগল কেনা যায়। সবুর খান সেন্টু বিক্রির মাল না।”
বিএনপির তৃণমূল কর্মীরা জনান, এ শিল্পপতিদ্বয় দলের দুর্দিনের কান্ডারী নন, এরা বসন্তের কোকিল। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের মনোনয়ন এরা নিলামে কিনে নিতে চান।


