মনোনীত-মনোনয়ন বঞ্চিতদের প্রতিযোগিতা
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
মনোনীত-মনোনয়ন বঞ্চিতদের প্রতিযোগিতা
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনীত ও মনোনয়ন বঞ্চিতদের ব্যাপক প্রতিযোগীতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কে কত লোক জমায়েত করে শোডাউন দিবে, কে কত লোক নিয়ে সমাবেশ করে চমক দেখাবে নিয়মিত এমন পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির মাধ্যমে যে যার যার অবস্থান জানান দিয়ে আসছেন। একই সাথে মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান নানান কৌশলে মনোনয়ন বঞ্চিতদের তার পক্ষে নিতে চাইছে যেখানে অনেকেই তার সঙ্গে করছেন একত্মতা।
কিন্তু মনোনয়ন বঞ্চিত ৩ নেতা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান, সাবেক সাংসদ সদস্য এড. আবুল কালাম, মহানগর বিএনপি নেতা আবু জাফর আহম্মেদ বাবুল। বর্তমানে এরা (সদর-বন্দরে) পাল্টাপাল্টি সমাবেশ, পাল্টা পাল্টি শোডাউন, পাল্টাপাল্টি গণসংযোগ করেছেন। প্রতিটির মধ্যেই মনোনীত ও মনোনয়ন বঞ্চিতদের একই রকম লোকসমাগম লক্ষ্য করা যায়। আবার অনেক সময় মনোনয়ন বঞ্চিতদের লোক মনোনীত প্রার্থীর লোকসমাগম থেকে বেশি দেখা যায়। এমনভাবেই বর্তমানে ব্যাপক প্রতিযোগীতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
তা ছাড়া গত শুক্রবার বন্দরে মনোনয়ন বঞ্চিতদের জনসভায় নেতারা বলেন, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির এমপি নির্বাচিত করতে হলে ত্যাগী একজনকে মনোনয়ন দিতে হবে। হঠাৎ করে জেগে উঠা কোন শিল্পপতির হাতে মনোনয়ন তুলে দিলে আসনটি হাত ছাড়া করতে হবে। বিএনপির তৃণমূলের নেতারা এই প্রার্থীকে মেনে নিতে পারছে না। অচিরেই বিএনপি এ বিষয়ে জাগ্রত না হলে আগামীতে মশাল মিছিল করা হবে।
তা ছাড়া ও তারা বলেন, কোন দোসরকে বিএনপি মনোনয়ন দিবে তা হবে পারে না। এটা দ্রুত পুনবিবেচনা করা দরকার। আমার সকলেই চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণা আগ মুহুর্ত্ব পর্যন্ত মাঠে থাকবো। কিন্তু সকলেই কাউর পক্ষ না হয়ে ধানের শীষের প্রচারনায় ব্যস্ত থাকবো। আশা করি দল কখনো ভূল করবে না, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন। তা ছাড়া বর্তমানে যারা মাসুদুজ্জামানের সাথে যারা রয়েছে বিগত দিনে ও তাদের শিল্পপতি পছন্দ ছিলো মালে ও এখনো তাদের শিল্পপতি পছন্দ মালে এমন মন্তব্য করেন মনোনয়ন বঞ্চিত নেতারা। এদিকে বন্দরে পাশাপাল্টি সমাবেশ মাসুদুজ্জামান বলেছেন, বন্দর ও নগর একই মায়ের দুই সন্তান।
আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি, তবে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনকে একটি আধুনিক ও স্বপ্নের নারায়ণগঞ্জে রূপান্তরিত করা সম্ভব। তা ছাড়া তিনি বলেছেন, আজকে আমি আসার সময় দেখলাম বন্দরে বিএনপির আরেকটি গ্রুপ সমাবেশ করতে যাচ্ছেন। আমরা তো এগুলো চাই না। আমরা চাই ঐক্যবদ্ধতা। আমরা কেন জনগণের কাছে আমাদের কার্যকালাপে প্রকাশ করে দিবো যে আমাদের মাঝে বিভক্ত রয়েছে।
এদিকে সদর ও বন্দর নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনটি এ জেলার গুরুত্বপূর্ণ আসন। এ আসনে বিএনপি মনোনয়ন চেয়েছিলেন অন্তত ১০ জন। তাদের মধ্যে বেশি আলোচনায় ছিলেন সাবেক যুবদল নেতা ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ, সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, বিএনপন্থী ব্যবসায়ী আবু জাফর আহমেদ বাবুল ও শিক্ষক আলিয়ার হোসেন।
পরবর্তীতে গত (৩ নভেম্বর) দল মাসুদুজ্জামানকে প্রার্থী ঘোষণার পর তাদের বিরোধিতা আরও তীব্র হয়। গত ১৫ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে সাখাওয়াত, কালাম, টিপু, আবুল কাউসার আশা এবং আবু জাফর বাবুল অভিযোগ করেন, “মাসুদুজ্জামান কখনো বিএনপি করেননি। গত ১৫ বছরে তিনি সরকারঘনিষ্ঠ সুবিধা পেয়েছেন। বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামেও ছিলেন না। আমরা চাই, ধানের শীষ এমন কাউকে দেওয়া হোক, যিনি অন্তত গত ১৫ বছর দল করেছেন।” এ দাবিতে তারা নিয়মিত কর্মসূচি পালন করেন এবং তৃণমূলে সমর্থন গড়ে তোলার চেষ্টা চালান এবং নানাভাবে সফলতা ও অর্জন করেন।
এদিকে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান এবং সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু সম্ভাব্য প্রার্থী বিরোধীতায় থাকলেও সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী মাসুদুজ্জামানকে সমর্থন জানান। কারণ তিনি দলীয় প্রার্থী এবং দলীয় সিদ্ধান্তের সাথে একমত। যাকে ঘিরে দলে লক্ষ্য করা যায় নানা সমীকরণ। কিন্তু বর্তমানে কোনভাবেই থেমে নেই প্রতিযোগীতা বর্তমানে মনোনীত প্রার্থী নিজের শক্তি বড় করতে মনোনয়ন বঞ্চিতদের পাশে চাইছেন একই সাথে মনোনীত প্রার্থীর বিরোধীতা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিন পর্যন্ত দেখতে চাইছেন মনোনয়ন বঞ্চিতরা।
কিন্তু এদিকে গত (২৭ নভেম্বর) নগরীতে মহানগর বিএনপির আয়োজনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করার লক্ষ্যের সমাবেশে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু হঠাৎ সমর্থন দিলে ও বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের ডাকে সাড়া না দিয়ে মাসুদুজ্জামানকে সমর্থন দেয়নি এই ৩ মনোনয়ন বঞ্চিত নেতা। এরাব বর্তমানে মনোনীত প্রার্থীর সাথে পাল্টাপাল্টিভাবে শক্ত অবস্থানেই রয়েছেন। বর্তমানে দুই পক্ষের ব্যাপক প্রতিযোগীতা চলছে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, “আমরা নমিনেশন চেয়েছিলাম। দল এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। দল প্রাথমিকভাবে কারো নাম প্রকাশ করেছে- সেটাকে যদি আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, সেটা আমাদের প্রতি অন্যায় হবে। চূড়ান্ত ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করতে পারি। কিন্তু সেই অপেক্ষাকেও আজ অবজ্ঞার চোখে দেখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “আমরা কারো অবজ্ঞার শিকার হতে চাই না। আমরা কখনো দলের সঙ্গে বেইমানি করিনি, ভবিষ্যতেও করবো না। চূড়ান্ত নমিনেশন যে পাবে- তার পক্ষেই আমরা থাকবো। কিন্তু আমাদেরকে রক্তচক্ষু দেখিয়ে দুর্বল করার চেষ্টা করবেন না।”
তিনি আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে দীর্ঘদিন রাজপথে সক্রিয় নেতাদের কাউকে মনোনয়ন দিলে দলের ভেতরে কোনো ধরনের সন্দেহ বা বিভক্তি তৈরি হতো না।
মাসুদুজ্জামানকে উদ্দেশ করে সাখাওয়াত বলেন, “ধৈর্য হারাবেন না। আমাদেরকে প্রতিপক্ষ হিসেবে গণ্য করবেন না। আমরা বিএনপির পরীক্ষিত নেতাকর্মী- রাজপথে ছিলাম, জেল খেটেছি। চূড়ান্ত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে আমরা একসঙ্গেই কাজ করবো।”


