মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৭ ১৪৩১   ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

চাঁদ রাত থেকে শুরু হয়ে যেত ঈদের আনন্দ : হালিম আজাদ

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:৫০ পিএম, ৩ জুন ২০১৯ সোমবার

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) :ঈদ মানেই খুশি। মানুষের মাঝে আনন্দের সুখ বার্তা বয়ে আনে ঈদ। প্রতিটি মানুষের মাঝেই এক ধরনের অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে এই ঈদকে ঘিরে। সকলেই যেন অতিতের সকল কিছু ভুলে গিয়ে মিলিত হয় ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে। তাই এই দিনটি ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি বিশেষ দিন।যুগের চিন্তা ২৪ এর এবারের ঈদ আড্ডায় ঈদের প্রস্তুতি এবং খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, কবি ও সাংবাদিক হালিম আজাদ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন রাসেল আদিত্য। 

 

ঈদুল ফিতরের প্রস্তুতি নিয়ে হালিদ আজাদ বলেন, বরাবরের মতো এবার নারায়ণগঞ্জে ঈদ কাটাবো। কর্মসূত্রে বিগত কয়েক বছর যাবৎ ঢাকায় বসবাস করলেও ঈদের সময় সাধারণত নারায়ণগঞ্জেই চলে আসি।

 

ঈদের দিন কীভাবে কাটান জানতে চাইলে তিনি বলেন, সকালে উঠে প্রস্তুতি নিয়ে প্রথমে ঈদগাহে যাই। তারপর সুযোগ হলে বক্তাবলী গ্রামের বাড়িতে চলে যাই। বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করি। গ্রামের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে দেখা করি। আর বাড়িতে না যাওয়া হলে নামাযের পর বাসায় অবস্থান করি । এ সময় বন্ধু-বান্ধব কবি, সাহিত্যিকরা আসেন তাদেরকে সময় দিয়ে থাকি।


ঈদের কেনাকাটা প্রসঙ্গে তিনি জানান, ঈদের কেনাকাটা কখনওই করিনা। সব আমার মিসেস করে। তাছাড়া আমার জন্য পরিবার থেকে ঈদের যে বরাদ্দ থাকে তা আমি সধারণত নামাজের আগে গরীব মানুষের মধ্যে বন্টন করে দিয়ে থাকি। 

 

ছোট বেলার ঈদ এবং বর্তমান সময়ের ঈদের মধ্যে অনেক পার্থক্য জানিয়ে কবি হালিম আজাদ বলেন, ছোট বেলায় আমরা আসলে উদগ্রীব থাকতাম চাঁদ দেখার জন্য কখন চাঁদ উঠবে। চাঁদ দেখার সাথে সাথে শুরু হয়ে যেত ঈদের আনন্দ-উৎসব। তারপর শুরু হতো মেহেদী দেওয়ার পালা। আমার মেঝ বোন সবসময় মেহেদী দিয়ে দিত। নামজের পর আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে যাওয়া, তাদেরকে ছালাম করা এগুলো আমাদের সময় ছিল। এগুলো এখন আর নেই। বাঙালিরা আসলে আমাদের নিজেদের সাংস্কৃতি ভুলতে বসেছে। তার সাথে যোগ হয়েছে আবার তথ্য প্রযুক্তি।

 

তখন মানুষে মানুষে বন্ধন অটুট ছিল। এখন আর এটাকে খুঁজে পাওয়া যায়না।আগে তো যৌথ পরিবার ছিল। এখন যৌথ পরিবার ভেঙ্গে যাওয়ায় এই বন্ধন ভেঙ্গে যাওয়ার কারণ। আমরা জাতীয়ভাবে অনেক ক্ষেত্রে হয়তো উন্নত হয়েছি। কিন্তু মানুষের প্রতি মানুষের যে মমত্ববোধ সেটা কিন্তু দিন দিন লোপ পাচ্ছে।

 

তিনি বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আমাদের গ্রাম সমৃদ্ধশালী ছিল। তখন এত গরীব মানুষ ছিলনা। সবাই মোটামুটি স্বচ্ছল ছিল। কাজ-কর্ম ছিল। সবাই কাজ করতো। এখন আমদের দেশের একটি বিশাল সংখ্যক লোক গরীব তারা ঠিকমত ঈদ করতে পারেনা। লাখ লাখ পরিবার ঈদের কোনো কেনাকাটা করতে পারেনা। বাংলাদেশের শতকরা ১২%-১৪% লোক একেবারেই নিন্ম  আয়ের নিচে। ভিটে-মাটিহীন, রাস্তাঘাটে থাকে। এদর জীবনে তো আর ঈদের কিছু নাই। আসলে এই জায়গাটিতেই আমরা পরাজিত। পরাজিত মানে হলো একটা স্বাধীন দেশে সব মানুষের মৌলিক অধিকার যে ভোগ করবে আমরা সে ব্যবস্থা করতে পারিনি। দিন দিন গরীব মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আবার পুঁজিপতিদের সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু দুটোর মধ্যে ভারসাম্য হচ্ছেনা।

 

ঈদের সালামি নিয়ে মজার স্মৃতিচারণ করে হালিম আজাদ বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন যারা বড় ছিল- চাচা চাচী, বড় বোন, দুলাভাই তাদের কাছ থেকে ঈদের সালামি নেয়ার জন্য আমরা দল বেধে ছুটে যেতাম। এবং তাঁরা ধরেই নিত যে ওরা আসবে। তারপর শুরু হত ঈদ সালামির প্রতিযোগিতা। আর্থৎ প্রতিযোগিতাটা ছিল ভাই বোনদের মধ্যে কে বেশি সালামি পেয়েছে আর কে কম পেয়েছে। তখন এটা ছিল একটি ঈদ কালচার। এখন আর এই কালচার খুঁজে পাওয়া যায়না।

 

কবি হালিম আজাদ তাঁর ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীদের অগ্রিম ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, সবার উদ্দেশ্যে আমার কামনা  এবারের ঈদ তাঁদের ভালোভাবে কাটুক। সব মানুষকে সঙ্গী করে যাতে ঈদ কাটে অর্থাৎ আশেপাশের গরীব মানুষের সাথে যাতে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেয় এটাই প্রত্যশা করি।