বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

যুগের চিন্তা ‘হ্যালো নারায়ণগঞ্জ’।অতিথি : মো. রওশন আলী (ভিডিও)

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:৫০ পিএম, ১০ মার্চ ২০২১ বুধবার

 

বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রওশন আলী বলেছেন, যুদ্ধে যাওয়ার আগে আমাদের এলাকা গোদনাইল রেল সড়কের এখানে দেখি এক রাজাকার এক লোককে ধরে রিক্সায় করে নিয়ে যাচ্ছে। তখন আমি প্রতিবাদ করলে সেই বিহারী রাজাকার আমাকে খারাপ ভাষায় গালি দেয়। যেই গালি পাকিস্তানীরা ব্যবহার করতো। সে সময় আমার এক বন্ধুর বড় ভাইকে সেখানে পেয়ে তাকে ঘটনা বললাম। তখন দুইজনে মিলে তাকে ধরে নদীর পাড়ে নিয়ে জবাই করি।

 

বুধবার (১০মার্চ) সন্ধ্যায় যুগের চিন্তা’র আয়োজনে ও সিনিয়র সাংবাদিক ইউসুফ আলী এটমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত লাইভ টকশো ‘হ্যালো নারায়ণগঞ্জ’ অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে মুক্তি যুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বিভিন্ন রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনার সময় এসব কথা বলেন তিনি।

 

মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রেরণার বিষয়ে সঞ্চালক ইউসুফ আলী এটমের প্রশ্নের জবাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রওশন আলী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আমরা কেন গিয়েছি এত সল্প সময়ের মধ্যে সেই বর্ণনা দেয়া সম্ভব না। তবে যুদ্ধ শুরুর আগের কয়েক বছর পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে ঢাকাতে আন্দোলন করতে গিয়ে কীভাবে ছাত্ররা নিহত হয়েছে তা দেখে এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ ভাষণের সময় আমরা আদমজী থেকে হেটে রেসকোর্স ময়দানে গিয়ে সেখানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণে অনুপ্রাণিত হওয়ার সময়ই আমাদের যুদ্ধের কথা মাথায় আসে।

 

তিনি বলেন, আমাদের গ্রুপ কমান্ডার (সম্পর্কে আমার মামা হয়) আলী হোসেন আমাকে একদিন বললো, মুক্তিযুদ্ধে যেতে হবে। আমার গ্রুপে ছিলাম কামান্ডার আলী হোসেন, সহকমান্ডার মতিন, এহসান করিম রমজান, খোরশেদ, আক্কাস আলী ও আরকে টেক্সটাইল মিলের মালিক আব্দুল হামিদ। আমরা যুদ্ধের ট্রেনিংয়ের জন্য একসাথে আগরতলা যাই। তখন আমরা গেরিলা ট্রেনিংয়ের জন্য আগরতলা থেকে ৮০ কিলোমিটার দুরের সিমরা এলাকায় যাই। আমরা যাতে পাকিস্তান সরকারকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দিতে পারি সে জন্য এই ট্রেনিং।

 

তিনি জানান, সেখান থেকে আমাদের এই টিম বাংলাদেশে এসে পাটের মিল ধ্বংস করে দিই। এই সময় আমাদের সাথে আরো কয়েকজন যুক্ত হয়। আমরা প্রায় ১৫ জনের একটি শক্তিশালী দল গঠন করে পুনরায় ভারতে আরো শক্তিশালী ট্রেনিংয়ের জন্য যাই। জুট মার্কেটিং অপারেশনে খুশি হয়ে আমাদের সেক্টর কমান্ডার সফিউল্লাহ (তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার পরবর্তীতে সেনা প্রধান) আমাদেরকে একটি চায়না রাইফেলসহ বেশ কিছু পুরস্কার দেয়। সেখান থেকে এসে আরো কিছু অপারেশন করার পর আমার উপর নতুন আরো ৬ জনের একটি দলকে নিয়ে ট্রেনিংয়ের জন্য আবারো ভারতে চলে যাওয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়।

 

তিনি বলেন, এরপর আমি বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের অধীনে সেনাবাহিনীতে যুক্ত হই। ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীনের ৪/৫ দিন আগে আমরা ভারত থেকে চারটি কোম্পানী কুমিল্লায় অবস্থান করে যুদ্ধ করতে ছিলাম। সে সময় কুমিল্লায় দুইটি বাস থামাতে গেলে বাস থেকে পাকিস্তানী বাহিনী গুলি করতে থাকে। এতে আমাদের সাথে থাকা কয়েকজন ইন্ডিয়ান ও বাঙ্গালী নিহত হয়। তখন আমাদের সাথে সেক্টর কমান্ডার সফিউল্লাহ এবং মেজর নাসিমও ছিল।

 

এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, এরপর আমাদের এই চারটি কোম্পানী একসাথে সেখান থেকে টঙ্গী গিয়ে অবস্থান করি। তখন ইন্ডিয়ান আর্মিরা ঢাকাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। আমাদের বন্দুক তখন ঢাকার দিকে তাক করা ছিল। আমাদের ইন্ডিয়ান জেনারেল অরলা (জগজিত সিং অরোরা) পাকিস্তানী জেনারেল নিয়াজীকে অস্ত্র ফেলে দিয়ে আত্মসমর্পনের নির্দেশ দেয়। এরপর পাকিস্তানীরা আত্মসমর্পন করলে আমরা সেখান থেকে এসে রমনার একটি ভবনে অবস্থান করি।

 

যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আমি আর সেনাবাহিনীতে চাকুরী করবো না বলে জানাই। তখন আমি সেখান থেকে ইস্তফা দিয়ে চলে আসি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেনাবাহিনীর চাকুরী ছেড়ে বাড়িতে আসতে আমার কয়েকদিন সময় লেগে যায়। এসময় অমার পরিবার জানতোনা আমি যে সেনাবাহিনীতে জয়েন্ট করেছিলাম। তাই যখন সবাই ফিরে আসতাছে, অথচ আমি ফিরতেছি না, তখন আমার পরিবার ভেবে নিয়েছে আমি যুদ্ধে নিহত হয়েছি। আমি বাড়িতে ফেরার পর তারা বিস্মিত হয়েছিল।