বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১   ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শুরু হচ্ছে ৬ লেনের কাজ, থাকবে কোনটা?

তুষার আহমেদ

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৬:৩৬ পিএম, ৯ এপ্রিল ২০২১ শুক্রবার

চার লেনের বর্তমান ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডটি ছয় লেনে উন্নীত করার কাজ চলমান। ছয় লেনে উন্নীত হলে বর্তমান সড়কটির প্রশস্ত ৫০ ফুট থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ১২৯ ফুটে। সেই লক্ষ্যে গত ৪ মার্চ থেকে সড়কের পাশে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তবে, লিংক রোডের এই উচ্ছেদ কার্যক্রমের ক্ষেত্রে চাষাঢ়ার দিকে এসে বিপত্তিতে পড়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।সূত্র বলছে, চাষাঢ়া মোড় থেকে শুরু করে লিংক রোডের প্রথম ৬শ’ মিটারে দু’পাশের পার্শ্ববর্তী জায়গার মালিক প্রতিরক্ষা বিভাগ। এর মধ্যে চাষাঢ়া মোড়স্থ লিংক রোডের অভিমুখের পূর্ব পার্শ্বে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জায়গায় অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাব ও পশ্চিমে ব্যক্তি মালিকানা জমিতে ঐতিহাসিক বায়তুল আমান ভবন অবস্থিত।

 

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমানের দাদা প্রয়াত খান সাহেব ওসমান আলী ঐতিহাসিক এই ভবনটি গড়ে তোলেন। এই বাড়িতে বসেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এ অবস্থায় ছয় লেনে সড়ক উন্নীত করণের কাজে ভাঙ্গা পড়তে পারে ঐতিহাসিক বায়তুল আমান ভবন অথবা রাইফেল ক্লাব।

 

তবে, প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, অন্যান্য স্থানে দু’দিক থেকেই উচ্ছেদ হলেও এই অংশে যেকোন একপাশ দিয়ে চলবে উচ্ছেদ কার্যক্রম। সে হিসেবে, সড়কের পূর্ব দিকে যদি উচ্ছেদ হয়, তাহলে রাইফেল ক্লাব আর পশ্চিম পার্শ্বে উচ্ছেদ হলে ঐহিত্যবাহী বায়তুল আমান ভবনটির সিংহভাগ অংশই চলে যাবে সড়কে। তবে, কোন দিক থেকে উচ্ছেদ করা যায়, তা নিয়ে দোটানায় রয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

 

প্রকল্পের উপ-ব্যবস্থাপক সড়ক ও জনপথের প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘চাষাঢ়ার শেষের যেই ৬শ’ মিটার জায়গা, সেটা প্রতিরক্ষা বিভাগের সম্পত্তি। এটা নিয়ে আমাদের কথা বার্তা চলছে। কয়েকবার মিটিং হয়েছে। প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, এখানে তাদের একটা মাস্টার প্ল্যান রয়েছে। তবে, তারা আমাদের রাস্তার জন্য জমি দিবে যেকোন একপাশ দিয়ে। কিন্তু কোন পাশ দিয়ে জমি দিবে, এটা নিয়ে আলোচনা চলছে। যদি পূর্বপাশ দিয়ে দেয়, তাহলে রাইফেল ক্লাব ভাঙ্গা পড়বে, আর পশ্চিম পাশ দিয়ে দিলে আমান ভবন ভাঙ্গা পড়বে।’ সড়ক ও জনপথ বিভাগের এই প্রকৌশলী জানান, ‘৮.১০৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডটির বর্তমান প্রশস্ত ৫০ ফুট। ছয় লেনে উন্নীত করণের মাধ্যমে এই সড়কটির মোট প্রসস্থ হবে ১২৯ ফুট। সড়কটি ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে গত ৯ ফেব্রুয়ারি সড়ক ও জনপথ অধিদফতর চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তি অনুযায়ী এতে ব্যয় হবে প্রায় ৩৬৫ কোটি টাকা। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে।

 

তিনি জানান, ‘সড়কটি ছয় লেনে উন্নীত হলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ যাতায়াতে সময় ও অর্থ উভয় সাশ্রয় হবে। এছাড়াও এ সড়ক দিয়ে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া থেকে পঞ্চবটি-মুক্তারপুর-লৌহজং-মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচে যাতায়াত করা যাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যেই চলতি অর্থবছরে এক কোটি টাকা বরাদ্ধ পাওয়া গেছে। আরো ৫০ কোটি টাকা বরাদ্ধ চাওয়া হয়েছে। তবে, উচ্ছেদ কার্যক্রম ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের আওতার বাইরে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ নিজস্ব উদ্যোগ ও তহবিল থেকে এই উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা ও ব্যায় ভার বহর করছেন।’ তিনি জানান, ‘বর্তমানে সড়কটি ১৫ দশমিক ৫০ মিটার (৫০ ফুট) চওড়া আছে। ৬ লেনে উন্নীত করার পর সড়কটির মোট প্রসস্থতা হবে ৩৯ দশমিক ২০ মিটার (প্রায় ১২৯ ফুট)। সড়কটির মাঝখানে দুই মিটার চওড়া মিডিয়ান থাকবে। এর মধ্যে নানা প্রজাতির ফুল ও সৌন্দর্যবর্ধক গাছ থাকবে। পুরো সড়কে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। ধীরগতির যানবাহনের জন্য সাড়ে পাঁচ মিটার চওড়া করে উভয়পার্শ্বে সার্ভিস লেন থাকবে। সড়ক বিভাজক দিয়ে তা আলাদা করা হবে। সড়কের পাশ দিয়ে মানুষের পায়ে হেটে চলাচলের জন্য থাকবে ফুটপাত। সড়কে যেন পানি না জমে তার জন্য আরসিসি ইউ ড্রেন, সার ড্রেন নির্মাণ করা হবে। যানবাহন সুশৃঙ্খলভাবে সড়ক পার হওয়ার জন্য একটি ইউটার্ন থাকবে।

 

তিনি আরো বলেন, ‘শিবু মার্কেট, জালকুড়ি ও ভুইঘরের গুরুত্বপূর্ন স্থানে একটি করে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে। যাত্রী ওঠা-নামার জন্য যানবাহন যেন থামতে পারে সেজন্য বাস-বে নির্মাণ করা হবে। জনগণের পারাপারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান সাইনবোর্ড ও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হবে। চার লেনের বর্তমান সড়কের পুরাতন পেভমেন্ট তুলে সেটি আবার নতুন করে নির্মাণ করা হবে। ৯টি বক্স কালভার্ট সম্প্রসারণ করা হবে। এছাড়াও প্রকল্পের আওতায় একটি মসজিদ ও একটি অফিস ভবন নির্মাণ করা হবে। সড়কটি প্রসস্থ করার কাজ শেষ হলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়ক যোগাযোগে কোন যানজট থাকবে না।’

 

তিনি জানান, ‘গত ৯ ফেব্রুয়ারি এনডিই-টিবিএল-এইচটিবিএল-জেভি নামক যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে এই কাজের জন্য সওজ প্রায় ৩৬৫ কোটি টাকার একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই তাদের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি প্রকল্প এলাকায় নিয়ে আসা শুরু করেছে। প্রাথমিক কাজও শুরু হয়েছে। সড়কের এলাইনমেন্ট ঠিক করে লাল নিশান টানানো হয়েছে। বর্তমানে সড়কের পাশের গার্বেজ অপসারণের কাজ শুরু চলছে। ওইখানে কোন অবৈধ দখলদার থাকবে না। সব উচ্ছেদ হবে। কোন অবৈধ স্থাপনা বসার সুযোগ যাতে না থাকে, আমরা সেভাবেই নকশা করেছি।’