বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০   ১৮ রমজান ১৪৪৫

ধুলায় ধূসর পূর্বাচলসহ ৬০ কিলোমিটার সড়ক

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৬:২৬ পিএম, ২৬ এপ্রিল ২০২১ সোমবার

দূর থেকে দেখলে মনে হবে চারদিক কুয়াচ্ছন্ন। একটু কাছে যেতেই ভুল ভেঙে যাবে আর বুঝা যাবে ধূলায় ধূসরময় চারদিক। এ চিত্র পূর্বাচল উপ-শহরসহ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার প্রধান কয়েকটি সড়ক ও এর সংযোগ গুলোর।

এ উপজেলার পূর্বাচল উপ-শহর, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, এশিয়ান হাইওয়ে বাইস সড়ক, রূপসী কাঞ্চন সড়ক ও ডেমরা কালিগঞ্জ সড়কসহ এসকল সড়ক গুলোর সংযোগ সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত মোট প্রায় ৬০ কিলোমিটার ধূলায় ধূসরময় হয়ে রয়েছে। এতে সাধারণ মানুষকে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বছরের পর বছর। এতে করে সাধারণ মানুষের মাঝে বাড়ছে শাস্বকষ্ট, অ্যাজমা, এলার্জি, স্বর্দি কাশিসহ ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ-বালাই। 


সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসী-কাঞ্চন সড়কের ৯ কিলোমিটার, ডেমরা-কালীগঞ্জ সড়কের ১৪ কিলোমিটার, কাঞ্চন- ভোলাব সড়ক ৫ কিলোমিটার, ছনপাড়া-ভোলাব ৫ কিলোমিটার ও এ সড়ক গুলো সংযোগ সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত মাছিমপুর, রূপসী, ভুলতা, রূপসী শীতলক্ষ্যা পাড়ের রাস্তার সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ কিলোমিটার রাস্তার বেহালদশার কারণে ধূলাবালিতে একাকার হয়ে থাকে।

 
এদিকে এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) ৩’শ ফুট সড়ক ও পূর্বাচল উপ-শহরের সড়ক গুলাতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর উন্নয়ন কাজ চলায় রাস্তাঘাট খুড়াখুড়ি ও সড়কের পাশে অবৈধ বালুর ব্যবসা করার কারণে প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সড়কগুলো ধুলা বালিতে দিয়ে বিস্তৃত থাকে। নিয়মভঙ্গ গাড়ি চালানো, যত্রতত্র যাত্রী উঠানামা, ফুট ওভারব্রীজ না থাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সকাল সন্ধ্যা দীর্ঘ যানজট লেগেই থাকে। যানজটের কারণে যানবাহনগুলো ফুটপাত দিয়ে চলাচলের চেষ্টা করে।

এতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ফুটপাতের কয়েক কিলোমিটার এলাকা ধুলাবালিতে আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। এ ধুলাবালিতে একাকার হয়ে থাকে রাস্তার দুপাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাসা-বাড়ি। পথচারীদেরকে কাপড় দিয়ে নাক-মুখ বন্ধ করে চলাচল করতে হয়। ধুলা-বালির কারণে ফসল, গাছপালাসহ পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে বলে স্থানীয়রা দাবি করেন। এছাড়ার ধুলাবালি নাক, মুখ দিয়ে ফুসফুসে প্রবেশ করে মারাত্মক রোগ বালাইয়ের সৃষ্টি করতে পারে। রাস্তাঘাটগুলো ধুলাবালিতে একাকার হয়ে থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কেউই ধুলাবালি নিরসনে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।

স্থানীয়রা জানান, তবে ধুলাবালি কমাতে মাঝে মাঝে রাস্তাগুলোতে পানি দিলেও তপ্ত রোদে তা কয়েক মিনিটের মধ্যে শুকিয়ে গিয়ে পূনরায় ধুলাবালির সৃষ্টি হয়। অবৈধ বালুর ব্যবসা বন্ধ ও রাস্তাঘাট গুলো খুব দ্রæত সংস্কার করা হলে ধুলাবালি অনেকটা কমে যাবে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা  ডা. নুরজাহান আরা খাতুন বলেন, ‘ধুলাবালি চোখ, মুখ, নাক দিয়ে প্রবেশ করলে শাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিসাধন হতে পারে। ধুলাবালিতে ফুসফুসে প্রবেশ করলে একজন সুস্থ মানুষও অ্যাজমা, এলার্জি, স্বর্দিসহ নানা রকম মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হতে পারে।’ 

ডেমরা-কালীগঞ্জ সড়কে চলাচলকারী কলিঙ্গা এলাকার বাসিন্দা মুরাদ হোসেন  বলেন, ‘ভাই আর কি কমু ধুলার লাইগা ঘর থেইক্কা বাইর হইতে মন চায় না। মানুষের ক্ষেতে কাম কইরা সংসার চালাই। ক্ষেতে ধান লাগাইলেও ধুলা গিয়া খেতের ফসলও নষ্ট অইয়া যায়। কবে যে এই ধুলা থেইকা নিস্তার পামু আল্লাই জানে।’

মুশুরি এলাকার বাসিন্দা জয়নাল বলেন, ডেমরা-কালীগঞ্জ সড়কের বেহালদশার কারণে ধুলাবালির সৃষ্টি হয়। প্রায় ১৪ কিলোমিটার সড়কটি জুড়েই ধুলাবালি। এতে করে বছরের পর বছর ধরে ভোগান্তি পোহাচ্ছে আমাদের মতো সাধারণ মানুষ। ডেমরা-কালীগঞ্জ সড়কটি কয়েক বছর আগে নির্মাণ করা হলেও এক বছর যেতে না যেতেই এটি পূনরায় নষ্ট হয়ে যায়।

কথা হয় রূপসী-কাঞ্চন সড়ক দিয়ে চলা আলহাজ্ব নুর মোহাম্মদের  সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, প্রতিদিন তাকে এ সড়ক দিয়ে আসা যাওয়া করতে হয়। ধুলাবালির কারণে কোন জামা কাপড়ই একদিনের বেশি পড়া যায় না। এতে করে খরচও অনেকটা বেড়ে যায়। 

এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়ক দিয়ে চলা সাইদুর ইসলাম জানান, রাজউকের উন্নয়নের কাজ চলায় এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়ক ও পূর্বাচল উপ-শহরের আশপাশ ধুলাবালি উড়তে থাকে। এতে করে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তার চোখে একসময় কোন সমস্যা ছিল না। ধুলাবালি দিয়ে চলাচলের কারণে তার চোখ দিয়ে এখন পানি পড়ে।  


উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুসরাত জাহান মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রাস্তাঘাটের ধুলাবালির কারণে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত । বর্তমানে ৩’শ ফুট সড়ক, রূপসী-কাঞ্চন সড়ক ও ডেমরা কালীগঞ্জ সড়কের নির্মাণ কাজ চলছে। ইঞ্জিনিয়ার ডিপার্টমেন্টের সাথে কথা বলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। টেকনিক্যাল বিষয়গুলো মানছে কি না সে বিষয়ে নিদের্শনা থাকবে।


এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী জালালউদ্দিন সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি  বলেন, আমার জানা মতে রূপগঞ্জে কাজ ব্যাপক ভাবে উন্নয়নের কাজ চলমান এবং প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে ধুলাবালি যেনো মিনিমাম পর্যায়ে রাখা যায় সে ধরণের ব্যবস্থা রাখা উচিত। আমি যতগুলো প্রজেক্ট আছে মিনিমাম পর্যায়ে থাকে এবং নিয়মিতভাবে পানি দেয় সে দিকনিদের্শন থাকবে।