বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

লকডাউনে বাস পরিবহন শ্রমিকদের মানবেতর জীবনযাপন

মনি ইসলাম

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৫:১৫ পিএম, ২৮ এপ্রিল ২০২১ বুধবার

করোনার দ্বিতীয় ওয়েবে সংক্রমণ বিস্তার রোধে সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণায় স্থল পথের ট্রেন ও গণপরিবহন খ্যাত বাস ছাড়া সকল ধরণের যানবাহন চলাচল করছে। এর মধ্যে বেশী বিপাকে পড়েছে বাস পরিবহন শ্রমিকরা। এ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জের বাস পরিবহন শ্রমিকদের মোট ৬০ জনকে ত্রাণ দেয়া হয়েছে। এর বাইরে আর কোন ধরণের সহযোগিতা পাননি বলে জানান তারা।


 
এই নিয়ে তাদের মাঝে এক ধরণের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তার উপর আবারো ৭দিন বাড়ানো হয়েছে লকডাউন। আর এতে করে তাদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। বাস পরিবহণ সেক্টরের নেতারা বিভিন্ন সময় তাদের সাহায্য দেয়ার কথা বললেও সেই কথা রাখেনি নেতারা। তাই এই লকডাউনে  চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে এখানকার বাস চালক ও হেল্পাররা।


 
এখানকার এক বাস ড্রাইভার এই প্রতিবেদককে জানান, ড্রাইভারদের জীবনটা দিন মজুরের মত। একজন দিনমজুর যেমন তাদের প্রতিদিনের আয়ের মাধ্যমেই কিনতে পারে প্রতিদিনের খাবার। তেমনি আমরা বাস চালালে ঘরে খাবার আনতে পারি না হলে খাবার কিনতে পারি না। আমরা অসুস্থতার কারণে বাস চালাতে না পারলে বাস মালিক আমাদের সে দিনের বেতন দেন না। আমরা সরকারী বাস চালাই না যে বাস বন্ধ থাকলেও মাস শেষে বেতন পাবো। ১৪ এপ্রিল থেকে গণপরিবহন বন্ধ। সব পরিবহণ চলছে শুধু আমাদেরগুলো ছাড়া। তবে কি অন্য কোনো পরিবহণে করোনা সংক্রমণ ছড়ায় না? আসলে আমাদের কষ্ট বোঝার কেউ নাই। আমরাও পারি না কারো কাছে হাত পাততে। ও দিক দিয়ে খাবারের সমস্যার পাশাপাশি  অন্যান্য সমস্যা তো আছেই। কোনটাকে সমলাবো ?


 
নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক আরেকজন বাস ড্রাইভার বলেন, আমি প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছর যাবত এ পেশার সাথে জড়িত। হেল্পার থেকে বাস ড্রাইভার হয়েছি। আমি এখন অভাবের তাড়নায় রাজ মিস্ত্রির জোগালির কাজ করে সংসার চালাচ্ছি। আমি কখনো আগে এ কাজ করিনি । তাই অসুস্থ্য হয়ে পড়েছি। এদিকে আমার বাচ্চাটাও অসুস্থ্য। যদি কোনো সাহায্য পেতাম তাহলে আমাদের সংসারটা একটু চালাতে পারতাম। গতবার সবাই মিলে আন্দোলন করেছিলাম বলে প্রত্যেক বাসের মালিকের পক্ষ হতে ৫ দিনের মত খাবার দিয়েছিল। কিন্তু এবার আমাদের অবস্থা করুন হয়ে পড়েছে। নেতারা আমাদের সবার ভোটার আইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইন্সেস এর ফটো কপি নিয়েছে। নেতারা জানিয়েছে যে আমাদের ৫ হাজার করে প্রণোদনার জন্য টাকা দিবে। এর আগেও তারা নিয়েছিল কিন্তু আমরা কোনো কিছুই পাইনি।


 
এ বিষয়ে নারায়নগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি  গিয়াস উদ্দিন বলেন,  ওই করোনা থেকে এই করোনা পর্যন্ত ১০টা টাকাও স্ট্যান্ড থেকে নেয়া হয়নি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ ফেডারেশন থেকে ২৫ এপ্রিল ড্রাইভার ও হেল্পারের কাগজপত্র দেয়া হয়েছে। ৫ হাজার টাকার প্রণোদনা দেয়ার কথা যে বলেছে সে মিছা কথা বলেছে। ফেডারেশনে আমরা কাগজপত্র জমা দিয়েছি, সেটা সরকারীভাবে হোক অথবা ফেডারেশন থেকে হোক, তারা তাদের একটা কিছু দিবে। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে আমাদের ৬০ জনকে ত্রাণ দেয়া হয়েছে।
 
অন্যদিকে ২৬ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে পরিবহণ সেক্টরকে ত্রাণ দিলেও হিমাচল পরিবহনের চালক ও হেল্পাররা জানান, তাদের কাউকে কোন প্রকার ত্রাণ দেয়া হয়নি।