বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১   ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাপা-বিএনপির আস্ফালনে আওয়ামীলীগে ক্ষোভ

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৬:২১ পিএম, ২৮ এপ্রিল ২০২১ বুধবার

ক্ষমতায় থেকেও বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের দ্বারা হামলার শিকার হচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ ও বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতারা। বোদ্ধা মহল বলছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও নারায়ণগঞ্জের ওই দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগের কোন কর্তৃত্ব নেই।

 

এর কারণ সোনারগাঁ ও বন্দরে নেই আওয়ামী লীগের সাংসদ। জোটগত কারণে সোনারগাঁ ও বন্দরে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী না দিয়ে জাতীয় পার্টিকে সমর্থন করেছে। তবে, পরবর্তীতে এটাই স্থানীয় আওয়ামী লীগের জন্য ‘কাল’ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করছেন আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারা।

ওই দুই উপজেলায় জাতীয় পার্টির প্রভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ। আবার সুবিধাভোগি কিছু আওয়ামী লীগ নেতারা জাতীয় পার্টির দুই সাংসদের কাছে পোষ্যতা স্বীকার করেছেন। ফলে ওই দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক তৎপরতা ও শক্তি উভয় লোপ পেয়েছে। তাই ক্ষমতায় থেকেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নানা ভাবেই নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছেন।


জানা গেছে, গত ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ে মামুনুল হক কান্ডে আওয়ামী লীগের কার্যালয়সহ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বসত বাড়িতে ব্যাপক হামলা চালায় হেফাজত, বিএনপি, জামায়াত-শিবির ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। ওই ঘটনায় হেফাজততো বটেই বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির নেতাদেরও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত ২৫ এপ্রিল বন্দরের মুছাপুরে বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী কর্তৃক আওয়ামী লীগ নেতাদের উপর হামলা ও বাড়ি ঘরে ব্যাপক ভাংচুরসহ লুটপাটের ঘটনা ঘটে।


মুছাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান জানান, নয়াগাঁও জামে মসজিদ কমিটি নিয়ে দ্বন্দের জেরে গত ২৫ এপ্রিল আমিসহ আমার বড় ভাই রিয়াজুল ইসলাম, মুখলেছুর রহমান, ছোট ভাই রাশেদ, আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন ও ওয়ার্ড আ.লীগের সভাপতি নবীর হোসেনের বাড়িতে জাতীয় পার্টির নেতা ও রাজাকার পুত্র ইউপি চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনের উপস্থিতিতে দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় জামায়াতের সমর্থনপুষ্ট বিএনপি থেকে জাতীয় পার্টি বনে যাওয়া সাখাওয়াত হোসেন, সাহাদাত হোসেন ও তার লোকজন। হামলায় আমাদের আহত করা সহ বাড়ি ঘর ভাংচুর করে ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়। ওই ঘটনায় বন্দর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু তারা উল্টো মানববন্ধন করে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। এমনকি মাকছুদ চেয়ারম্যানের লোকজন আমাদের হুমকি দিচ্ছে।


এদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর এমন হামলায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। তারা বলছেন, দলীয় সাংসদ না থাকায় সেখানে জাতীয় পার্টি ও বিএনপি মিলে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে হামলা চালানোর দুঃসাহস দেখাতে পেরেছে।


নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির লোকেরা আমার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির বাড়িতে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একই সাথে এই বিষয়ে যেন কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়, প্রশাসনের প্রতি সেই দাবি জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘জোটগত কারণে আমরা নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ ও সদর বন্দর জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছি। অন্যথায় নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনেই আওয়ামী লীগের সাংসদ থাকতো। ওই দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগের সাংসদ না থাকায় অন্যরা সেখানে আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা করতে চাইছে।’


নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও বন্দর ও সোনারগাঁয়ে কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় নেই। সেখানে জাতীয় পার্টির সাংসদ। জাতীয় পার্টির একজন সাংসদ বন্দরে রাজাকার পুত্র মাকসুদ চেয়ারম্যানকে নিয়ে সংসার চালায়। সেখানেতো আওয়ামী লীগ নির্যাতিত হবেই। আর এই নির্যাতনের বড় একটি কারণ হচ্ছে সেখানে আওয়ামী লীগের যারা আছেন তাদের কেউ কেউ জাতীয় পার্টির এমপিদ্বয়ের পোষ্যতা স্বীকার করেছেন। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকেও নির্যাতিত হয়, তাহলে সোনারগাঁ বন্দরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব কেমন, সেটা জনগণ বুঝুক। যারা হেফাজতকে লালন পালন করে মদদ দেয় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে, সেখানে আওয়ামী লীগের কী অবস্থা হবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর এমন হামলা চালানোয় আমি মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একই সাথে হামলাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবী জানাই।’


নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘ জোটগত কারণে সোনারগাঁ ও সদর বন্দরে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু তারা আওয়ামী লীগের দয়ায় নির্বাচিত হয়ে বিএনপি, জামায়াত, হেফাজত ও জাতীয় পার্টি মিলে আওয়ামী লীগের উপর হামলা চালাচ্ছে। ওই বর্বর হামলার ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সাথে ওই ঘটনায় কঠোর বিচারের জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি জোড়ালো আহবান জানাই।’


মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সেক্রেটারি আলহাজ্ব আবেদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাসা বাড়িতে এমন হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। বন্দরে আওয়ামী লীগ অভিভাবক হীনতায় ভুগছে। এখানে আওয়ামী লীগের সাংসদ নেই। তাই জাতীয় পার্টি ও বিএনপি জামায়াত একত্রিত হয়ে আওয়ামী লীগের উপর হামলা চালাতে সাহস পায়। আওয়ামী লীগকে এখন ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই।’