মামুনুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা
যুগের চিন্তা অনলাইন
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৩:৩৯ পিএম, ৩০ এপ্রিল ২০২১ শুক্রবার
হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে সোনারগাঁ রয়েল রিসোর্টে তাঁর সাথে অবরুদ্ধ সেই নারী (কথিত স্ত্রী)। বিয়ের আশ্বাসে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগে মামুনুলের কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) সকাল ১০টা ৫ মিনিটে বাদী হয়ে সোনারগাঁও থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ৯ (১) ধারায় মামলা দায়ের করেন। মামলার নম্বর ৩০।
মামলার এজাহারে ভুক্তভোগী দাবি করেন, ২০০৫ সালে তাঁর স্বামী মাওলানা শহীদুল ইসলামের মাধ্যমে মামুনুল হকের সঙ্গে পরিচয় হয়। মামুনুলের সঙ্গে পরিচয়ের আগে আমরা সুখে শান্তিতে বসবাস করছিলাম। আমাদের ঘরে দুই সন্তান । এদিকে আমার স্বামীর ঘনিষ্ট বন্ধু হওয়ার সুবাদে আমাদের বাড়িতে মামুনুলের অবাধ যাতায়াত ছিল। পরিচয়ের শুরু থেকেই আমার ওপর তার (মামুনুল হক) এর দিকে লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। যার ফলে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সুকৌশলে প্রবেশ করে মামুনুল হক শহীদুল ও আমার মধ্যে দূরত্ব তৈরি করতে থাকেন। মামুনুল হকের কুমন্ত্রণায় আমাদের দাম্পত্যেও জীবন চরমভাবে বিষিয়ে উঠে।
সাংসারিক এই টানাপোড়েনে একপর্যায়ে ২০১৮ সালে ১৮ আগষ্ট মামনুলের পরামর্শে আমাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের পর তিনি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিকভাবে অসহায় হয়ে পড়েন। আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মামুনুল হক আমাকে সহযোগিতার নাম করে সু-কৌশলে ঢাকায় আসার জন্য আমাকে প্ররোচিত করে। আমি একজন আলেমকে ভরসা করে সরল বিশ্বাসে তার সাথে ঢাকা চলে আসি। ঢাকা আসার পর শুরুতে তার পরিচিত বিভিন্ন অনুসারীদের বাসায় আমাকে রাখে এবং নানাভাবে আকার ইঙ্গিতে আমাকে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলো।
এক পর্যায়ে আমার পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তার প্রলোভনে পা দিতে বাধ্য হই। এরই ধারাবাহিকতায় তার পরামর্শে আমি উত্তর ধানমন্ডির কলাবাগানে ২৩/৩ নর্থ সার্কুলার রোডের একটি বাড়ির তৃতীয় তলায় সাবলেট হিসেবে ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকি। পাশাপাশি তার ঠিক করে দেয়া একটি পার্লারে কাজ শিখতে থাকি। আমার বাসা ভাড়া ও আনুসাঙ্গিক খরচ দিত সে। এক পর্যায়ে সে আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। গত ২ বছর যাবৎ বিভিন্ন সময় ঢাকা ও ঢাকার পাশ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরির নাম করে নিয়ে গিয়ে তার পরিচিত হোটেল ও রিসোর্টে রাত্রিয়াপন ও বিবাহের আশ্বাসে যৌন লালসা চরিতার্থ করে। এক পর্যায়ে আমি বিবাহের কথা বললে সে আমাকে বিবাহ করছি করবে বলে নানা অযুহাতে কালক্ষেপণ করতে থাকে।
সর্বশেষ গত ৩ এপ্রিল বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে ঘোরাঘুরির কথা বলে মামুনুল হক নিয়ে যান। সেখানে আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। রিসোর্টে অবস্থানকালে সেখানকার স্থানীয় কিছু মানুষ হঠাৎ আমাদের আটক করে পরিচয় জানতে চায় কিন্তু আমার কোনো সদুত্তর দিতে না পারায় মানুষের রোষানলে পড়ি। পরে মামুনুল হকের অনুসারীরা রিসোর্টে হামলা করে আমাদের নিয়ে যায়। কিন্তু মামুনুল হত আমাকে আমার নিজের বাসায় (উত্তর ধানমন্ডির কলাবাগানে ২৩/৩ নর্থ সার্কুলার রোড) এ ফিরতে না দিয়ে পরিচিত একজনের বাসায় অবৈধভাবে জোরপূর্বক আটকে রাখেন। এ সময় সেখানে আমাকে আমার বাবা-মা, সন্তান কারও সঙ্গে যোগাযোগও করতে দেয়া হয় নি। এক পর্যায়ে আমি সুকৌশলে আমার বড় ছেলেকে আমার দুরবস্থার সব কথা জানাই এবং আমাকে বন্দিদশা থেকে উদ্ধারের জন্য আইনের আশ্রয় নিতে বলি। পরে গত ২৭ এপ্রিল ডিবি পুলিশ আমাকে উদ্ধার করলে জানতে পারি, গত ২৬ এপ্রিল আমার বাবা রাজধানীর কলাবাগান থানায় আমাকের উদ্ধারের জন্য একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এ সময় পুলিশ আমাকে উদ্ধারের পর বাবার জিম্মায় দেয়। কিন্তু মামনুল হকের অনুসারীদের হুমকি ও ভয়ভীতি এবং আমার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে পরামর্শ করায় অভিযোগ দায়ের করতে বিলম্ব হয়।
এদিকে মামলা দায়েরর পর ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের জানান, বড় ধরণের প্রতারণার শিকার হয়েছি আমি। আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে তিনি (মামুনুল হক) আমার সঙ্গে অন্যায় করেছে। অনেক দিন ধরে প্রতারণা চালিয়ে গেছেন। আমি রাষ্ট্রের কাছে সুষ্ঠু বিচার চাই।’
নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুল ইসলাম জানান, মামলা দায়েরর পর ভুক্তভোগীকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য নারায়ণগঞ্জে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে।
এদিকে শুক্রবার দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘৩ এপ্রিল মামুনুল হকের সঙ্গে সোনারগাঁয়ে রিসোর্টে আসা নারী দুই সন্তানের জননী জান্নাত আরা ঝর্ণা থানায় এসে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেছেন তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময় তাকে ধর্ষণ করে এসেছে মামুনুল। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সোনারগাও থানায় নারী ও শিশু দমন আইন ২০০৩ এর ৯(১) ধারায় মামলা রুজু হয়। ভিকটিম জান্নাত আরা ঝর্নার ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে। এই মামলাটির অন্যান্য কার্যক্রমও চলমান আছে। আমরা এই মামলাটি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছি। ভিকটিম যাতে সুবিচার পান সেই কাজ আমরা অব্যাহত রাখব।