শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১   ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

‘কলিজার টুকরা’ বলে শিউলির ঘনিষ্ট হন খোরশেদ

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৫:২৮ পিএম, ৩০ এপ্রিল ২০২১ শুক্রবার

করোনায় মানুষের সেবা করে মানুষের বাহবা কুড়ানো কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের নতুন রূপ দেখে বিস্মিত সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, একজন প্রতিষ্ঠিত নারীকে তিনি যেভাবে সমাজের চোখে লাইভে এসে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন তা কোনভাবেই কাম্য নয়। এখন পারিবারিক একটি বিষয়কে রাজনৈতিক রূপ দেয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।

 

সূত্র জানিয়েছে, কাউন্সিলর খোরশেদের সাথে সায়েদা শিউলি নামে ওই নারীর সম্পর্কের ব্যাপারে কাউন্সিলর খোরশেদের ঘনিষ্ট সকলেই জানেন। এমনকি কাউন্সিলর খোরশেদের প্রথম স্ত্রী লুনাও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। তাছাড়া কাউন্সিলর খোরশেদের বড় ভাই এড. তৈমূর আলম খন্দকারও ব্যাপারটি জানেন। মজার বিষয় হচ্ছে, প্রতিষ্ঠিত ওই নারী খোরশেদের কাছে আর্থিক কোন সুবিধা চাননি। এমনকি রাজনীতিতেও জড়িত নন। তাহলে খোরশেদ কীভাবে ওই নারীর সাথে সম্পর্কে জড়ালেন এ নিয়ে জনসাধারণের মাঝে তুমুল আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

 

সূত্র জানায়, ছোটবেলার অপূর্ণ প্রেমের সম্পর্ক আবারও টেনে আনেন কাউন্সিলর খোরশেদ। ওই নারীর ভাইয়ের বন্ধুত্বের খাতিরে আবারো শিউলির পেছন পেছন ঘুরঘুর করেন। পরে ওই নারীর করোনা হলে এই সুযোগটাকে কাজে লাগান খোরশেদ। পুরনো প্রেমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। এরপর ভালোই চলছিল। জানা গেছে, করোনার সময় কাউন্সিলর খোরশেদের অক্সিজেন সাপোর্ট প্রজেক্টের অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের মূল উৎস ওই নারী। লিন্ডা নামক অক্সিজেন সাপ্লাই প্রতিষ্ঠানের সাথে পরিচয়ও ওই নারীর মাধ্যমে। সমাজে খুব ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত ওই নারীর সাবলম্বিতাকে কাজে লাগান খোরশেদ। নানা বাহানায়  ছোট বউ, ছোট বউ বলে, পিছ অব হার্ট (কলিজার টুকরা) বলে ওই নারীর কাছে ঘেঁষতেন খোরশেদ। সূত্র জানায়, এভাবেই ওই নারীর পরিবার, সমাজ ও ছেলেমেয়েদের কাছে খোরশেদ ওই নারীকে স্ত্রী হিসেবে পরিচিত করেন। এঘটনা ফাঁস হয় যখন কাউন্সিলর খোরশেদ ও সায়েদা শিউলীর অস্থায়ী  ড্রাইভার কাউন্সিলর খোরশেদের প্রথম স্ত্রী লুনার কাছে ফাঁস করে দেয়।

 

সূত্র জানায়, কাউন্সিলর খোরশেদ ও তার প্রথম স্ত্রী লুনা লাইভে এসে ২১ জানুয়ারির যে অভিযোগ তুলেছে, এর নেপথ্যে রয়েছে ভিন্ন কাহিনী। গত বছরের ২ আগস্ট কাঁচপুরের এসএস সিএনজি ফিলিং স্টেশনে ওই নারীকে নিজে কাজী নিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন খোরশেদ। ওই ফিলিং স্টেশনটি খোরশেদের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবিদার সায়েদা শিউলির। এরপর নানা জায়গায় অব্যাহতভাবে দেখা করেন কাউন্সিলর খোরশেদ ও ওই নারী। বিপত্তির শুরু, যখন ওই নারী গত বছরের ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় কানাডা যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করতে দিবেন। তখন স্বামী হিসেবে পাসপোর্টে খোরশেদের নাম উল্লেখ করবেন বলে জানান। এছাড়া কানাডাতে যাওয়ার কথা ছিল খোরশেদের।

 

কিন্তু এরপর যখন দুই ড্রাইভার খোরশেদের স্ত্রীর কাছে সবকিছু বলে দেয় বেকায়দায় পড়েন খোরশেদ। ১৯ জানুয়ারি কাউন্সিলর খোরশেদ সায়েদা শিউলির জন্মদিনেও অংশগ্রহণ করেছেন। ওই নারীর গাড়িও থাকতো কাউন্সিলর খোরশেদের বাড়ির গ্যারেজে। এমনকি সায়েদা শিউলির যাতায়াতও ছিল খোরশেদের বাড়িতে। এনিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে নানা কথাবার্তা হচ্ছিল। যেহুতু বিয়ের বিষয়টি গোপন রাখার কথা হয়েছিলো কিন্তু সেটি করতে পারেননি কাউন্সিলর খোরশেদ। প্রথম স্ত্রীর কাছে ধরা খেয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান তিনি। এরপর থেকেই বদলে যেতে থাকেন খোরশেদ।

 

সূত্র জানায়, ওই নারী খোরশেদের কাছে কোন অর্থ বিত্ত চান না। ওই নারীর আক্ষেপ খোরশেদ কেন প্রতারণার আশ্রয় নিলো। ওই নারীকে সমাজে হেয় করার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করছেন খোরশেদ। আসল কথা হলো, ওই নারী খোরশেদের ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হয়েছেন। এ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় কিছু মানুষ অনেক খোঁজাখুজি করে খোরশেদের কথার সত্যতা পাননি। উল্টো কি করে খোরশেদ একজন নারীকে সমাজে হেয় করেছেন সেটিই প্রমাণিত হয়েছে। তবে খুব শীঘ্রই সেসব কথা সবাই জানতে পারবে বলে জানিয়েছে সূত্র।

 

এদিকে কাউন্সিলর খোরশেদের ভিন্ন রূপ বিস্মিত করেছে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের। তাদের বিস্ময়, কী করে একজন নারীকে ফেসবুক লাইভে এসে এভাবে হেয় করা হয়। এছাড়া সবকিছু একতরফা দাবি করেন খোরশেদ। সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে খোরশেদ যেসব জায়গায় ধর্ণা দিয়েছে সেসবের প্রতিটি জায়গায় মাথা নিচু করে ফিরতে হয়েছে খোরশেদকে। সমাজে একজন সুপ্রতিষ্ঠিত নারীকে এভাবে হেয় করার পেছনে ভিন্ন কোন কারণ দেখছেন সবাই।

 

এবিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাই বলেন, আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা জাতীয় পার্টি যে দলই হোক না কেন কোন রাজনৈতিক নেতার কাছ থেকে এগুলো কাম্য নয়। আর খোরশেদ যদি করেও থাকে তা মোটেও কাম্য নয়। 

 

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক ও কাউন্সিলন খোরশেদের বড় ভাই এড. তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, বর্তমান দুনিয়া যে ভাবে চলতাছে আমি খোরশেদের বিষয়টা সেই ভাবেই দেখতাছি। তিনি আর বলেন, এই মহিলা (সাহেদা শিউলি) আমার কাছেও এসেছিলো। আমার মনে হয় ওই নারী কোন কিছুর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য এসব করছে।
 

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সবুর খার সেন্টু বলেন, খোরশেদ আমাদের মহানগর বিএনপির কোন পদ-পদবীতে নাই। এটি তার ব্যক্তিগত সমস্যা। সে ব্যক্তিগতভাবে তা সমাধান করবে। আমাদের দলীয় কোন বিষয় না।  

 

মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ্ নিজাম বলেন, খোরশেদ ভালো মানুষ, তবে খোরশেদ যদি নিজের ভুলে কিংবা নিজের অজান্তে, ইমোশনালি কোন ভুল করে থাকে তবে আমার মনে হয় এজিনিসগুলো খোরশেদের ক্লিয়ার করা উচিৎ।’

 

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য মাশুকুল ইসলাম রাজিব বলেন, যদিও এটা ব্যক্তিগত বিষয় এটা নিয়ে মন্তব্য করা সমীচীন নয়। তারপরেও যেহেতু পাবলিকলি বিষয়টা এসেছে এবং দুপক্ষের বক্তব্য পুরো বিপরীতধর্মী।  মনে করি, সত্যটা সামনে আসা উচিৎ। কেউ যাতে প্রতারিত না হন। 

 

প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগে ফেসবুক লাইভে এসে এক নারী তাকে বিয়ের জন্য ব্ল্যাকমেইলিং করছে এমন তথ্য জানানোর জন্য জনসাধারণের সহানুভুতি কুড়ালেও এখন ঘটনা ভিন্ন। সায়েদা শিউলি নামের ওই নারীও পাল্টা ফেসবুক লাইভে এসে আসল গোমড় ফাঁস করে দিয়েছেন। এছাড়া গণমাধ্যমে এনিয়ে খোঁজখবরে আরো তথ্য বেরিয়ে আসছে। এসব তথ্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর পর তারা বলছেন, এক হাতে কখনো তালি বাজেনা, আর সেই কথায় শেষ পর্যন্ত সত্য হয়েছে। খোরশদ কিভাবে ওই নারীর সাথে সম্পর্কে জড়ান এবং অত্যন্ত ঘনিষ্ট কথোপকথনোর বিষয়টি এখন অনেকেই জানতে পারছেন। প্রথমে ওই নারীকে একতরফা দোষারোপ করলেও থলের বেড়াল বেড়িয়ে আসছে। 

 

তারা বলছেন, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত একজন নারী কেন অযথা কাউন্সিলর খোরশেদের পেছনে লাগবে। আর ওই নারী এখনো তার কাছে অর্থবিত্তের কোন প্রস্তাব দেয়নি। ওই নারী দাবি করছেন, স্বীকৃতি। সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত একজন নারী কেন ই বা খোরশেদকে স্বামী দাবি করবেন। করোনা বীর হিসেবে কাউন্সিলর খোরশেদ যে কাজ করেছে তা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার, কিন্তু একজন নারীকেও অপবাদ দিয়ে সমাজের চোখে হেয় করা এটাও কিন্তু অন্যায়।

 

কেননা, করোনার বীর কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের স্ত্রী দাবি করা সায়েদা শিউলি বাংলাদেশ সিএনজি অনার্স এসোসিয়েশন নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জের সভাপতি, এফবিবিসিআই এবং বিজিএমইএ’র সদস্য। সমাজে একজন প্রতিষ্ঠিত নারী। প্রতিকূল পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত এক নারীকে সমাজের কাছে হেয় করার পেছনে ভিন্ন কোন কারণ রয়েছে কি না সেটিও জানতে হবে।