বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

আইসিইউতে মহানগর বিএনপি

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৬:০১ পিএম, ৩০ এপ্রিল ২০২১ শুক্রবার

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির অস্তিত্ব অনেকটাই খাতা কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ। সীমানা জটিলতা আর মামলার ফাঁদে আটকে রয়েছে কমিটির কার্যক্রম। একদিকে নিষ্ক্রিয় ভুমিকায় কমিটির সভাপতি - সাধারণ সম্পাদক, অন্যদিকে কার্যক্রমহীন ভাবে সময় অতিবাহিত করছেন কমিটির অধিকাংশ সদস্যরা। সব মিলিয়ে দলের কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পরে নামকাওয়াস্তে টিকে আছে মহানগর বিএনপি।


২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর মহানগর বিএনপির ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্নাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেই কমিটি ঘোষণার প্রথম সভা দলের সিনিয়র এক সহ সভাপতি ও তার অনুসারীরা যোগদান থেকে বিরত থাকেন। কার্যত স্পষ্ট করে দেন অতীতের মত পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠনের পরেও অব্যহত থাকবে দলীয় বিভাজন।


কমিটি গঠনের এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে আদালতে এই কমিটির বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন নারায়ণগঞ্জ মহানগরের ১০ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলজার খান ও একই ওয়ার্ডের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক বিএনপি নেতা নূর আলম শিকদার। ১১ নভেম্বর এই মামলার আবেদন করলে ২৮ নভেম্বর জেলা আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ শিউলী রানী দাস কমিটির কার্যক্রম স্থগিত রাখার আদেশ দেন। তার পর থেকেই কমিটির সব ধরণের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। 


মামলায় উল্লেখ্য করা হয়, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকা নিয়ে গঠনতন্ত্র অনুসারে নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটি গঠিত ও পরিচালিত। এই সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন নারায়ণগঞ্জ থানার ৮টি ওয়ার্ড, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অন্তর্গত ১০ টি ওয়ার্ড এবং বন্দর থানাধীন ৯টি ওয়ার্ড মিলে সর্বমোট ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি গঠিত। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্গত ১-১০নং ওয়ার্ডের কোন নেতাকর্মীকে এই ১৫১ বিশিষ্ট কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এক্ষেত্র গঠনতন্ত্র না মেনেই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করে দেয় আদালত।


আদালতের এই স্থগিতাদেশের সময় ক্রমাগত দীর্ঘ হতে হতে দেড় বছর অতিবাহিত হয়েছে। মামলার গ্যাঁড়াকল থেকে কমিটির কার্যক্রম পুনরুদ্ধার করতে না পারায় বর্তমান সভাপতির ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কর্মীরা। মহানগরের নেতাদের দিয়ে এই সমস্যা থেকে যে উত্তরণ সম্ভব নয় তা আঁচ করতে পেরে অনেকেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে সরে যাচ্ছেন।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহানগর বিএনপির কমিটি পূর্নাঙ্গ হবার পূর্বে যেসকল নেতারা বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করতেন তাদেরকেই পরবর্তী সময়ে মামলার জটিলতা এড়িয়ে ভিন্ন উপায়ে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করেছেন। মহানগর বিএনপির ব্যানার ছাড়াই ভিন্ন ব্যানার নিয়ে মাঠে থাকার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কমিটি আদালত থেকে স্থগিতাদেশ পাওয়ার পর থেকেই অবকাশ উদযাপনে ব্যস্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সারাবছর নিষ্ক্রিয় থাকা সভাপতি আবুল কালাম বর্তমানে বৈধভাবেই নিষ্ক্রিয় থাকার সুযোগ পেয়েছেন। অন্যদিকে দীর্ঘদিন প্রবাসী জীবন যাপন করা সাধারন সম্পাদক এটিএম কামালের স্থলে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন আব্দুস সবুর খান সেন্টু।


এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক আব্দুস সবুর খান সেন্টু বলেন, যেই সমস্যাটা নিয়ে আদালতে মামলা করেছে তা মূলত আমাদের কার্যক্রম থামিয়ে দেয়ার একটি অপচেষ্টা ছিলো। কোন দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম আদালতের মাধ্যমে থামিয়ে রাখা যায়না। মামলায় তারা অভিযোগ করেছে ১ থেকে ১০ নং ওয়ার্ড আমরা কেন অন্তর্ভুক্ত করিনি। অথচ ১১ থেকে ২৭ নং ওয়ার্ড মহানগরের অন্তর্ভুক্ত তা জিয়াউর রহমানের সময়কাল থেকেই ছিলো। এই ওয়ার্ডগুলো নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনের সাথে যুক্ত তাই এটি মহানগর। তাদের ওয়ার্ডগুলো ৪ আসনে যুক্ত হওয়ায় সেগুলো সিদ্ধিরগঞ্জ থানার আওতাধীন।


তিনি আরও বলেন, আমরা দলের ভেতর কোন্দল থাকলেও সকলকে স্থান দিয়েছি। গুলজার সাহেবকে বাদ দিয়ে আমাদের ব্যক্তিগত ভাবে কোন লাভ নেই। যেখানে ১০ জন মানুষকে নিয়ে দাঁড়াতে পারিনা সেখানে কেউ বিএনপিতে যুক্ত হতে চাইলে সেটা দলের জন্য আর্শীবাদ। কিন্তু তারা যেটি করেছে এটা কোনভাবেই দলের জন্য কল্যানকর নয়।


একই বিষয়ে মহানগর বিএনপির সহ সভাপতি সরকার হুমায়ুন কবীর বলেন, মামলাটি যেই বিষয় নিয়ে দায়ের করা হয়েছে তা হচ্ছে সিদ্ধিরগঞ্জকে কেন অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এখন আদালত এই ব্যাপারে কেন্দ্রের কাছে জবাব চেয়েছে। কেন্দ্র ২টি কাজ করতে পারে। একটি হচ্ছে তারা নতুন করে কমিটি দিয়ে দিতে পারে। আরেকটি হচ্ছে সিদ্ধিরগঞ্জকে জেলার সাথে যুক্ত করে দিতে পারে। এই দুটির একটি করলেই সমস্যা সমাধান। বিষয়গুলো সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের দেখার কথা ছিল। কিন্তু তারা তা না করে নিজেদের মত সময় ক্ষেপন করছেন।


তবে একই বিষয়ে মহানগর বিএনপির সভাপতি আবুল কালামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাউসার আশার সাথে যোগাযোগ করা হলে তার ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কমিটির সিনিয়র নেতাদের নিষ্ক্রিয়তা ও দায়িত্বে উদাসীনতা পুরো মহানগর বিএনপিকে ব্যর্থ কমিটি তৈরীতে সহায়তা করেছে। একইসাথে মামলার সুযোগে যেভাবে কর্মসূচীতে থেকে অঘোষিত অবসরে গিয়েছেন নেতারা তা দলের জন্য অশনি সংকেত হিসেবেই চিহ্নিত করছেন তৃণমূলের কর্মীরা।

 

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মনিরুল ইসলাম সজল বলেন, দলের কোন কার্যক্রম বর্তমানে থেমে নেই। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আদালত কোন একটি দল বা সংগঠনকে নিষেধাজ্ঞা দিলেই তারা নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে এমনটা ভাবার কোন কারন নেই। আমাদের দল তার নিজস্ব গতিতে চলছে। আর মহানগর বিএনপি মূলত সংসদীয় আসনের ভিত্তিতে তার সীমানা নির্ধারিত হয়েছে। যেই ব্যাক্তি মামলা করেছে সে নিজেও বর্তমানে কৃষক দলের নেতৃত্বে রয়েছে। আর এই বিষয়টি দলের পক্ষ থেকে ক্লিয়ার না করার কারন হচ্ছে আদালতের বিষয়ে মন্তব্য করতে চায়নি কেউ। যেহেতু আমরা রাজনৈতিক ভাবে সরকারের প্রতিপক্ষ তাই কৌশল করেই আমাদের চলতে হচ্ছে।