শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১   ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

ষড়যন্ত্রের পরও জিতে যান মেয়র আইভী

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৩:২৮ পিএম, ১ মে ২০২১ শনিবার

# ২০১৬ সালে দক্ষিণ এশিয়ার প্রভাবশালী ২০ মেয়রের তালিকায় সপ্তম হিসেবে তাঁর নাম আসে।


যুগের চিন্তা রিপোর্ট : দক্ষিণ কোরিয়ার সাময়িকী ‘দ্য এশিয়ান’ রিপোর্ট কেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে দক্ষিণএশিয়ার প্রভাবশালী ২০ নারী মেয়রের তালিকায় রেখেছিলে সেটি আর নতুন করে কিছু বলার নেই। সময় যত গড়িয়েছে প্রজ্ঞাময় রাজনীতির পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন মেয়র আইভী। নতুন নতুন যড়যন্ত্র মোকাবেলা করে উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রেখে ক্রমেই তিনি নারায়ণগঞ্জে স্বচ্ছ রাজনীতির এক জীবন্ত কিংবদন্তি হয়ে উঠেছেন। যাত্রাটা মোটেও সহজ ছিলোনা। পেশায় ডাক্তার এমন একজন নারী রাজনীতিতে এতো প্রভাবশালী হয়ে উঠবেন আর মানুষের মনের এতোটা গভীরে পৌঁছাতে সক্ষম হবেন তা কেউ ভাবতে পারেননি। 

 

নির্বাচন আসে তো এক ষড়যন্ত্র, বড় কোন মাইলফলকের সামনে তখন আরেক ষড়যন্ত্র, উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা সব কিছু মাড়িয়ে তিনি এগিয়ে চলেছেন স্বমহিমায়। তবে আজকের এই অবস্থানে পৌঁছানোর টার্নি পয়েন্ট ছিল ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবরের নির্বাচন। সেবার নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের বর্তমান সাংসদ শামীম ওসমান ছিলেন তার নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু তাকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন মেয়েদের পেছনে পরে থাকার দিন শেষ।একই সাথে নারায়ণগঞ্জে পেশীশক্তির রাজনীতিরও মৃত্যু হয়। শুরু হয় নতুন ধারায় পথচলা। শতরক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে মেয়র আইভী এগিয়ে যান লাখো মানুষের ভালোবাসা নিয়ে।  

 

এতো উন্নয়ন, এতো জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও তাকে সবসময় চলতে হয়েছে কঠিন পথ মাড়িয়ে। নগরবাসীকে সেবা প্রদানের উদ্দেশ্য ফুটপাতে হকার সমস্যার সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা নেন তিনি। কিন্তু  সেখানেও বাধা আসে।এমনকি ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি হকার ইস্যুতে তার উপর হামলা চালানো হয়। তাতে তিনিসহ অর্ধশত ব্যক্তি আহত হন। তবে আজো সেই হামলার পেছনের নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ানোদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা যায়নি। তবে এঘটনার পর বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাতে হকার বসার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করে প্রশাসন।  

 

 নিজ দলের রাজনীতিতে নারায়ণগঞ্জে অন্যতম নিয়ামক মেয়র আইভী। ২০১৬ সালে ২২ ডিসেম্বর নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার সাড়ে তিনমাস আগে তাকে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবে নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ওই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়। নিজ নেতৃত্ব গুনে জেলা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ সদস্য মেয়র আইভীর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে কাজ করেন। যদিও ওই কমিটির উর্ধ্বতন পদে থাকা কয়েক নেতা বলয় তৈরি করে দ্বিধাবিভক্ত করেছিলেন জেলা আওয়ামী লীগকে। কিন্তু শেষ অবধি সেখানেও আইভীর নেতৃত্বগুন সমান বিকশিত। এমনকি জেলার বিভিন্ন থানা আওয়ামী লীগের দেয়া কমিটিতেও রয়েছে মেয়র আইভীর বিশেষ প্রভাব।

 


সিটি করপোরেশনে দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর এবছর শেষে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। আর সেটিকে ঘিরেই বছরের শুরু থেকে কয়েকটি পক্ষ আইভীকে ঘায়েল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। বর্তমানে বির্তকিত অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতের ইসলাম নারায়ণগঞ্জের নেতৃবৃন্দের ঘাড়ে ভর করে ষড়যন্ত্রকারীর মেয়র আইভীর জনপ্রিয়তায় ধ্বস নামানোর চেষ্টা চলে। কিন্তু মাস দুয়েক না যেতেই হেফাজতের ইসলাম সহিংসতা এবং উগ্র চরিত্রের কারণে দেশব্যাপী বিতর্কিত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। 

 

নারায়ণগঞ্জে তা-ব চালানোর অভিযোগে সিদ্ধিরগঞ্জ ও  সোনারগাঁয়ে সংগঠনটির অনেক নেতা গ্রেফতারও হয়েছেন। মেয়র আইভী সবসময়ই দাবি করেছেন, অসাম্প্রদায়িকতার অসাধারণ দৃষ্টান্ত হলো নারায়ণগঞ্জ। তিনি দাবি করেন, নারায়ণগঞ্জের বেশিরভাগ মানুষই শান্তিপ্রিয়। কিছু ব্যক্তি নানা ইস্যু তুলে নারায়ণগঞ্জকে উত্তপ্ত করার চেষ্টা করেন। আর সেসবের প্রতিবাদ করেন বলেই তার বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র।

 

 বছরের শুরু থেকে যেসব ষড়যন্ত্রগুলো মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে হয়েছে সেটি নতুন নয় বলে মত বিশ্লেষকদের। নির্বাচনে আগে সামনেও এসব ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকবে বলে মনে করেন তারা। তবে নারায়ণগঞ্জের গণমানুষের ভালোবাসা এবং নিজের নীতি-আদর্শের কারণে সবসময়ই এসব মোকাবেলা করে শেষ পর্যন্ত মেয়র আইভীই বিজয়ের হাসি হাসেন। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর একান্ত নির্দেশনায় মেয়র আইভী বারবারই প্রমাণ করেন তিনি কেন সেরা। এবারও তার ব্যতিক্রম হবেনা বলে মত বিশ্লেষকদের।