শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১   ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

না.গঞ্জে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৬৪৮৩ ফিটনেসবিহীন গাড়ি

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৫:০৯ পিএম, ১ মে ২০২১ শনিবার

আইনের কঠোরতা না থাকায় নারায়ণগঞ্জের সড়ক-মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ফিটনেসবিহীন ৬ হাজার ৪শ’ ৮৩টি যানবাহন। এসব যানবাহনের কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, দীর্ঘ হচ্ছে হতাহতের তালিকা। ফিটনেসবিহীনের সঙ্গে অবাধে চলাচল করছে অবৈধ যানবাহনও। সড়কে ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও কালেভদ্রে অভিযান চালাতে দেখা যায়। বিআরটিএ-কেও এই বিষয়ে কঠোরতা অবলম্বন করতে দেখা যাচ্ছে না।  


অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালীদের ‘তদবিরের’ কারণে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের দৌরাত্ম থামানো যাচ্ছে না।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলায় ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা ৬ হাজার ৪৮৩টি। এর মধ্যে ফিটনেসবিহীন সিএনজি’র সংখ্যা ৪ হাজার ১৮১টি। এছাড়া ফিটনেসবিহীন বাস, মিনিবাস, লেগুনা ও ট্যাক্সির সংখ্যা ২ হাজার ৩০২টি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের সহকারী পরিচালক সৈয়দ আইনুল হুদা চৌধুরী দৈনিক যুগের চিন্তাকে এই তথ্য জানিয়েছেন


এদিকে, ফিটনেস বিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে হাইকোর্টের বিচার বিভাগ একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করলেও সুফল মিলছে না। বরাবরের মতই ঝুঁকি নিয়ে সড়ক-মহাসড়কে চলছে ফিটনেস বিহীন গাড়িগুলো। এক্ষেত্রে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ ফিটনেস বিহীন গাড়ির তালিকা করলেও অভিযান চালাতে দেখা যাচ্ছে না।


এই বিষয়ে বিআরটিএ নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের সহকারী পরিচালক সৈয়দ আইনুল হুদা চৌধুরী বলেন, ‘ফিটনেসবিহীন গাড়ি প্রতিরোধ করার জন্য সড়কে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছে। আমাদের লোকবল সংকট রয়েছে। তাছাড়া, দাপ্তরিক বা নিজস্ব কোন ম্যাজিস্ট্রেট নেই। ফলে চাইলেই অভিযান চালানো যাচ্ছে না। জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হলে সেখান থেকে ম্যাজিস্ট্রেট প্রদানের মাধ্যমে সহায়তা করা হয়। এরপর আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি।’


সূত্র জানায়, মোটরযান অধ্যাদেশ-১৯৮৪ অনুসারে মোটরসাইকেল ছাড়া বাস-মিনিবাস বা প্রাইভেটকারের মতো গাড়িগুলো বছরে একবার ফিটনেস পরীক্ষা করাতে হয় বিআরটিএ কার্যালয়ে। গাড়ির নির্মাণকালীন নকশা অক্ষত থাকা, ব্রেক-গিয়ার ঠিক থাকা, প্রয়োজনীয় বাতি থাকা, কালো ধোঁয়া বের না হওয়া ও রং ঠিক থাকা গাড়িকে চলাচলের উপযোগী বলা হয়। ফিটনেস পেতে অন্তত ৩৬ ধরনের কারিগরি ও বাহ্যিক বিষয় পরীক্ষা করতে হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে এই ফিটনেস পরীক্ষা করা হলেও বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শকরা খালি চোখেই এসব পরীক্ষা করছেন!


আবার মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় মোটরযান পরিদর্শকের অনুপস্থিতিতেই গাড়ি দেখে ফিটনেস যাচাই করা হয়। মাঝে মধ্যে ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি ধরলে প্রভাবশালীদের তদবিরে ছেড়ে দিতে হয়। আবার আর্থিক সুবিধা নিয়েও ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ নেহাত কম নয়।


পরিবহন মালিক ও চালকরা জানান, ‘বিআরটিএ অফিসে গিয়ে লাইনে গাড়ি দাঁড় করালে এক দিনেই ফিটনেস সনদ পাওয়া যায়। এজন্য গাড়িপ্রতি ৩ থেকে ১০ হাজার টাকা খসাতে হয়। টাকা না দিলে ভোগান্তির শেষ নেই। এজন্য সনদ নেওয়ার পরিবর্তে মালিক ও চালকরা পুলিশ এবং বিআরটিএ-কে ম্যানেজ করেন।’


জানা গেছে, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে অভিযান জোরদার করে পুলিশ ও বিআরটিএ। তখন সাময়ীক সময়ের জন্য অবস্থার পরিবর্তন হলেও কিছুদিন যেতেই আবারও সড়কে দাপিয়ে বেড়ায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি।


অভিযোগ পাওয়া গেছে, সড়কে চলাচলকারী বেশিরভাগ যানবাহনের মালিক প্রভাবশালী। এসব প্রভাবশালীরা ফিটনেসের মেয়াদ শেষ হলেও নবায়ন করেন না। দফায় দফায় মালিকপক্ষের সঙ্গে পুলিশ ও বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের বৈঠক হয়। বৈঠকে ফিটনেসবিহীন গাড়ি না চালানোর আশ্বাস দেওয়া হলেও পরে মানেন না মালিক-চালকরা। উল্টো অভিযান চালালে প্রভাবশালীরা তদবির করে গাড়ি ছাড়িয়ে নেন।


নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. সালেহ উদ্দিন আহাম্মেদ দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেছিলেন, ‘সরকার ফিটনেস বিহীন গাড়ি নবায়নের সুযোগ দিয়েছে। তারপরও বেশি ঝুকিপূর্ন গাড়িগুলো আমরা রেকার করি এবং অন্যান্য মামলা দেই।’


তিনি বলেন, ‘একসময় লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশন দেয়ার কাজটা ট্রাফিক পুলিশই করতো। এখন আলাদা ডিপার্টমেন্ট করা হয়েছে। বিআরটিএ প্রতিমাসে সিডিউল অনুযায়ী মোবাইল কোর্ট করার কথা। মোবাইল কোর্ট করে জরিমানা করতে পারে। ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে তারা আলাদা ভাবে এটা করে। আর আমাদের সহায়তা যখন চায়, আমরা তাদের সহায়তা করি। তবে, সিডিউল অনুযায়ী প্রতিমাসে তারা করছে কিনা, তা বলতে পারছি না। তবে, আমাদের সহায়তা যখন চায়, আমরা তখন পুলিশ দিয়ে সহায়তা করি।’  


তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালে বিআরটিএ ফিটনেসবিহীন গাড়ির তালিকা দিয়েছিলো। ২০১৮ সালের পর নতুন করে কঠোর আইন হলো, কিন্তু নতুন আইনটা সংশোধন করার জন্য উচ্চ পর্যায়ে কাজ চলছে। কারণ, মটর সাইকেল আরোহি হেলমেট ব্যবহার না করলে নতুন আইনে জরিমানা ৩ হাজার। আগে ছিলো ৫শ টাকা। নতুন আইনে একই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার একই আইন অমান্য করলে তার জরিমানার অংক দ্বিগুণ এবং তৃতীয়বার করলে হবে তিনগুণ! ফিটনেসের হিসেবে প্রথম বারের জরিমানা প্রায় ১৮-২০ হাজার। পূনরায় করলে এই জরিমানা একগুণ করে বৃদ্ধি পাবে। তাই এই আইন নিয়ে পরিবহন সেক্টরের সকলে আপত্তি প্রকাশ করছেন যে, বাস্তবিক অবস্থার সাথে নতুন আইন অনেক বেশি কড়া।

 

 তাই সরকার সবাইকে সুযোগ দিয়েছে নবায়ন করার জন্য। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেধে দেয়া হয়েছিলো। পরবর্তীতে আরো কিছু সময় বৃদ্ধি করেছে। আর সরকার যেহেতু নবায়নের সুযোগ দিচ্ছে, সেহেতু আমরা এখনো হার্ডলাইনে যাচ্ছি না। বিআরটিএ থেকেই নবায়নের সুযোগ দেয়ার বিষয়ে চিঠি পেয়েছি। পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা হার্ডলাইনে যাবো।’