শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১   ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

মামুনুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা নিয়ে যা বললেন বিশিষ্টজনেরা

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৫:১৩ পিএম, ১ মে ২০২১ শনিবার

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ রয়েল রিসোর্টে হেফাজত নেতা মামুনুল হক নারী সহ অবরুদ্ধ হবার পর সকলের প্রশ্ন ছিলো কে এই নারী। জনতার জেরার মুখে স্বীকার করেন এই নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। যদিও পরবর্তী সময়ে ফোনালাপ ফাঁস এবং কথিত এই স্ত্রীর ডায়েরী থেকে প্রাপ্ত কথালিপিতে বিয়ের বিষয়টি আরও ধোঁয়াশা হয়ে উঠে। তার জবাবে মামুনুল হক তার নিজ ফেইসবুক ওয়ালে লিখেন মানবিক বিয়ের গল্প। কিন্তু সেই মানবিক স্ত্রী কেন অমানবিকের মত তার বিরুদ্ধেই ধর্ষণ মামলা দায়ের করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্ব মহলে।


মামুনুল হক দাবী করেছিলেন, তার সাংগঠনিক বন্ধু হাফেজ শহীদুলের সাথে ঝর্ণার ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবার পর ঝর্ণা তার সন্তানদের নিয়ে অসহায় হয়ে পরে। সেই দুঃসময়ে তার পাশে দাঁড়াবার মত কেউ ছিলো না। আমি ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে তার অর্থনৈতিক দায়িত্ব গ্রহন করি। পরে শরীয়তের আলোকে বিধান অনুযায়ী বিবাহ করে নেই। দু বছর যাবত এভাবেই মানবিক ও ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে আমি তার অভিভাবকত্ব করছি। আমি অসহায় নারীর দায়িত্ব গ্রহন করে পূন্যের কাজ করেছি বলে বিশ্বাস করি। আমি আল্লাহর নামে হাজারবার শপথ করেও বলতে পারবো।


তবে তার এমন মানবিক বিয়ের পরেও কেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী অমানবিক ভাবে ধর্ষণ মামলা দায়ের করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অনেকের কাছে। বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) সকাল ১০টায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষন করার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। মামলায় তাকে ২ বছর ধরে বিয়ের কথা বলে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে আসছে মামুনুল হক এমন অভিযোগ তুলেন তার কথিত স্ত্রী।


অভিযোগে ঝর্ণা উল্ল্যেখ করেন, আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে মামুনুল হক আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। আমাকে গত দুই বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে ঢাকা ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরির নাম করে নিয়ে গিয়ে তার পরিচিত বিভিন্ন হোটেল ও রিসোর্টে রাত্রীযাপন ও বিয়ের আশ্বাস দিয়ে তার যৌন লালসা চরিতার্থ করে। আমি বিয়ের কথা বললে সে আমাকে করবো-করছি বলে নানা অজুহাতে কালক্ষেপণ করতে থাকে। গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানাধীন রয়েল রিসোর্টে জান্নাত আরা ঝর্ণাসহ মামুনুল হককে আটক করে স্থানীয় লোকজন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হলে ঝর্ণাকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে দাবি করেন মামুনুল। তার দাবি, স্ত্রীর অধিকার পাবে না, সম্পত্তির অংশীদার হবে না এবং সন্তান ধারণ করবে না- এই তিন শর্তে তিনি ঝর্ণাকে ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে করেছেন তিনি।
এজাহারে তিনি আরও বলেন, এই ঘটনায় দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠলে মামুনুল হক আমাকে আমার নর্থ সার্কুলার রোডের ভাড়া বাসায় যেতে না দিয়ে তার পরিচিত একজনের বাসায় অবৈধভাবে জোরপূর্বক আটকে রাখে। এসময় আমি আমার আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। এক পর্যায়ে সুকৌশলে আমার বড় ছেলে আব্দুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমার দুরবস্থার কথা জানাই এবং আমাকে এই বন্দিদশা থেকে উদ্ধারের জন্য আইনের আশ্রয় নিতে বলি। পরবর্তীতে ডিবি পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে আমাকে আমার বাবার জিম্মায় দেয়।


মামুনুল হকের এমন কান্ড কিভাবে মূল্যায়ন করছেন নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ তা নিয়ে যুগের চিন্তার সাথে কথা হয় বিভিন্ন দলের নেতাদের সাথে। এই বিষয়টি কেউ বলেছেন রাজনৈতিক, কেউ বলেছেন ইস্যুর খেলা আবার কেউ বলেছেন ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য।


নারায়ণগঞ্জের সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক রফিউর রাব্বী বলেন, পুরো বিষয়টি আমার কাছে রাজনৈতিক বিষয় মনে হয়েছে। আমার এর বেশী কিছু বলার নেই। পুরো বিষয়টি রাজনৈতিক।


নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, মামুনুল হক যেই বিয়ের কথা বলেছেন সেসব প্রমান করতে পারেননি। এটি অবশ্যই রাজনৈতিক একজন ব্যক্তির জন্য লজ্জার। এখন তার কথিত স্ত্রী মামলা করেছেন। এগুলো আদালতেই প্রমান হবে। আর এসব বিষয় হচ্ছে মামুনুল হকের পারিবারিক ব্যক্তিগত ইস্যু। এগুলো নিয়ে কথা বলতেও বিব্রত লাগে।


নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, মামুনুল হকের যেই বিষয়টি আমাদের সামনে এসেছে এটি তদন্তেই প্রমাণিত হবে কে দোষি। তিনি নিজেই তার ফোনে বলেছেন এই নারী অন্যের স্ত্রী। হোটেলেও লিখেছেন প্রথম স্ত্রীর নাম। ফলে বিষয়টি সন্দেহজনক। তবে এই ঘটনা কোন ইস্যুকে ধামাচাপা দিতে সামনে এসেছে তা আমার মনে হয়না। সে ধর্ম ব্যবসায়ী ও ভন্ড। তাদের মত আলেমের কাছে এই ধরণের বিষয় আমরা প্রত্যাশা করিনা।


বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য আনিসুর রহমান দিপু বলেন, এই মামুনুল হক লোকটি সম্পুর্ন ভন্ড এবং ধর্ম ব্যবসায়ী। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কখনই ধর্মভিত্তিক রাজনীতি সমর্থন করেনা। ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতির যে কুৎসিত রূপ সেটি মানুষ এখন দেখতে পেরেছে। তাই আমি মনে করি এদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা উচিৎ।
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাধারন সম্পাদক শাহীন মাহমুদ বলেন, আমার কাছে কখনই মনে হয়নি ঝর্ণা মামুনুল হকের আসল স্ত্রী। কিন্তু আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে আমরা এমন সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করি যেগুলো মূল সমস্যাকে ঢেকে ফেলে। মানুষ এখন সব বুঝে। পুরো মাস ধরেই মিডিয়ার মূল উপজীব্য মামুনুল হক।

 

 দেশে মামুনুল হক এমন কেউ না যে তাকে নিয়ে আলোচনায় থাকতে হবে। মানুষ লকডাউনে কষ্টে আছে এটা জরুরী বিষয়। এসব দিক না দেখে পুরো সময় জুড়ে একজন নেতার কাহিনী বলার কারনেই সাধারন মানুষ বলতে শুরু করেছে এই লকডাউন হেফাজতকে শায়েস্তা করার জন্য দেয়া হয়েছে। মানুষ লকডাউন উপেক্ষা করছে এই কারনে। কয়েকদিন আগেই বসুন্ধরার এমডির কান্ড সব স্থানে ছড়িয়ে গেছে। আমার মনে হয় বাংলাদেশে যেই কালচার চলছে একটি ইস্যুকে অন্য ইস্যু তৈরী করে ঢেকে দেয়া, এই মামলাটিও তারই অংশ বলে মনে হয়।