মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১০ ১৪৩১   ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জামদানি রপ্তানিতে ১০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা বঞ্চিত

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৫:১৮ পিএম, ১ মে ২০২১ শনিবার

 বিয়ে কিংবা ঈদে বাঙালি রমণীর জামদানি শাড়ি ছাড়া বেমানান। বিভিন্ন পার্বণে জামদানির চাহিদা বেশি থাকায় ওই সময় জামদানিশিল্পীরা ব্যস্ত থাকেন। আর ঈদ এগিয়ে এলে তো কথাই নেই। ঈদের আগে নাওয়া-খাওয়ার ফুসরতটুকুও পান না তারা। কিন্তু এবারের চিত্র উল্টো। ঈদুল ফিতর ঘনিয়ে এলেও এবার জামদানিশিল্পীরা বেকার ও অলস সময় কাটাচ্ছেন।

 

 বিগত বছরগুলোয় ভারত, সৌদি আরব, দুবাই, ইন্দোনেশিয়ায় জামদানি শাড়ি রপ্তানি করা গেলেও এবার লকডাউনে তা সম্ভব হয়নি। ফলে ১০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হয়েছে দেশ। বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে বাংলাদেশকে দাঁড় করিয়ে দিতে যে শিল্পীরা শ্রম-ঘাম ঝরাচ্ছেন তাদের জন্য নেই সরকারি প্রণোদনার ব্যবস্থা। ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত জামদানি পল্লীর ১০ হাজার শিল্পীর মাথায় হাত।


গতকাল সকালে নোয়াপাড়া জামদানি পল্লী ঘুরে দেখা গেছে আগের মতো খুটখাট শব্দ নেই। নেই কোলাহল। লকডাউনের কারণে ২১ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে জামদানি কারখানাগুলো। জামদানি বিক্রির হাটও বন্ধ। অথচ প্রতি বছর ঈদ এগিয়ে এলে নাওয়া-খাওয়া ভুলে কারিগররা কে কত শাড়ি তুলতে পারেন চলতো সে প্রতিযোগিতা। এবার চিত্র এর উল্টো। দেখে মনে হবে যেন এক ভুতুড়ে নগরী। তাঁতিরা শুয়ে-বসে অলস সময় পার করছেন। তবে কোনো তাঁতি স্বল্পপরিসরে জামদানির কাজ করলেও বিক্রি করতে পারছেন না। তাঁত বুননের কাজ না থাকায় কয়েকজন তাঁতিকে কাঁচামালসহ রমজানের বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করতে দেখা যায়।

 

 এ ছাড়া কিছু তাঁতি কম টাকায় মহাজনের অর্ডারের কাপড় বুনছেন। জামদানি তাঁতি মহসিন বলেন, ‘কিছু কিছু তাঁতি মহাজনদের কাছ থেকে অনেক কম টাকায় শাড়ির অর্ডার নিয়ে বুনছেন, যাতে ডালভাত খেয়ে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকতে পারেন।’

 

জামদানিশিল্পীরা বলেন, ঈদে দেশের বাজার ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, মিসর, সৌদি আরব, দুবাই, ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশে জামদানি শাড়ি রপ্তানি হতো। লকডাউনে এবার রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। ফলে ১০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত দেশ।


তাঁতিরা বলেন, করোনার লকডাউনের কারণে তাঁতিদের তেমন ব্যস্ততা নেই। কর্মহীন দিন কাটছে তাদের। তবে কয়েকজন শাড়ি তৈরি করলেও তা বিক্রি করতে পারছেন না। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।


জামদানিশিল্পী নুরুল হক মিয়া বলেন, ‘করোনা আমাগো শেষ কইরা দিছে। এহন লুডু খেইলা সময় কাটাই। সংসার চালানোর মতো টাকা নাই। সরকার সবাইরে প্রণোদনা দিতাছে। জামদানিশিল্পীরা বাংলাদেশরে বিশ্বদরবারে তুইলা ধরে। অথচ এই শিল্পীগো খবর নেয় না কেউ।’


জামদানি শিল্পী ঝর্ণা বেগম, সাবেকুন, বিউটি আক্তার ও আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ঘাম ঝরাইয়া একটা শাড়ি বানাই। এ শাড়ি সারা বিশ্বে চলে। কিন্তু আমাগো দাম নাই।’
মহাজন এরশাদ, ইসমাইল, আনোয়ার ও মজিবুর বলেন, ‘আগে ঈদ এলে ভারত, সৌদি, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে জামদানির চাহিদা থাকত। লকডাউনের কারণে সব শেষ।’
জামদানি পল্লী বিসিকের সভাপতি জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘লকডাউনে শতকরা ৯০ ভাগ তাঁতি কর্মহীন হয়ে কষ্টে দিন পার করছেন। তাদের প্রণোদনার দাবি জানাচ্ছি।’