রোববার   ১৯ মে ২০২৪   জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১   ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

রূপগঞ্জে হারিয়ে গেছে গ্রামীণ ঐতিহ্য কুয়া

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৯:৪১ পিএম, ২২ মে ২০২১ শনিবার

পৃথিবীর প্রতিটি জাতি তাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যায়। যার মূল উদ্দেশ্য থাকে প্রাচীন যুগের যেসব লোকসংস্কৃতি ছিল বা হারিয়ে গেছে সেটাকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা। হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির যেসব উপকরণ আমাদের জীবনে একসময় অপরিহার্য ছিল আজ তার কিছুটা বিলুপ্ত হয়ে গেছে, কিছুটা বিলুপ্তির পথে। বিলুপ্ত হওয়া প্রাচীন ঐতিহ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম কুয়া বা ইন্দিরা যা এক সময় পানের জন্য সুপেয় পানি হিসেবে একমাত্র উৎস ছিল। পানির অপর নাম জীবন।

 

পানি ছাড়া জীবনের অস্তিত্ব কখনোই কল্পনা করা যায় না। পানি নেই বলে অন্য কোন অন্য কোন গ্রহে জীবনের অস্তিত্ব এখানো খুঁজে পাওয়া যায়নি। শুধু জীবন কেন মানব সভ্যতাও গড়ে উঠেছে এই পানিকে ঘিরেই। নদী মাতৃক বাংলাদেশে এখনও সুপেয় পানির অভাব রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই দেশের উওর ও দক্ষিণাঞ্চলে পান করার জন্য সুপেয় পানির অভাব ছিলো ব্যাপক। খুব  বেশিদিন আগের কথা নয় নব্বই দশক পর্যন্ত এই দুই অঞ্চলের মানুষ তাদের সুপেয় পানির চাহিদা পূরণ  করত গভীর কূট বা কুয়া থেকে। তাই  তৃষ্ণা নিবারণের জন্য বিশেষ প্রয়োজন ছিলো এই কুয়ার স্বচ্ছ পানি। আঞ্চলিক ভাষায় এই কুয়াকে বলা হয় ইন্দারা। এই সুপেয় পানি পানের অভাব বোধ থেকে এই অঞ্চলের মানুষ খনন করতো গভীর কুয়া।  

 

খাল-বিল,নদী-নালা, পুকুর থেকে সংগ্রহ করতো ঘর-গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় পানি। কিন্তু গ্রাম বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কুয়াগুলো কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে, যা এখন শুধুই স্মৃতি। এখন আর বাড়ি বাড়ি কুয়া দেখতে পাওয়া যায় না। কিছুদিন আগে যে বাড়িতে কুয়া ছিল  সেখানে টিউবওয়েল রয়েছে। এখন প্রতিটি বাড়িতে কুয়ার বদলে টিউবওয়েল পাওয়া যায়। আবার অনেক বাড়িতে বৈদ্যুতিক মেশিন দিয়ে পানি তুলা হয়। সময়ের আবর্তনে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, নব্বই দশক পরবর্তী জেনারেশনের বদৌলতে অর্থনীতির চাকা গতিশীল হওয়ার কারনে স্বস্তি ফিরেছে হয়তবা সুখও বেড়েছে। সময়ের আবর্তনে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, নব্বই দশক পরবর্তী জেনারেশন বদৌলতে অর্থনীতির চাকা গতিশীল হওয়ার কারণে স্বস্তি ফিরিছে হয়তবা সুখও বেড়েছে।

 

বিশেষ করে প্রবাসী শ্রমিকের একটি অংশ আর  দেশব্যাপী শিল্পায়নের কারণে সাধারণ মানুষের জীবনমানের যে পরির্বতনের ছোঁয়া লেগেছে তাতে  গ্রাম-বাংলার বুক থেকে হারিয়ে  গেছে প্রাচীন ঐতিহ্য একমাত্র সুপেয় পানির উৎস কুয়া। একসময় গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িতেই খড়ের ঘর থাকত। গরমের দিনে এইসব খড়ের ঘর অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা ছিল। শীতকালে এই ঘরগুলো টিনের ঘরের চাইতে কম ঠান্ডা ছিল। বর্তমানে বেশীর ভাগ বাড়িতে খড়ের বদলে জায়গা দখল করেছে চকচকে টিনের ঘর অথবা ইট সিমেন্টের বাড়ি।কিন্তু এখন হারিয়ে গেছে এসব প্রাচীন ঐতিহ্য। আগে বিকেল বেলা গ্রাম বাংলার প্রতিটি মা-বোনেরা সন্ধ্যা বেলায় কলশী নিয়ে কুয়া থেকে পানি আনত। এখন আর সে চিত্র  দেখা যায় না। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বর্তমানে মানুষ অনেক দূর এগিয়েছে। শহর অঞ্চলে এখন টিউবওয়েল পাওয়া যায় না। সব জায়গাতেই বৈদ্যুতিক মেশিন দিয়ে পানি তোলা হয়। গ্রামে এখনও পুরনো কিছু জমিদার বাড়িতে কুয়া দেখতে পাওয়া গেলেও  সেগুলো পরিত্যক্ত।

 

এছাড়া কিছু কিছু বাড়িতে কুয়া থাকলেও সেখানে বসানো হয়েছে টিউবওয়েল। এছাড়া কালের সাক্ষী এই কুয়া এখন তেমন দেখতে পাওয়া যায় না। এটা এখন ইতিহাস শুধু স্মৃতি এই তো বেশি দিন আগের কথা নয় নব্বই দশকের কথা। সবে মাত্র বাংলাদেশে বোতলজাত পানি এসেছে। সচিবালয়ে যখন বোতলজাত পানি বিক্রি শুরু হলো অনেক বড় সরকারি কর্মকর্তাও  হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন পানিও কিনে খেতে হবে বলে। অথচ কালের পরিক্রমায় দেশে এখন প্রতিটি গ্রামের ছোট ছোট  দোকানগুলোতেও বোতলজাত পানি বিক্রি হচ্ছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় জীবন মান উন্নত হচ্ছে কিন্তু হারিয়ে গেছে প্রকৃতির সান্নিধ্য। পানি বিশুদ্ধ করার জন্য ব্যবহার করছি কত রকমের নামি দামি কোম্পানির ফিল্টার কিংবা বিশুদ্ধ করছি ফুটিয়ে, পানিতে ক্লোরিন ট্যাবলেট বা বিøচিং, পটাশ বা ফিটকিরি ও  আয়োডিন মিশিয়ে।

 

এগুলো কতটা কার্যকরী পদ্ধতি বিশুদ্ধ পানির জন্য। অথচ নব্বই দশক পর্যন্ত কুয়ার পানি ব্যবহার ছিল সবর্ত্রই যা ছিল সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ। আজ হাসপাতালগুলোতে রোগীর যে লম্বা লাইন যার বড় অংশই পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত। পৃথিবীর অন্যতম কূপ বা কুয়া জমজম কূপ। সৌদি আরবের মক্কার মসজিদুল হারামের অভ্যন্তরে অবস্থিত একটি প্রসিদ্ধ কূপ। পবিত্র কাবা ও এই কূপের মধ্যে দূরত্ব হলো মাত্র ৩৮ গজের। এই কূপের কাছে একটি শক্তিশালী পাম্পিং মেশিন বসানো হয়েছে। সে মেশিনের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করে একটি প্রশস্ত জায়গায় নিক্ষেপ করা হয়। সেখান থেকে লাখ লাখ মানুষ তৃপ্তি ভরে পানি পান করে এবং পাত্রে ভরে নিয়ে যায়।

 

পৃথিবীব্যাপী প্রসিদ্ধ এ কূপ আজও মানুষের কাছে তৃপ্তিময়, সুপেয় পানির উৎস। আজ থেকে প্রায় ৪ হাজার বছর ধরে চলে আসছে এই কূপ। বলা হয় আল্লাহ-তায়ালার সরাসরি প্রদত্ত নিয়ামত এই কূপ। শুধু এই কূপ নয় বাংলাদেশসহ পৃথিবী সুপেয় পানির উৎস সকল কূপ বা কুয়াই ¯্রষ্ঠার অশেষ রহমত ছিল। যা এই আধুনিক পৃথিবীর ইতিহাসেবিলীন।