মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৭ ১৪৩১   ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:০১ পিএম, ২৮ মে ২০২১ শুক্রবার

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দখলে থাকে, নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল। হাসপাতালের স্টাফ ও রোগীদের অভিযোগ, দলে দলে ভাগ হয়ে হাসপাতালের ভেতরে ও ডাক্তারের চেম্বারের সামনে অবস্থান নিয়ে রোগীদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে টানা হেঁচড়া করেন এসব প্রতিনিধিরা। মোবাইলে ছবি তোলার মাধ্যমে খতিয়ে দেখেন, প্রেসক্রিপশনে ডাক্তার কোন কোম্পানির ওষুধ লিখেছেন।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অফিস চলাকালে হাসপাতালে যাওয়ার নিয়ম না থাকলেও সকাল ১০টার আগেই দলে দলে ভাগ হয়ে নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে গিয়ে অবস্থান নিয়েছেন ওষুধ কোম্পানির  প্রতিনিধিরা। এ সময় হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনেই চোখে পড়ে ওষুধ কোম্পানির কয়েকজন প্রতিনিধি একে অন্যের সাথে বলছেন। তাই অফিস চলাকালে হাসপাতালে কি করছেন? জানতে চাইলে দ্রুত সেখান থেকে সটকে যায় তারা। এর ঠিক কিছুক্ষণ পর নিজের অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আসেন রাজিয়া খাতুন নামে এক ভদ্রমহিলা।

 

এ সময় ডাক্তার দেখিয়ে বের হয়ে তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত পরশু আমি এখানে এসেছিলাম ডাক্তারের কাছে। সেদিন ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হতে না হতেই, জরুরী বিভাগের সামনে তিন থেকে চারজন লোক (ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি) আমাকে বলে আপনার প্রেসক্রিপশনটা দিন। তখন প্রেসক্রিপশন আমার হাতেই ছিলো, তাই সেটা তাদের সামনে আমি তুলে ধরি। এরপর তারা মোবাইল বের করে প্রেসক্রিপশনের ছবি তোলে ও সেটা নিয়ে টানা হেঁচড়া করতে থাকে। এ সময় তাদের আচরণও খুব খারাপ ছিলো। তাই আমি মনেকরি এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ্যের এখনই নজর দেয়া প্রয়োজন।

 

অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালটির একজন স্টাফ বলেন, ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের এমন দৌরাত্ম এই হাসপাতালে এখন প্রতিদিনের চিত্র। এরা সারাদিন ডাক্তাদের চেম্বারে ও জরুরী বিভাগের আশপাশে হাঁটাহাটি করে। রোগীরা ডাক্তার দেখিয়ে বের হলেই তাদের হাতে থাকা প্রেসক্রিপশন নিয়ে টানাটানি করে। তাই মাঝেমধ্যে হাসপাতালে আসা রোগীরা এতে অনেক বিরক্ত হয়। তিনি আরো বলেন, ওষুধ কোম্পানির সাথে সরকারি ডাক্তারদের ভালো সম্পর্ক। তারা রোগীদের নিদৃষ্ট কোম্পানির ওষুধ লিখে দেয়ার বিনিময়ে, সেই ওষুধ কোম্পানি থেকে নানান সুবিধে নিয়ে থাকে। তাই হাসপাতালে নিযুক্ত ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা ডাক্তারদের লিখে দেয়া প্রেসক্রিপশন চেক করে দেখে। কিন্তু হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দেখেনি দাবি করে নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালের (আর এম ও) আসাদুজ্জামান বলেন, আমি এখন পর্যন্ত হাসপাতালে এমন কিছুই দেখিনি। তবে কেউ যদি এর কোনো প্রামাণ  দিতে পারে, তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

এছাড়া নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের অপতৎপরতার পাশাপাশি হাসপাতাল সংলগ্ন বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং বেসরকারি ক্লিনিকের দালালদেরও বেশ প্রভাব রয়েছে বলে জানা গেছে। এরা হাসপাতাল থেকে রোগীদের বাগিয়ে নিতে, নিজের ফোন নাম্বার দিয়ে বলেন অমুক ক্লিনিকে গিয়ে পরীক্ষা করান। মূলত কর্তৃপক্ষ্যের পর্যাপ্ত নজরদারী না থাকর কারনেই সরকারি এই হাসপাতালটিতে এখন দিনভর ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি ও বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ বেসরকারি ক্লিনিকের দালালাদের অবাধ বিচরণ। তাই দিনদিন এই হাসপাতালের শৃঙ্খলা নষ্টের পাশাপাশি রোগীদেরও বিব্রতকর অবস্থায় সম্মুখীন হতে হচ্ছে প্রতীনিয়ত।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালের পাশে অবস্থিত ইউনাইটেড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, একতা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও নিউ হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ একাধিক বেসরকারি ক্লিনিকেরও নিয়োগপ্রাপ্ত দালাল রয়েছে এখানে। এরমধ্যে ইউনাইটেড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের শহিদুল, গিয়াসউদ্দিন ও বাপ্পি এবং একতা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপন ও অপুসহ অন্যান্য ক্লিনিক ও রোগ নিরাময় কেন্দ্রের অসংখ্য দালাল সক্রিয় এখানে। হাসপাতালটিতে এদের বিশাল সিন্ডিকেট থাকার পাশাপাশি স্থানীয় ক্যাডারদের সাথেও ভালো সখ্যতা আছে বলে জানা গেছে।

 

নারায়ণগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ আহম্মেদ এ বিষয়ে বলেন, নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা আসে এটা আমিও জানি। কিন্তু আমি সেখানে গেলে কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায়না। তবে দ্রুতই আমি এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো আর হাসপাতালে দালালদের কোনো তৎপরতা থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।