শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১   ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

না’গঞ্জ সদরে নির্বাচন নেই, ব্যর্থতা কার?

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:৫০ পিএম, ৪ জুন ২০২১ শুক্রবার

মামলা ও সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে আটকে আছে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা এবং ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় নির্বাচন নেই ১২ বছর আর ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হচ্ছে না প্রায় ২৯ বছর যাবৎ। ঠিক কবে নাগাদ হতে পারে গুরুত্বপূর্ন ওই দুই নির্বাচন, সেই বিষয়ে হলফ করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরাও।


 
এদিকে, স্থানীয় সাংসদ হিসেবে বিভিন্ন মেয়াদে প্রায় একযুগ অতিক্রম করলেও এখনো নির্বাচনের পথ সুগম করতে না পারার ব্যর্থতা বা দ্বায় সাংসদ শামীম ওসমানের উপরেও বর্তায় বলে মনে মন্তব্য করছেন সদর ও ফতুল্লাবাসী। সূত্র বলছে, সর্বশেষ ২০০৯ সালের জানুয়ারীতে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। এতে বিএনপির আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। যাঁর বিরুদ্ধে বিগত দিনে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সাথে আঁতাত করে কর্মকান্ড পরিচালনার অভিযোগ নেহাত কম নয়। যদিও সীমানা সংক্রান্ত মামলার অজুহাতে নির্বাচন না হওয়ায় উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান হিসেবে আজও অধিষ্ঠিত রয়েছে আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস।

 

এদিকে, ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ইসদাইর বাংলা ভবনে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন আয়োজিত এক সভায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেছিলেন, ‘সংসদ (একাদশ সংসদ নির্বাচন) শেষ করেই উপজেলা নিয়ে কাজ করবো। চেয়ারম্যানদের নিয়ে বসবো। সদর উপজেলা নির্বাচন হবে। সেখানে আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থী থাকবে। সেটা আমিই ঠিক করে দিব। কাজ করতে আসছি। যাকে যে জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করতে হয় সে জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করে যাব।’ সাংসদ শামীম ওসমানের এমন বক্তব্যের পর সদরের বহুল কাঙ্খিত নির্বাচন হওয়ার জোড়ালো সম্ভাবনা ফুটে উঠলেও পরবর্তীতে এর বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। ফলে, নির্বাচন না হওয়াটা শামীম ওসমানের ব্যর্থতা বলে মনে করছেন সচেতন মহল।  

 

জানা গেছে, সীমানা সংক্রান্ত মামলার কারণে এই মেয়াদেও নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাচন আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তথ্য মতে, সদর উপজেলার কিছু এলাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন গঠন হওয়ায় ওই সব এলাকা বাদ দিয়ে উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮ (২০০৯ সনের ৩০ জুন সংশোধিত) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার সদর উপজেলা পুর্নগঠন করে। ২০১৪ সালের ৪ মার্চ এ সংক্রান্ত একটি গেজেট প্রকাশ করা হয়। এদিকে কয়েকটি এলাকা বাদ দিয়ে উপজেলা গঠন হওয়ায় গত বছর ৬ এপ্রিল উচ্চ আদালতে একটি রিট করা হয়। যার পিটিশন নং- ৩০৮৯। এ রিট করেন ফতুল্লা চৌধুরী বাড়ির মৃত সুলতান বক্স চৌধুরীর ছেলে মো. আসাদউদ্দিন চৌধুরী, পশ্চিম মাসদাইরের মৃত মতিউর রহমানের ছেলে বজলুর রহমান ও কাশিপুর উত্তর গোয়ালবন্দের হেলালউদ্দিন মুন্সীর ছেলে মো. হামিম মুন্সী।

 

জানা গেছে, রিট কারীরা একদিকে যেমন উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের লোক হিসেবে পরিচিত, তেমনি দলীয় কাজে নিস্ক্রিয় হলেও বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ আবার সাংসদ শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ বা আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিতি কুড়িয়েছেন নানা কর্মকান্ডে। ফলে অনেকটা আড়াল থেকে হলেও নির্বাচন না হওয়ার পেছনে সংশ্লিষ্ট সাংসদের দূর্বলতা অনূভব করছেন বোদ্ধা মহল। অন্যদিকে, মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে দীর্ঘ প্রায় ২৯ বছরেও নির্বাচন হচ্ছে না ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদে। গুরুত্বপূর্ন এই ইউনিয়নটিও সাংসদ শামীম ওসমানের নির্বাচনি এলাকা। যেখানে তিন তিন বার সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

 

১৯৯৬ সন থেকে শুরু করে বিভিন্ন মেয়াদে প্রায় একযুগেরও বেশি সময় তিনি ওই এলাকার সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্বে আছেন। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যেও ফতুল্লার মতো একটি ইউনিয়ন পরিষদকে নির্বাচনের আওতায় আনতে পারেনি শামীম ওসমান। ফতুল্লা বাসীর মতে, এক্ষেত্রেও ব্যর্থ হয়েছেন শামীম ওসমান।   সূত্র বলছে, সর্বশেষ ১৯৯২ সালে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে না।

 

অভিযোগ রয়েছে, ১৯৯৬ সালে ফতুল্লা ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান নূর হোসেন ও ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল মালেক মিলে পর্দার আড়াল থেকে তাদের নিজস্ব লোক দিয়ে হাইকোর্টে ইউনিয়নের পক্ষে-বিপক্ষে দুইটি মামলা দায়ের করান। এতে ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত রাখতে হাইকোর্ট নির্দেশ দেন। দায়েরকৃত ওই দুই মামলার বাদী হলেন, ফতুল্লার কুতুবআইল এলাকার মৃত হাসান আলী মাতবরের ছেলে কদর আলী মাতবর এবং অপরজন একই এলাকার মৃত সোহরাব মাতবরের ছেলে হানিফ মাতবর। এদের মধ্যে কদর আলী মাতবর ফতুল্লা ইউনিয়নকে পৌরসভা করার দাবি জানিয়ে হাইকোর্টে রিট মামলা করেছিলেন আর হানিফ ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ বহাল রাখার দাবি জানিয়ে রিট মামলা করেছিলেন।

 

ফলে মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে এ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন এখনো অনিশ্চিত। ইউনিয়নটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফর রহমান স্বপন। এদিকে, নিয়মিত নির্বাচন না হওয়ায় এসব এলাকায় উন্নয়নের প্রতিযোগিতা নেই। ফলে উন্নয়নের ক্ষেত্রে ফতুল্লা ইউনিয়ন ও সদর উপজেলার বহু এলাকাই পিছিয়ে রয়েছে। জেলা পরিষদের আওতাধীন জায়গাগুলোতেও নজর কাড়ার মত উন্নয়ন দেখা যায়না। এই বিষয়ে গতকাল সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আজাদ বিশ্বাস ও ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফুর রহমান স্বপনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।