বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১   ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আ.লীগ না করে নৌকা প্রতীকের খায়েশ!

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:৪০ পিএম, ৫ জুন ২০২১ শনিবার

কখনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না কামরুল ইসলাম বাবু। তবে, তার খায়েশ আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়া! অথচ, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান নেতারাও চেনেন না এই কামরুল ইসলাম বাবুকে। সেই অপরিচিত মুখই সংবাদ সম্মেলন করে প্রত্যাশা করলেন সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন! তা নিয়ে নারায়ণগঞ্জের পোড় খাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের মাঝে চলছে আলোচনা-সমালোচনাও। অনেকে আবার এই ‘আদুরে বাবু’কে নিয়ে টিপ্পনিও কাটছেন। তিনি কী আদৌ নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা কিনা- তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।


 
এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘হঠাৎ করে কামরুল ইসলাম বাবু নামে এক ব্যক্তি সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাসা করে বসলেন। অথচ, আমার রাজনৈতিক জীবনে আমি ওই ব্যক্তিকে কখনো দেখিনি। তার বাড়ি কোথায়, এতো দিন কোথায় ছিলেন, কী করতেন বা করছেন তাও আমাদের জানা নেই। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সরাসরি জড়িত থাকা কোন ব্যক্তি যদি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইতো, তাহলে সেটা যৌক্তিক প্রত্যাশা হতে পারতো। কিন্তু যিনি কখনই আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না, তিনি কি করে আওয়ামী লীগের মনোয়ন প্রত্যাশা করেন!’


 
এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল হাই বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে কোন একটি মহল তাকে নির্বাচনী মাঠে নামিয়েছেন। একটি পক্ষ তাকে সামনে রেখে পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন। তবে, আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী কোন অযোগ্য ব্যক্তিকে বেছে নেবেন না। যিনি যোগ্য তিনিই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন। বাবু নামে ওই অপরিচিত ব্যক্তির আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়াটা হাস্যকরও বটে।’


 
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. খোকন সাহা দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘আমি জীবনেও ওই ছেলেকে দেখিনি। আমার ৪৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনের মধ্যে ২৮ বছর ধরে এই শহরের আওয়ামী লীগের সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করছি। অথচ, তাকে কখনো আওয়ামী লীগের ধারে কাছেও দেখিনি। তার বিষয়ে আমার কোন ধারণাও নেই।’


 
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমার রাজনীতির ৫০ বছরেও তাকে দেখিনি। তাকে চিনিও না। কথা নেই বার্তা নেই উড়ে এসে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইলো। আওয়ামী লীগ করা কোন নেতা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইতে পারে, কিন্তু ওই ব্যক্তি যেটা প্রত্যাশা করছে, তা যুক্তি সংগত না। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন যদি প্রত্যাসা করতেই হয়, তাহলে আগে তৃণমূল আওয়ামী লীগ থেকে রাজনীতি করে আসুক, রাজপথে পায়ের জুতো ক্ষয় করুক। বিরোধী দলের নির্যাতন পোহাক, তারপরে মনোনয়ন চাইলে সেটা আমাদের কাছে যুক্তি সংগত হতে পারে। এই অবস্থায় আমরা তাকে নিয়ে ভাবতে পারি না।’  


 
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান বলেন, ‘তাকে আমরা চিনিই না। কখনো দেখিনি। তাই তাকে নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন মনে করছি না।’  

জানা গেছে, নিজেকে এক অতি সাধারণ মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাসা করা কামরুল ইসলাম বাবু। গত ঈদুল ফিতরকে ঘিরে সিটি করপোরেশন এলাকাজুড়ে ব্যানার ফেস্টুন সাটিয়ে নিজেকে ‘এক অতি সাধারণ মানুষ’ হিসেবে উপস্থাপন করেন তিনি। নির্বাচনে আসার আভাসটা তখনই পাওয়া গেলেও গত ২ জুন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তা পরিস্কার করেন নগরবাসীর কাছে ‘অপরিচিত’ এই ব্যক্তি। শুধু কী তাই? কখনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না থাকা এই ব্যবসায়ী নিজেকে ‘অতি সাধারণ মানুষ’ হিসেবে উপস্থাপন করে আশাবাদব্যাক্ত করেছেন নৌকা প্রতীক পাওয়ার!

 

তাই কামরুল ইসলাম বাবুকে নিয়ে আওয়ামী লীগ অঙ্গন থেকে শুরু করে নগরীর সাধারণ বাসিন্দাদের মধ্যেও জেগেছে কৌতুহল, উঠেছে প্রশ্ন, হচ্ছে নানামুখি আলোচনাও। যেখানে পোড় খাওয়া রাজনৈতিক নেতারাও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাসা নিয়ে মুখ খুলছেন না, সেখানে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না থেকেও নৌকা প্রতীক পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করায় কারো কাছে তা হাস্যরসের খোরাক হয়ে দাঁড়িয়েছে।   তবে প্রশ্ন উঠেছে, হঠাৎ আলোচনায় আসা এই ‘অতি সাধারণ’ কামরুল ইসলাম বাবু কার ভরসায় নৌকা প্রতীক প্রত্যাসা করেন? আওয়ামী লীগের কোনো অসাধারণ মহল কী রয়েছে তার পেছনে? কামরুল ইসলাম বাবুকে ঘিরে এমন প্রশ্নও শোনা যাচ্ছে কারো কারো মুখে।