শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১   ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

ফুরফুরে দেলোয়ার, কাজিমের চোখরাঙানি

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:৪৭ পিএম, ৫ জুন ২০২১ শনিবার

বন্দর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে মাঠে একাট্টা হয়ে কাজ করবে তৃণমূল আওয়ামী লীগ। বন্দর উপজেলা কিংবা কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের হাইব্রীড আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে মাথানত করবেন না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। এবার তারা এতাবদ্ধ হয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে হারিয়ে এই চেয়ারটি ছিনিয়ে নিবে বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

 

এবারের কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় শ্রমিকলীগের আইন ও দর কষাকষি বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব কাজিম উদ্দিন প্রধান ও কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক আকতার হোসেনের নাম ব্যপকভাবে শোনা যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে কাজিম উদ্দিন প্রধানের ইচ্ছে নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে ইউপি’র বর্তমান চেয়ারম্যান হাজী মো. দেলোয়ার হোসেন প্রধান এবারের নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করবেন বলে নিশ্চিত করেছেন।


কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২০১৬ সালের জুন মাসে নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্যান্য ইউনিয়ন পরিষদের মত বন্দর উপজেলার ৫ টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।  সে সময় জাতীয় পার্টির মনোনীত এমপি সেলিম ওসমানের প্রভাবে এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের হাইব্রীড নেতাদের অসহযোগিতার কারণে বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে মাত্র দুইটিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নির্বাচিত হন। বাকি ৩টিই জাতীয় পার্টির চেয়াম্যান ছিল।

 

তাই অন্যান্য ইউনিয়ন পরিষদের মত কলাগাছিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এবারে মূল লক্ষ্যই থাকবে চেয়ারম্যান পদটি পুনরুদ্ধারের। এখানে তারা কোন হাইব্রীড আওয়ামী লীগ নেতা কিংবা জাতীয় পার্টির সাথে আঁতাত করবে না। এমনকি নির্বাচনে যাতে বর্তমান এমপি সেলিম ওসমানের জাতীয় পার্টি কোন প্রভাব বিস্তার করতে না পারে এবং প্রশাসনের কোন পক্ষের প্রতি সহানুভ‚তি না থাকে সে জন্য তারা সজাগ থাকবে।


 
এ বিষয়ে কলাগাছিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম কাশেম জানান, বিগত দুইটা নির্বাচনেই যেকোন কারণে আমাদের পরাজয় হইছে। আর এমন না যে, বর্তমান চেয়াম্যান আমাদেরকে দলীয়ভাবে কোন সুবিধা দিয়েছে। আমাদের দল ক্ষমতায়, বঙ্গবন্ধু কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা মানুষের জন্য রাজনীতি করি, অথচ সরকারী কোন সুবিধা এমনকি একটা মানুষকে কোন প্রকার কার্ড দিয়েও সহযোগিতা করতে পারি না। তাই দলের নেতাকর্মীদের ইচ্ছা একজন দলীয় চেয়ারম্যান হলে কিছু মানুষের উপকার করা যাবে। সামাজিক বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজসহ সরকারী সুবিধা মানুষের কাছে পৌছে দেয়া যাবে।

 

এ বিষয়ে দলীয়ভাবে বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজিমউদ্দিন প্রধানকে মনোনয়ন দেয়ার সম্ভাবনা ও তার পক্ষে দলের মানুষ কাজ করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, এলাকার তৃণমূল আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে উদগ্রীব হয়ে আছে। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু মানুষ সবসময়ই তাদের ব্যাক্তি সুবিধার্থে দলের বিরুদ্ধেও কাজ করে এটা সব দলেই আছে। একটা দলীয় চেয়াম্যান পাইলে দলের নেতৃবৃন্দ কিছুটা হলেও চাঙ্গা হবে বলে তিনি জানান।


 
প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে কলাগাছিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আকতার হোসেন জানান, উনার মায়ের অসুস্থতার কারণে তিনি এখনো মাঠে নামতে পারেননি বা নেতাকর্মীদের সাথে তেমনভাবে যোগাযোগ করতে পারেননি। তবে তিনি কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার জন্য সম্পুর্ণ প্রস্তুত আছেন উল্লেখ করে জানান, নির্বাচনের জন্য দলের মনোনয়নের চেষ্টা করবেন।


 
প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে বন্দর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজিম উদ্দিন প্রধান বলেন, আসলে এ বিষয়ে এখন আমার ইচ্ছে নেই। আমি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করব কিনা এখনো শিউর না, আমাকে সময় দিন আমি পরে জানাবো। তবে বন্দরের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ সবাই একসাথে বসে আলোচনার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ৫জন যোগ্য প্রার্থীকে বাছাই করে তাদের লিষ্ট কেন্দ্র পাঠাবো। কেন্দ্র থেকে যে নির্দেশনা থাকবে আমরা সেই মোতাবেক কাজ করে যাবো। বর্তমান সাংসদ সেলিম ওসমান ও তাদের জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে নিজ দলের পক্ষে কাজ করা সম্ভব হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা একশত ভাগ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবো।


 
এ বিষয়ে কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান জানান, ‘বাংলাদেশের মধ্যে ব্যতিক্রম নির্বাচন বন্দর উপজেলার মধ্যে হয়। বাংলাদেশের অনেক জায়গায় অনেক ধরণের নির্বাচনের কথা শুনেছি যদিও চোখে দেখিনি। এখানে কখনো কোন দলীয় ঝামেল হয়নি, কেউ সীলও মারতে পারেনি কেউ জোর-জুলুমও করতে পারেনি। ২০১১ সালে আমি যখন প্রথম নির্বাচন করি তখন আমার বিরুদ্ধে জোরালো প্রার্থী ছিলেন। ঐ সময়ও আমি ৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছি। এর পরের নির্বাচেনও আমি নির্বাচিত হয়েছি।

 

তিনি বলেন, আমাকে যারা ভোট দেয় তারা কোন দলের মার্কাকে ভোট দেয় না, দেলোয়ারকে দেখেই ভোট দেয়। তা নাহলে এর আগে প্রথম নির্বাচনেতো আমার উপর হুলিয়া জারি করা হইছিল যে, আমাকে মাইরা লইয়া যাইব, কাইট্টা লইয়া যাইব। তখনো কিন্তু নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়ার কারণে আমাকে কেউ আটকাতে পারেনি। এমপি সাহেব স্বয়ং তাকে সাপোর্ট দিয়েও কিছু করতে পারেনি। তাই এখানে দলের কোন প্রভাব বা মার্কার প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না।’