শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

চাঁদা দিয়েও জলজট, বিদ্যুৎ বিল ৬২ লাখ!

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ১০:২৫ পিএম, ৬ জুন ২০২১ রোববার

ডিএনডি বাঁধ অধ্যুষিত এলাকা হলেও ডিএনডি প্রজেক্টের আওতায় আনা হয়নি লালপুর ও ইসদাইরসহ আশপাশের নিম্নাঞ্চল এলাকাগুলোকে। অথচ, পানির নিচে তলিয়ে আছে ফতুল্লার লালপুর পৌষার পুকুরপাড় ও ইসদাইর এলাকা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বারংবার সরেজমিনে পরিদর্শনের পরও মিলছে না প্রতিকার। এই যখন লালপুর এলাকার চিত্র, তখন ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে এবং স্থানীয় বৃত্তবান ব্যক্তিদের সহায়তায় ফতুল্লার পূর্ব লালপুর বাংলাদেশ খাদ এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য পাম্প হাউজ নির্মান করা হয়। মাত্র ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে ওই পাম্প হাউজে বিদ্যুৎ বিল জমেছে ৬২ লাখ টাকা!  

 

এদিকে, পাম্প চালালে বিদ্যুৎ বিল আর না চালালে জলাবদ্ধতা এমন বিপত্তি এড়াতে শেষ পর্যন্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে উত্তোলণ করা হয় চাঁদা। উদ্দেশ্য ছিলো চাঁদার টাকা দিয়ে পাম্প হাউস পরিচালনার। তবে, চাঁদা প্রদানের পরও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না স্থানীয় বাসিন্দারা। তা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ বেড়েছে বহুগুণে। সরেজমিনে জানা যায়, ফতুল্লার লালপুর পৌষার পুকুরপাড় ও পূর্ব লালপুরসহ আশপাশের এলাকায় ৫ শতাধীক বসত বাড়ি রয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য পাম্প চালানোর খরচ হিসেবে স্থানীয় পঞ্চায়েত কমিটি প্রতিটি বাড়ির মালিকের কাছ থেকে মাসে ২০০ টাকা করে চাঁদা নির্ধারণ করেন। রশিদ প্রদানের মাধ্যমে গত ২ মাস যাবত এই চাঁদার টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে। ৫ শতাধীক বাড়ির মালিক নিয়মিত ২০০ টাকা করে চাঁদা প্রদান করলে প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা উত্তোলণ হওয়ার কথা।

 

তবে, পাম্প হাউজের একটি সূত্র জানিয়েছে ৫শতাধিক বসত বাড়ি থাকলেও সেখানে ৩৫০টি পরিবার ২০০ টাকা করে মাসিক চাঁদা প্রদান করছে। সে হিসেবে মাসে ৭০ হাজার টাকা উত্তোলন হওয়ার কথা। আর দু’মাসে এই টাকার অঙ্ক দাঁড়ায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা।স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাম্প পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন দুই জন। এর মধ্যে চালক আলী হোসেনের মাসিক বেতন ১৩ হাজার টাকা এবং সহকারির বেতন ২ হাজার টাকা। সে হিসেবে পাম্প চালানোর কাজে মাসে বেতন বাবদ খরচ হচ্ছে মোট ১৫ হাজার টাকা। ফলে, বাকি টাকা কোথায় বা কোন খাতেই ব্যয় হচ্ছে সেই প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। এই বিষয়ে পাম্প পরিচালনা বিষয়ক কমিটি ও পঞ্চায়েত কমিটির দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলছেন ভিন্ন কথা।

 

কমিটির নেতা মো. সাইদুল ইসলাম, কাজী মাইনুদ্দিন, মো. গিয়াস উদ্দিন ও সদস্য সাদ্দামের দাবী, ‘লালপুরে বেশি সংখ্যক বসত বাড়ি থাকলেও সেখানে ২শ বাড়ি থেকে মাসিক কালেকশন হয়। অন্যরা জলাবদ্ধতার মধ্যে থাকলেও চাঁদার টাকা দিতে নারাজ।’ এদিকে, পরিচালনা কমিটির নেতাদের কথা বাস্তব বলে ধরে নিলেও ২০০ বাড়ি থেকে মাসে ২০০ টাকা করে উত্তোলণ করা হলে এর মাসিক অংক দাঁড়ায় ৪০ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে পাম্প চালকদের বেতন মাসে ১৫ হাজার টাকা দেয়ার পরও অবশিষ্ট থাকছে আরো ২৫ হাজার টাকা। এই টাকা কোন খাতে ব্যায় হচ্ছে- সেই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয়দের মাঝে।

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কেবল স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে উত্তোলনকৃত অর্থই নয়, এর বাইরেও বিশিষ্টজনরা প্রতি মাসেই ওই পাম্প হাউজের জন্য আলাদা করে অর্থসহায়তা করে থাকে। এর মধ্যে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফুর রহমান স্বপন লালপুর এলাকার বাসিন্দা বক্তাবলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম শওকত আলীর দেয়া সহায়তাসহ গত এপ্রিল ও মে মাসে আলাদা কালেক হয়েছে আরো ৬০ হাজার টাকা। তাছাড়া, স্থানীয় মিল ফ্যাক্টরীর মালিকরাও বিভিন্ন সময়ে আর্থিক ভাবে সহায়তা করে থাকে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এরপরও জলাবদ্ধতা যেমন নিরসন হচ্ছে না, তেমনই রহস্যজনক কারণে বিদ্যুৎ বিলের বকেয়াও পরিশোধ হচ্ছে না।  

 

এই বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির প্রধান সাইদুল ইসলাম ও ক্যাশিয়ার কাজী মাইনুদ্দিন জানান, ‘পাম্প হাউজ চালানোর খরচ শুধু চালকের বেতনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। খাল পরিস্কার করা, পাম্প হাউজের অবকাঠামোগত কাজ, বিদ্যুৎ ও পাম্পের খুটিনাটির কাজ বাবদ প্রতি মাসে বহু টাকা খরচ হচ্ছে। সব খরচই আমরা হিসেব মত খাতায় লিপিবদ্ধ করে রাখি। কমিটির ফান্ডে বর্তমানে ৩২ হাজার টাকার অবশিষ্ট আছে । সততার সাথেই আমাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। আর বিদ্যুতের মিটার এসেছে স্বপন চেয়ারম্যানের নামে। তাই বিদ্যুৎ বিলের টাকা তিনি পরিশোধের জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আর এই টাকা দিয়ে আমরা পাম্প পরিচালনার কাজে ব্যয় করছি। আমরা এক টাকাও এদিক সেদিক করছি না।’


এদিকে, পঞ্চায়েত কমিটির হিসাব খাতা থেকে দেখা গেছে, বিদ্যুত অফিসের লোকদের মেহমানদারী হিসেবে ১৪৮০ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। তা নিয়েও জনমনে প্রশ্নের উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, ‘স্থানীয় পঞ্চায়েত কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা পাম্প হাউজ চালানোর জন্য টোকেনের মাধ্যমে কিছু বাড়ি থেকে ২০০ টাকা করে উত্তোলন করছে। আর বিদ্যুতের বকেয়া বিল ৬০-৬২ লাখ টাকা হয়ে গেছে। সেটা নিয়ে কি করা যায়, তাই এখন চিন্তার বিষয়।’


এদিকে, লালপুর পৌষার পুকুরপাড় এলাকার বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, ‘আমরা মাসে মাসে টাকা দিলেও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাচ্ছি না। আগে টাকা না দিলেও পানি ছিলো, এখন টাকা দিলেও হচ্ছে।’