শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১   ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

লালপুরে পাম্প হাউজের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন!

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৪:৩১ পিএম, ৭ জুন ২০২১ সোমবার

ফতুল্লার পূর্ব লালপুরে জলাবদ্ধতা নিরসনের পাম্প হাউজের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ অফিস (ডিপিডিসি)। গতকাল সকালে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। জানা গেছে, জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য গত প্রায় ৩-৪ বছর পূর্বে ফতুল্লার পূর্ব লালপুর বাংলাদেশ খাদ এলাকায় একটি পাম্প হাউজ বসানো হয়। ওই পাম্প হাউজে বর্তমানে ৫০ ঘোড়ার একটি এবং ২৫ ঘোড়ার দুটি পাম্প রয়েছে।

 

এর মধ্যে দুটি পাম্প চলমান থাকলেও একটি বন্ধ রাখা হয়। এরপরও গত ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ বিল জমেছে ৬২ লাখ টাকা। এই অবস্থায় একাধিক বার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর আবেদন সাপেক্ষে আবারও সংযোগ স্থাপন করা হয়। কিন্তু বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না হওয়ায় গতকাল বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় ডিপিডিসির ফতুল্লা জোনের কর্মকর্তারা।


ডিপিডিসির ফতুল্লা জোনের প্রকৌশলী মো. মাইনুদ্দিন দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘৬২ লাখ টাকার মত বিল জমেছে। পরিশোধ না করায় তা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছি।’ এদিকে, বিদ্যুৎ বিল বকেয়া জমলেও চারিদিকে জলাবদ্ধতার এই ভোগান্তির মধ্যে পাম্প হাউজের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানী বাসিন্দারা। যেকোন সময়ে তারা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন বলেও অনেকেই মন্তব্য করেছেন।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতিপূর্বে বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন পাম্প হাউজে আসলে তাদের মেহমানদারি করা হয়। সে যাত্রায় তারা বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেননি। কিন্তু গতকাল দৈনিক যুগের চিন্তা পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে এই বিষয়টি উঠে আসার পরপরই বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন এসে পাম্প হাউজের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। স্থানীয় একটি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।     


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিএনডি বাঁধ অধ্যুষিত এলাকা হলেও ডিএনডি প্রজেক্টের আওতায় আনা হয়নি লালপুর ও ইসদাইরসহ আশপাশের নি¤œাঞ্চল এলাকাগুলোকে। অথচ, পানির নিচে তলিয়ে আছে ফতুল্লার লালপুর পৌষার পুকুরপাড় ও ইসদাইর এলাকা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বারংবার সরেজমিনে পরিদর্শনের পরও মিলছে না প্রতিকার। এই যখন লালপুর এলাকার চিত্র, তখন ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে এবং স্থানীয় বৃত্তবান ব্যক্তিদের সহায়তায় ফতুল্লার পূর্ব লালপুর বাংলাদেশ খাদ এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য পাম্প হাউজ নির্মান করা হয়। মাত্র ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে ওই পাম্প হাউজে বিদ্যুৎ বিল জমেছে ৬২ লাখ টাকা!    


এদিকে, পাম্প চালালে বিদ্যুৎ বিল আর না চালালে জলাবদ্ধতা- এমন বিপত্তি এড়াতে শেষ পর্যন্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে উত্তোলণ করা হয় চাঁদা। উদ্দেশ্য ছিলো চাঁদার টাকা দিয়ে পাম্প হাউস পরিচালনার। তবে, চাঁদা প্রদানের পরও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না স্থানীয় বাসিন্দারা। তা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ বেড়েছে বহুগুণে।


সরেজমিনে জানা যায়, ফতুল্লার লালপুর পৌষার পুকুরপাড় ও পূর্ব লালপুরসহ আশপাশের এলাকায় ৫ শতাধীক বসত বাড়ি রয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য পাম্প চালানোর খরচ হিসেবে স্থানীয় পঞ্চায়েত কমিটি প্রায় ২শ থেকে আড়াইশত বাড়ির মালিকের কাছ থেকে মাসে ২০০ টাকা করে উত্তোলন করছে। রশিদ প্রদানের মাধ্যমে গত ২ মাস যাবত এই চাঁদার টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে। এই টাকা থেকে পাম্প চালকের বেতন এবং পাম্প বিষয়ক অন্যান্য খরচ প্রদান করা হয়ে থাকে।


পাম্প পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে দুই জন। এর মধ্যে চালক আলী হোসেনের মাসিক বেতন ১৩ হাজার টাকা এবং সহকারির বেতন ২ হাজার টাকা। সে হিসেবে পাম্প চালানোর কাজে মাসে বেতন বাবদ খরচ হচ্ছে মোট ১৫ হাজার টাকা। ফলে, বাকি টাকা কোথায় বা কোন খাতেই ব্যয় হচ্ছে সেই প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী।


এদিকে, পরিচালনা কমিটির নেতাদের কথা বাস্তব বলে ধরে নিলেও ২০০ বাড়ি থেকে মাসে ২০০ টাকা করে উত্তোলণ করা হলে এর মাসিক অংক দাঁড়ায় ৪০ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে পাম্প চালকদের বেতন মাসে ১৫ হাজার টাকা দেয়ার পরও অবশিষ্ট থাকছে আরো ২৫ হাজার টাকা। এই টাকা কোন খাতে ব্যায় হচ্ছে- সেই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয়দের মাঝে।


অনুসন্ধানে জানা গেছে, কেবল স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে উত্তোলনকৃত অর্থই নয়, এর বাইরেও বিশিষ্টজনরা প্রতি মাসেই ওই পাম্প হাউজের জন্য আলাদা করে অর্থসহায়তা করে থাকে। এর মধ্যে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফুর রহমান স্বপন লালপুর এলাকার বাসিন্দা বক্তাবলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম শওকত আলীর দেয়া সহায়তাসহ গত এপ্রিল ও মে মাসে আলাদা কালেকশন হয়েছে আরো ৬০ হাজার টাকা। তাছাড়া, স্থানীয় মিল ফ্যাক্টরীর মালিকরাও বিভিন্ন সময়ে আর্থিক ভাবে সহায়তা করে থাকে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এরপরও জলাবদ্ধতা যেমন নিরসন হচ্ছে না, তেমনই রহস্যজনক কারণে বিদ্যুৎ বিলের বকেয়াও পরিশোধ হচ্ছে না।  


এই বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির প্রধান সাইদুল ইসলাম ও ক্যাশিয়ার কাজী মাইনুদ্দিন জানান, ‘পাম্প হাউজ চালানোর খরচ শুধু চালকের বেতনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। খাল পরিস্কার করা, পাম্প হাউজের অবকাঠামোগত কাজ, বিদ্যুৎ ও পাম্পের খুটিনাটির কাজ বাবদ প্রতি মাসে বহু টাকা খরচ হচ্ছে। সব খরচই আমরা হিসেব মত খাতায় লিপিবদ্ধ করে রাখি। সততার সাথেই আমাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। আর বিদ্যুতের মিটার এসেছে স্বপন চেয়ারম্যানের নামে। তাই বিদ্যুৎ বিলের টাকা তিনি পরিশোধের জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আর এই টাকা দিয়ে আমরা পাম্প পরিচালনার কাজে ব্যয় করছি। আমরা এক টাকাও এদিক সেদিক করছি না।’   


ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান  লুৎফর রহমান স্বপন বলেন, ‘স্থানীয় পঞ্চায়েত কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা পাম্প হাউজ চালানোর জন্য টোকেনের মাধ্যমে কিছু বাড়ি থেকে ২০০ টাকা করে উত্তোলন করছে। আর বিদ্যুতের বকেয়া বিল ৬০-৬২ লাখ টাকা হয়ে গেছে। সেটা নিয়ে কি করা যায়, তাই এখন চিন্তার বিষয়।’


এদিকে, লালপুর পৌষার পুকুরপাড় এলাকার বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, ‘আমরা মাসে মাসে টাকা দিলেও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাচ্ছি না। এই অবস্থায় বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলো। এখন বৃষ্টির মৌসুম। যত বৃষ্টি হবে, জলাবদ্ধতা ততই বৃদ্ধি পাবে। আমরা উপায় না পেলে আন্দোলন করতে বাদ্ধ হবো।’ এলাকাবাসি আরো আক্ষেপ করে জানান, আমাদের এমপি সাহেব শুধু ভোটের সময়ই এসে হাজির হয়। কিন্তু এখন আমরা জলাবদ্ধতায় ডুবে মরছি, এখন তার কোন খোঁজ নেই। এটা আমাদের জন্য সত্যিই হতাশার।