শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১   ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

হানজালাকে খুঁজছে পুলিশ

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:২৮ পিএম, ৭ জুন ২০২১ সোমবার

এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ হানজালাকে গ্রেফতার না করায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ছে। মাদক, চাঁদাবাজি, জমিদখল, ব্যবসায়ীদের প্রকাশ্যে হুমকি, পুলিশের অস্ত্র লুট ও পুলিশের উপর হামলার দায়ে রূপগঞ্জ থানায় হাফ ডজন মামলা থাকলেও রহস্যজনক কারনে হানজালাকে গ্রেফতার না করায় এলাকায় আতংক বিরাজ করছে। এদিকে তার দাবীকৃত ২০ লাখ টাকা না দেয়ার কারনে হানজালা ও তার বাহিনীর হুমকিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে রূপগঞ্জ উপজেলার টেলাপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন। গ্রেফতারের দায় এড়াতে থানা পুলিশ বলছে শীর্ষ সন্ত্রাসী হানজালা পালিয়ে থাকলেও তার ২ সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।


পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পাচাঁইখা টেলাপাড়া এলাকার শফিউদ্দিনের ছেলে হানজালা দীর্ঘদিন যাবৎ এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। ছাত্রলীগ নেতার পরিচয়ে এলাকায় কিশোর গ্যাং গঠন করে বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। হানজালার পিতা শফিউদ্দিনও মাদকাশক্ত। দিনভর সে মাতাল অবস্থায় থাকে। তারই ছেলে হানজালা এলাকায় গড়ে তুলেছে মাদকের সা¤্রাজ্য। এলাকার যুবক ও কিশোরদেরকে মাদক বিক্রি ও সেবন করতে বাধ্য করে হানজালা। এমন কোন অপরাধ নাই যে তার দ্বারা হয়না। এলাকাবাসীর ভয় ও আতংক এই হানজালা বাহিনী।

 

চাঁদাবাজি, মাদক, সন্ত্রাস, অপহরণ, জমি দখলসহ বিভিন্ন অপকর্ম করার অপরাধে রূপগঞ্জ থানায় হাফ ডজন মামলা থাকলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার না করায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতংক বাড়ছে। এ বাহিনীকে টাকা না দিয়ে এলাকায় কেউ নতুন বাড়িঘর নির্মান করতে পারেনা। জমিজমা বিক্রি করলেও তাকে মোটা অংকের চাঁদা দিতে হয়। দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত এই হানজালা বাহিনী এলাকায় দিনের পর দিন তান্ডব চালাচ্ছে। ছাত্রলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে এসব অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে বলে জানা যায়। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাকে ভূলতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতির পদ দেয়া হয়। তারপর থেকেই সে বেপরোয়া হয়ে উঠে। জমি দখল, চাঁদাবাজী ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এলাকার আতংক হয়ে উঠে হানজালা।

 

তবে তার এ অপকর্মের কারনে ২০১২ সালে তাকে ছাত্রলীগ সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তারপরেও তার অপকর্ম থেমে নেই। সাবেক ছাত্রলীগনেতা নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধ করে বেড়াচ্ছে হানজালা। ছেলে মেয়েকে বিয়ে দিতে তাকে চাঁদা দিতে হয়। নতুন বাড়ি ঘর নির্মান করলে তাকে মোটা অংকের চাঁদা দিতে হয়। জমিজমা বিক্রি করলে ক্রেতা বিক্রেতাদের চাঁদা গুনতে হয়। তাকে চাঁদা না দিয়ে এলাকায় কেউ শান্তিপূর্ন ভাবে বসবাস করতে পারেনা। তার বাহিনী এলাকার স্কুল কলেজের ছাত্রীদের যৌন হয়রানীর করলেও তার বিরুদ্ধে নালিশ করে কোন বিচার তো পায়নি বরং পরিবারের সদস্যদের উল্টো হুমকি দেয়।

 

গত বছর এক মামলায় হানজালাকে গ্রেফতার করতে পুলিশ তার এলাকায় অভিযান চালালে হানজালা ও তার বাহিনী জোর পূর্বক পুলিশের কাছ থেকে পিস্তল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ঐদিনই রূপগঞ্জ থানায় সরকারী অস্ত্র লুটের ঘটনায় হানজালাকে প্রধান আসামী করে মামলা কার হয়। পুলিশের তৎপরতায় পরেরদিন পিস্তল ফেরৎ দেয় হানজালা। তাছাড়াও রূপগঞ্জ থানায় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে হাফ ডজন মামলা রয়েছে। হেফাজতের ভাংচুরের মামলায় তার দুই অন্যতম সহযোগী কালাম ও স্বপনকে গ্রেফতার করে কোর্টে প্রেরন করে ভূলতা পুলিশ ফাঁড়ি। এখনও তারা জেল হাজতে রয়েছে।

 

নামে ছাত্রলীগ ব্যবহার করলেও সে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে বিভিন্ন দলের সাথে কাজ করে বলে জানা গেছে। টেলাপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন নতুন বাড়ি নির্মান করায় ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেছে হানজালা। চাঁদা না দিলে ব্যবসায়ীকে জনসন্মুখে জানে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় গত ২৫মে অভিযোগ করেন ব্যবসায়ী আফজাল। ভূলতা পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ নাজিম উদ্দিন মজুমদার এ ঘটনার তদন্তে গেলে ক্ষিপ্ত হন জানজালা। পরেরদিন হানজালা ও তার বাহিনী নিয়ে ঢাকা- সিলেট মহাসড়কে বিক্ষোভ করে। ফাঁড়ির ইনচার্জ নাজিম উদ্দিন মজুমদার বিক্ষোভের কারন জানতে চাইলে পুলিশের উপর চড়াও হয় হানজালা।

 

একসময় হানজালার বাহিনী পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশের দুই কনষ্টেবল রিপন ও কবির আহত হন। এ ঘটনায় এস আই মিন্টু বৈদ্য বাদী হয়ে ৩০ মে হানজালাকে প্রধান আসামী করে ২২ জন নামীয় ও ১২০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে রূপগঞ্জ থানায় মামলা করে। এঘটনায় হানজালার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করলেও প্রধান আসামী হানজালা এখনও গ্রেফতার না হওয়ায় এলাকায় আতংক বিরাজ করছে।


এ বিষয়ে ভূলতা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নাজিম উদ্দিন মজুমদার বলেন, একাধিক মামলার আসামী হানজালাকে পুলিশ খুঁজছে। তার বাড়িতে কয়েকবার অভিযান করেছি। সে পলাতক রয়েছে। তবে আইনের চোখ ফাঁকি দিতে পারবেনা। ধরা তাকে পড়তেই হবে।