শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০   ২০ রমজান ১৪৪৫

সম্মান চায় আ’লীগ, অনড় মাকসুদ

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:৪৬ পিএম, ৯ জুন ২০২১ বুধবার

বন্দর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জাতীয় পার্টি সমর্থিত সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান। মুসাপুর ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীগণের ধারণা মুসাপুর আওয়ামী লীগের বিষয়ে প্রতিবারের নির্বাচনেই এমপির একটি বিরাট ভূমিকা থাকে। আর স্থানীয় এমপি যখন ক্ষমতাসীন দলের বিপক্ষে কাজ করে তখন স্থানীয় প্রশাসনও ক্ষমতাসীন দলের বিপক্ষে গিয়ে কাজ করে।

 

ত্যাগী নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, যেই দলটি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে সেই আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়, তার চেয়েও বড় কথা মুক্তিযুদ্ধের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এই সময় আওয়ামী লীগ নামধারী কিছু নেতার কারণে যদি রাজাকারের পক্ষ হয়ে কাজ করে তাদের ক্ষমতায় বসায়। তাদের সকল পাপ-কার্যে বাহবা দেয় তাহলে এর চেয়ে লজ্জাজনক এবং দুঃখের কোন বিষয় থাকতে পারে না।

 

অনেক কর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা হয়ে তারা যদি রাজাকারের পুত্রের হয়ে কাজ করে, তাদেরও তো কিছু সমর্থক থাকে। তাদের কারণে ঐসব সমর্থকরাওতো বিপক্ষকে সমর্থন করে এতে করে আওয়ামী লীগের মতো একটি দলের মান-সম্মান, ইজ্জতসহ ভাবমূর্তি ক্ষ‚ণœ হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই এই ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের কাছে বিপক্ষের চেয়েও বড় সমস্যা নিজের দলের উপরের সারি নেতৃবৃন্দ। যারা ব্যক্তি স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে শুধু মাত্র নিজেদের স্বার্থে দলের বাইরের বিশেষ করে রাজাকারের পক্ষ নিয়ে কাজ করেন।


 
এবিষয়ে মুসাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, এখানকার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের জন্য সভাপতি মজিবুর রহমান আছে আমি আছি আরো যারা ইচ্ছুক তাদের নিয়ে আমরা বসবো। আমাদের দলের স্থানীয় নেতাদের মধ্যে একতা আছে, আমরা আশাকরি আমরা সবাই একত্রে বসে একটা সিদ্ধান্ত নিব। এখানে যাকে মনোনয়ন দিলে অর্থাৎ যার জনসমর্থন আছে তাকে মনোনয়ন দেয়ার চেষ্টা করব। এ বিষয়ে বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ হতে কোন প্রকার সমর্থন পাওয়া যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত নির্বাচনগুলোর কোনটিতেই উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান চেয়ারম্যান বা সম্পাদক আমাদের পাশেতো দাঁড়াইনি বরং তারা বিরোধীদের জন্য কাজ করেছে। আমাদের উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কমিটির মধ্যে ৪টিই তাদের বিরুদ্ধে অনাস্থা দিয়েছেন। তারা কখনো প্রকৃত আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করেনি। কমিটিতো এখনো গঠন করা হয়নি। উনি অন্তত মুসাপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করতে দিবে না। এর আগের নির্বাচনে উনি আওয়ামী লীগ নেতা কাদির ডিলারকে ফেল করাইছে এই বিষয়টা আর কারো না জানা নয়।

 

আওয়ামী লীগ নেতা মুসাপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করলে তার বিরুদ্ধেও তিনি অবস্থান নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে উনার কোন লাভ হবে না। আওয়ামী লীগের বিপক্ষ যদি ক্ষমতায় যায় তাহলে তাকে খুশি রাখার জন্য যা যা করণীয় তাই করবে। তবে তিনি চাইলেন কি না চাইলেন তা বড় বিষয় না। এমপি পরিবার যদি নিরপেক্ষ থাকে তাহলে তা কেউ ঠেকাতে পারবে না। তবে শামীম ভাই আমাদের দলের লোক, সংসদ সদস্য সেলিম ভাইও (নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান) এখন আগের তুলনায় অনেকটাই আন্তরিক। তিনি বলেন, সাংসদ সেলিম ভাই যদি বলেন, এখানে নির্বাচনে যে ই বিজয়ী হবে আমি তাকে নিয়েই কাজ করব। ব্যক্তিগতভাবে আমি কাউকে সাপোর্ট দিব না। তাহলে অবশ্যই এখানে এবার আওয়ামী লীগের পক্ষ হতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবে। তাই এই বিষয়টা নিয়ে আমরা এখন অনেকটাই আশাবাদী। কেউ এককভাবে এখন আর সুযোগ পাবে বলে মনে হয় না।


 
এই বিষয়ে মুসাপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান সভাপতি মজিবুর রহমান বলেন, নির্বাচনে শুধু নিজের স্বার্থ নয় দলেরও স্বার্থ জড়িত থাকতে হয়। তাই এত টাকা পয়সা খরচ করে নির্বাচন করবো তখন যদি নিজের দলের মানুষই নিজেরদের বিপক্ষে কাজ করে তাহলে জয়ী হবোই বা কি করে আবার কাজ করবোই কি করে। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মদদে আমাদের উপর হামলা চালায়, বাড়ি-ঘর এসে ভাঙচুর করে, লুটপাট করে বিপক্ষের লোক। তখন তাদের পক্ষ হয়ে তাদের দলের লোকজন এক হয়ে আমাদের উপর নির্যাতন চালায়, আমার ভাইকে আহত করে। তার চিকিৎসায় বেশ কয়েকটি সেলাই করতে হয়, আমার ভাইকে অপহরণ করে প্রতিপক্ষ অথচ আমাদের উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সম্পাদক আমাদের এখানে একবার এসে দেখে যাবেতো দুরের কথা একটিবার খবরও নেয়নি। তারা উল্টো রাজাকারের পুত্রের পক্ষ হয়ে কাজ করে। তারা কি চাইবে এখানে আওয়ামী লীগ থেকে কেউ নির্বাচিত হোক ? এমপি সেলিম ওসমান দায়িত্ব নিয়ে আশ্বস্ত করার পর এখন আমরা এলাকায় থাকতে পারছি। তা নাহলে বাড়ি-ঘরে থাকাই মুশকিল হয়ে যেত।

 

এর আগের কোন নির্বাচনে, শুধু নির্বাচনে কেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোন কাজেই উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান চেয়ারম্যান এমএ রশীদ আমাদের কোন প্রকার সহযোগিতা করেনি। তবে তিনি আশাবাদি এবার স্থানীয় এমপি নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন এবং স্থানীয় প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার জন্য বলবেন। তাহলে এবার অন্তত এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের পক্ষ হতে যেই নির্বাচন করুক না কেন সেই নির্বাচিত হবেন। এছাড়া আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরোধ নাই। আমরা একতাবদ্ধ আছি।

 

নির্বাচনের বিষয়ে মুসাপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন জানান, ‘এবারও আমি নির্বাচন করবো আর আমি জয়ের ব্যাপারেও আশাবাদী। আমার এলাকার বেশিরভাগ রাস্তাঘাটের উন্নয়ন আমি করেছি,যেটুকু বাদ আছে সেগুলোও আবার নির্বাচিত হয়ে করে ফেলবো। স্বাস্থ্যসেবার মান আমাদের এলাকায় খুব খারাপ। এবার নির্বাচিত হলে স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে উদ্যোগ নেবো।’