শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

আওয়ামী লীগের মোড়ল হাই-বাদল !

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৯:১৮ পিএম, ১০ জুন ২০২১ বৃহস্পতিবার

নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে নিজেদের একক আধিপত্য বিস্তার করে যাচ্ছেন সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল। এর মাধ্যমে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে নিজেদের মোড়ল হিসেবে অধিষ্ঠিত করেছেন এই দুই নেতা। জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাদের অভিযোগ, থানা কমিটিগুলো গঠনে তারা একক সিদ্ধান্ত নেন। দলের অন্যান্য ভাইটাল নেতাদের সাথে তারা কোন রকম পরামর্শও করেন না। এমনকি দলীয় কর্মসূচি পালনেও তারা কমিটির অন্যান্য সদস্যদের এক কাতারে আনতে ব্যর্থ হয়েছেন।  


সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই কমিটিতে আব্দুল হাইকে সভাপতি ও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতির পদে মেয়র আইভীসহ হেভীওয়েট আরো একাধিক নেতা থাকলেও তাদের একক সিদ্ধান্তের ফলে আওয়ামী লীগে সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে। ফলে কর্মসূচিগুলোতে এক কাতারে দেখা যায়না জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দদের।   


নেতাদের অভিযোগ, জেলা আওয়ামী লীগে মোড়লের ভূমিকা পালন করছে সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল। থানা কমিটি করা থেকে শুরু করে, যেকোন সাংগঠনিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয় তাদের একক সিদ্ধান্তে। নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল কাদির বলেন, ‘থানা বা উপজেলার কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে জেলা কমিটির সভাপতি-সেক্রেটারি কেউই আমাদের সাথে সমন্বয় করে না। তারা দু’জন দুই মতে চলে। অনেক সময় সভাপতিকে না জানিয়েই সাধারণ সম্পাদক অনেক কাজই নিজের নিয়ন্ত্রণে আনেন। এটা লজ্জাজনক। এর কারণেই দলে বিভক্তি দেখা যায়। মূলত প্রভাব বিস্তার করার জন্য একটি শক্তির পক্ষ হয়ে তারা কাজ করে। এজন্য মাঠের কর্মীরা হতাশ। যারা জীবন বাজি রেখে মাঠে কাজ করে আওয়ামী লীগকে জাগ্রত রেখেছে, তারা এখন অসহায় বোধ করছে। তাদের কারণে আওয়ামী লীগে দুষ্ট লোকের আনাগোনা দেখা যায়।

 

যারা বিএনপি জামায়াতের সাথে সম্পৃক্ত ছিলো, তাদেরকে দলে আনার জন্য নাম প্রস্তাব করেছে। ব্যক্তিগত সুবিধার কারণে তারা এগুলো করছে। এসবের মাধ্যমে তারা জেলা আওয়ামী লীগের মোড়ল হিসেবে নিজেদের অধিষ্ঠিত করতে যাচ্ছে। তাদের কাছে যোগ্য নেতারা মূল্যায়ন পাচ্ছে না। আগামীতে দলে ভালো নেতার সংকট দেখা দিতে পারে।’


তিনি আরো বলেন, ‘সভাপতি মাঝে মধ্যে আমাদেরকে সাংগঠনিক বিষয়ে খবরা খবর দিলেও সেক্রেটারি তাও করে না। আমার মনে হয় সেক্রেটারির জন্য সভাপতি তার ভূমিকা যথাযথ ভাবে প্রয়োগ করতে পারে না। কয়েক মাস আগে তারা প্রত্যেক থানায় কমিটি গঠনের কার্যক্রম একক ভাবে সম্পন্ন করেছে। আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জ ব্যতিত অন্যান্য কমিটির বিষয়ে আমাদের কাউকেই কিছু বলেনি। অথচ, অনেক ক্ষেত্রেই আমরা দেখেছি যে, আওয়ামী লীগের থানা কমিটি করেন জাতীয় পার্টির এমপির নির্দেশনায়। এটা অত্যান্ত নির্লজ্জ একটি বিষয়। দলের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি কিভাবে জাতীয় পার্টির নেতার হস্তক্ষেপে থানা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করে! গোগনগরে কমিটি করেছে জাতীয় পার্টির এমপি এবং আমাদের সেক্রেটারি। গোদনাইল ও বন্দরের ৩টি জায়গাতেও এমনটাই হয়েছে।’


নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘জেলা কমিটির যেকোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত আব্দুল হাই ও ভিপি বাদল নিয়ে থাকেন। থানা বা উপজেলা কমিটি গঠনের বিষয়েও আমাদেরকে কিছুই জানানো হয় না। ইতিপূর্বে কেবল আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের কমিটির সম্মেলনের বিষয়ে আমাদের জানানো হয়েছিলো। সেখানে আমরা উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু এর বাইরে ফতুল্লা, সদর, বন্দর ও সোনাগাঁয়ে কিভাবে কমিটি হচ্ছে, বা আদৌ হচ্ছে কি না, কোন বিষয়েই সভাপতি-সেক্রেটারি আমাদের কিছুই জানায়নি। উদ্দেশ্য জনক ভাবেই আমরাদেরকে আড়ালে রাখা হচ্ছে। তা নিয়ে দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বা সদস্যদের মধ্যেও আক্ষেপ ও ক্ষোভ রয়েছে। এমন অভিযোগ জেলা আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাদেরও।’


জানা গেছে, একক সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবারই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে আব্দুল হাই ও শহীদ বাদল। সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটি থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিতর্কের শীর্ষে থাকছে তারা। তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের সর্বোচ্চ পর্যায়েও গিয়েছে অভিযোগ।
এদিকে, বিতর্কের দিক থেকে বেশ এগিয়ে ভিপি বাদল। দলীয় ও সাংগঠনিক কাজেতো বটেই, বিতর্ক সৃষ্টি করছেন সভা-সমাবেশে বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রেও। তার আক্রমনাত্মক বক্তব্যের শিকার হয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা. সেলিনা হায়াত আইভী। তিনি মেয়র আইভীকে কোথাকার কোন আওয়ামী লীগার বলেও মন্তব্য করে সমালোচিত হন।


এর আগে, দেশব্যাপি আলোচিত ‘টেন্ডার স¤্রাট’ জি.কে শামীমকে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে অর্ন্তভূক্ত করতে বেশ আগ্রহ দেখিয়েছিলো সাধারণ সম্পাদক ভিপি বাদল। জি.কে শামীম গ্রেফতার হওয়ার পর তাদের একটি ছবি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। তখন বেড়িয়ে আসে ভেতরের খবর। আওয়ামী লীগ নেতাদেরই দাবি, আর্থিক সুবিধা ভোগের আশায় জি.কে শামীমকে জেলা কমিটিতে আনতে চাওয়া হয়েছিলো। ওই ঘটনার পরও তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ে ভিপি বাদলসহ অন্যান্যরা।


কথিত আছে, লাঙ্গলমার্কা আওয়ামী লীগ হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ পরিচিত ভিপি বাদল। যিনি একেক সময় একেক রূপ ধারণ করে থাকে। গত দুই বছরে তিনি কয়েকবার এমপি সেলিম ওসমান সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছেন। যদিও আবার সেই সেলিম ওসমানের কাছেই তিনি বশ মেনেছেন। তাইতো আগামী সিটি নির্বাচনে ভিপি বাদলকে মেয়র হিসেবে দেখতে চেয়েছেন জাতীয় পার্টির এমপি সেলিম ওসমান।


অথচ, গত বছরের ২ জুলাই খানপুর এলাকায় ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ ইউনিট উদ্বোধনকালে আলোচনা সভায় সাংসদ সেলিম ওসমান ভিপি বাদলকে উদ্দেশ্য করে করেছিলেন, ‘পত্রিকায় দেখলাম আমার ছবিসহ একটি সংবাদ প্রকাশ হয়েছে বন্দরের একটি ঘটনায়। তিনি (ভিপি বাদল) চাষাঢ়া রেলওয়ে হেড কোয়ার্টারে থাকতেন। একজন এমপি সাহেবের আশীর্বাদে উনি নাকি এখন লেতা (নেতা)।

 

এ লেতা বন্দরে গিয়ে বললো, সেলিম ওসমান বন্দরের এমপি না। বন্দরের উপজেলা চেয়ারম্যান বন্দরের এমপি। প্রশ্ন থাকবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে, এমপি সিট বদলায় দিতে পারে এটি কি করে সম্ভব হতে পারে! দুই দিনের যোগী না ভাতেরে অন্য বইলেন না। হাজার বার বলি সেলিম ওসমানের থাবা বাঘের চেয়েও ভয়ংকর। মতলব থেকে এসে লেতা হয়েছেন। ধানমন্ডিতে অট্টালিকা করেছেন। দুই নাম্বার স্কুল বানিয়েছেন। কত টাকার মালিক হয়েছেন সেলিম ওসমান দেখিয়ে দিবে। দেখবো আপনি আমাকে সরাতে পারেন কি না। ওনাকে (ভিপি বাদলকে) আবার মতলব ফিরে যেতে হবে।’ যদিও পরবর্তীতে ভিপি বাদলের সাথে সেলিম ওসমানের সুসম্পর্ক গড়ে উঠে।