কুতুবপুরে বেড়েই চলেছে কিশোর অপরাধ
যুগের চিন্তা অনলাইন
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৮:৩৯ পিএম, ২৫ জুন ২০২১ শুক্রবার
ফতুল্লার কুতুবপুরে দিন দিন বেড়েই চলেছে কিশোর অপরাধ।প্রশাসনের নেই কোনো তৎপরতা, একাধিক মামলা হলেও আসামীর রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিশোর অপরাধ আগেও ছিল, বর্তমানেও আছে। তবে দিন যত যাচ্ছে তাদের অপরাধগুলো ক্রমেই হিংস্র, নৃশংস ও বিভীষিকাপূর্ণ রূপে দেখা দিচ্ছে।
খুন, ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার মতো হিংস্র ধরণের অপরাধ করার প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে এবং এখনো বেড়েই চলেছে। সংঘবদ্ধভাবে প্রকাশ্যে দিনের আলোয় নৃশংসভাবে খুন করা হচ্ছে। পরবর্তী প্রজন্মকে রক্ষার লক্ষ্যে এখনই এর লাগাম টেনে ধরা দরকার। না হলে ভবিষ্যতে এটি খুব ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তাই প্রশাসনের নজরদারি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন অভিভাবকরা।
জানা যায়, গত (১৩ জুন) রাতে কুতুবপুরের পশ্চিম নন্দলালপুর রেললাইন সংলগ্ন প্রাপ্তি সিটি এলাকায় অটোরিকশা চালককে মারধর করে নগদ টাকা ও ব্যবহৃত মোবাইল ছিনতাই করে নিয়ে যায় একদল কিশোর। এ বিষয়ে পাগলা চিতাশাল এলাকার ফাইজউদ্দিন মোল্লার ছেলে ভুক্তভোগী অটোরিকশা চালক রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে, নয়ামাটি এলাকার রাব্বি ও মাসুদসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনকে আসামি করে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।
গত (১৫ জুন) পাগলা, নয়ামাটি ভাবির বাজার এলাকায় সেই ছিনতাইয়ের অভিযোগকে কেন্দ্র করে দুই কিশোর গ্রুপের মাঝে দফায় দফায় চলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। সে সময় পুরো নয়ামাটি ভাবির বাজার এলাকা জুড়ে আতংক ছড়িয়ে পরে। দোকান পাট বন্ধ করে অনেকেই চলে যায় নিরাপদ স্থানে। পরে সংবাদ পেয়ে পুলিশ, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, গণ্যমান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ঘটনা স্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত হয় নয়ামাটি এলাকার তানভীর ও দূর্জয়। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ফতুল্লা মডেল থানায় আহত দূর্জয়ের মামা সাদ্দাম হোসেন ও তানভীরের বড় ভাই আফজাল বাদী হয়ে, নন্দলালপুর মেডিকেল গলি এলাকার ইদ্রিসের ছেলে জুয়েল শেখ, ইব্রাহিমের ছেলে ইসমাইল আহাম্মেদ পারভেজ, কামালের ছেলে সালাম, জামালের ছেলে রাব্বি, আনিছের ছেলে সাইফুল, রাতুল, আরিফসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৪/৫ জনকে আসামি করে পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করেন। পরবর্তীতে আফজালের দায়ের করা অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করে পুলিশ। কিন্তু দুঃখের বিষয় পুলিশ মামলা গ্রহণ করলেও এখনো পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
কুতুবপুরে কিশোরদের অপরাধের যেনো শেষ নেই, যেমন গত (২২ জানুয়ারি) রাতে পাগলা নয়ামাটি ভাবির বাজার এলাকায় ফুচকাওয়ালার পাওনা মাত্র ৬০ টাকাকে কেন্দ্র করে জড়িয়ে পড়ে বিশাল ঝগড়ায় একদল কিশোর। সে সময় গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয় এক যুবক। কিশোর দলের সদস্যরা সেখানেই ক্ষান্ত না হয়ে পরের দিন আহত যুবককে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালিয়ে টাকা, মোবাইল ছিনিয়ে নেয় কিশোর বাহিনী। এ বিষয়ে গত (২৫ জানুয়ারি) দক্ষিণ নয়ামাটি এলাকার আশরাফ মলি¬কের ছেলে আহত রায়হান মলি¬ক দিপু বাদী হয়ে নয়ামাটি এলাকার জাহাঙ্গীরের ছেলে মাসুম, কামালের ছেলে সালাম, জাবেদ, আলামিন, মিজানের ছেলে সোয়েব, মেহেদী, জামালের ছেলে রাব্বি, পলাশ, কামাল, লাভলু, সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৪/৫ জনকে আসামি করে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। (যাহার মামলা নং- ৪৯/০১/২১)। মামলা দায়ের করার পরথেকে গত ছয় মাসেও একজন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
নয়ামাটি এলাকার স্থানীয় আব্দুল জব্বার বলেন, কিশোর অপরাধ বেড়েই চলেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা, অভিযোগ, জিডি থানায় দায়ের করেও কোনো সফলতা পাচ্ছেন না তারা। পুলিশ প্রশাসন অপরাধে জড়িত কিশোরদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে কিছুটা হলেও কমে যাবে এইসব এলাকার অপরাধ। আমাদের নয়ামাটিতে একদল কিশোরের সীমাহীন অপকর্মে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। মাদক, চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, ধর্ষণ সহ এমন কোনো অপরাধ নেই যে তারা করে না। আমরা কিশোর অপরাধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানাচ্ছি।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, আমাদের নয়ামাটিতে একদল কিশোর রয়েছে, চায়ের দোকানদার কামালের ছেলে সালাম গ্রুপ। তাদের পিছন থেকে শেল্টার দিচ্ছে নন্দলালপুর মেডিকেল গলি এলাকার মাদক ব্যবসায়ী জুয়েল শেখ। তার ইন্ধনেই এই কিশোর গ্রুপ প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছেন অপরাধ কর্মকান্ড। সালামের গ্রুপে রয়েছে প্রায় দুই থেকে তিন শতাধিক কিশোর। তাদের মারামারিতে টার্গেট থাকে মাথায় আঘাত করা। কারন কয়েক মাসের ব্যবধানে নয়ামাটি এলাকায় এই সালাম গ্রুপের মারামারির রয়েছে অর্ধশত অভিযোগ ও বেশকিছু মামলা। বিগত দিনগুলোতে সালাম গ্রæপের মারধরের শিকার যুবকদের বেশিরভাগই মাথায় আঘাত করে থাকে বলেও তিনি জানান।
এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রকিবুজ্জামান বলেন, যারা কিশোর অপরাধে অভিযুক্ত বা যাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে আমরা তাদের আইনের আওতায় আনতে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। মামলা দায়ের হয়েছে কিন্তু আসামীরা গ্রেফতার হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সকল অভিযোগ বা মামলার ব্যাপারে তৎপর রয়েছি, যারা গ্রেফতার হয়নি তাদেরকেও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।