শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১   ১২ শাওয়াল ১৪৪৫

চাঞ্চল্য ফিরেছে বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ১০:৪৭ পিএম, ১৪ জুলাই ২০২১ বুধবার

গতকাল দুপুর ২ টা। নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে থামানো আনন্দ পরিবহনের একটি বাসের চাকা (টিউব) সারানোর কাজে ব্যস্ত পরিবহন মিস্ত্রি আব্দুল মিয়া। তার দুই হাত ও কপালের কিছু অংশে কালি লেগে আছে। সম্ভবত হাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে গিয়ে সেখানেও কালি লেগেছে। এ সময় তার বা-হাতের তালুতে দেখা যায়, সাদা কাপড়ের একটি ব্যান্ডেজ; এতে রক্তের ছাঁপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কিন্তু অশ্চর্যের বিষয় হলো হাতের মধ্যে ক্ষত নিয়েও অবিরাম বাসের চাকা মেরামতের কাজ করে চলছেন আব্দুল মিয়া।

 


জানতে চাইলে আব্দুল মিয়া এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ নারায়ণগঞ্জ সেন্ট্রাল বাস টার্মিনালে বিভিন্ন বাসের চাকা সারানোর কাজ করে সংসার চালাচ্ছি। গত ২০ দিন ধরে লকডাউনে পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় আমার উপার্জন বন্ধ আসিল। তাই অনেক কষ্টের মধ্যে ছিলাম। তবে আগামী ১৫ তারিখ থেকা সরকার লকডাউন বন্ধ করায়, আমাগো বাসের মিস্ত্রিগো আবার কাজ আর উপার্জন শুরু হইসে। আজকে সারাদিনে তিনটা চাকা সাড়াইসি। তাই হাতে সামান্য চোটও পাইসি। তারপরেও চোট পাই আর যাই পাই, পকেটে টাকা থাকালে এসব আমাগো কাছে কোন সমস্যা না।

 


গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে শুধু আব্দুল মিয়াই নয়, তার মতো আরো অসংখ্য পরিবহন মিস্ত্রি ও শ্রমিকদের দেখা গেছে ব্যস্ততম সময় পার করতে। মূলত আগামী ১৫ জুলাই ২২ জুলাই পর্যন্ত সরকারের লকডাউন শিথিল ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবহন চলাচলের যেই সিদ্ধান্ত; এতেই কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে নারায়ণগঞ্জের পরিবহন সেক্টরে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা নারায়ণগঞ্জ রুটে বাস চলাচলের প্রস্তুতি হিসেবে আগে থেকেই টার্মিনালের বিভিন্ন কাউন্টার গুলোতে শুরু হয়েছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ। বন্ধন, উৎসব, আনন্ধ ও বন্ধু পরিবহনসহ অন্যান্য বাসের ইঞ্জিন ও নানান যন্ত্রাংশ শেষ বারের মতো ঝালিয়ে নিচ্ছেন চালক ও মিস্ত্রিরা।

 

এ সময় বেশির ভাগ পরিবহন শ্রমিকদের সাথেই কথা বলে জানা যায়, ঈদের আগে এক সপ্তাহ পরিবহন চালু রাখার যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার এতে বেশ খুশি হয়েছেন তারা। রহমান নামে আনন্দ বাসের এক চালক বলেন, ‘আজকে অনেক দিন পরে সড়কে বাস চালুর খবর পাইলাম। কম হইলেও ঈদের আগে ৭ দিন গাড়ি চালাইতে পারমু। তাই গত ২০-২৫ দিন ধইরা যেই অভাবের মধ্যে আছি, সেইটা এখন অল্প হইলেও কাটাইতে পারমু। আসল কথা হইল আমরা স্ত্রী আর পোলাপান লইয়া কোনরকম ঈদটা করতে পারলেই হয়, বাকিটা আল্লাহর হাতে’।

 


জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কমল মিয়া এ বিষয়ে বলেন, ‘ লকডাউনের কারণে আমাদের শ্রমিদের কাছে আজকে এক মাস ধরে কোন কাজকর্ম নেই। তারা অনেক কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে অনেকের ঘরে খাবারও নেই। কিন্তু এখন যেহেতু ৭ দিনের জন্য সরকার লকডাউন শিথিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এতে আশা করি, শ্রমিকরা ঈদটা অন্ত্যত ভালো ভাবে পালন করতে পারবে। আসলে ‘নাই মামার চেয়ে কাঁনা মামা অনেক ভালো’।

 


এদিকে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের পূর্ব পাশেই অবস্থিত কেন্দ্রীয় লঞ্চ টার্মিনাল। সেখানে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। সরেজমিনে গিয়ে চোখে পরে, বর্ষার অতিবৃষ্টিতে নতুন রূপ ধারন করা শীতলক্ষ্যার রূপালী পানিতে ভাসতে থাকা নদীপথে চলাচলকারী বিভিন্ন লঞ্চগুলোকে ধুঁয়ে-মুছে পরিষ্কার করছেন টার্মিনালের শ্রমিকরা। কিছু কিছু লঞ্চের ভেতরে আবার মেরামতের কাজও চলছে। এ সময় এখানকার লঞ্চ চালক ও অন্যান্য কর্মচারিদের সাথে কথা হলে তারা জানান, দীর্ঘদিন সরকারি বিধি নিষেদের ফলে নদীপথে যাত্রীবাহি নৌ চলাচল বন্ধ ছিলো। এতে অধিকাংশ লঞ্চের চালক ও চালকের সহকারীরা এতোদিন নিদারুন কষ্টে জীবনযাপন করেছে। তবে ঈদুল আযহার আগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারের পক্ষ থেকে লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দেওয়ার হাসি ফুটেছে অসংখ্য লঞ্চ চালক ও কর্মচারীদের মুখে।

 


সাব্বির নামে এক লঞ্চ চালক বলেন, গত ২০- ২৫ দিন ধরে লঞ্চ বন্ধ থাকায় আমি চাঁদপুরে গ্রামের বাড়ি চলে গিয়েছিলাম। সেখানে এতোদিন অলস সময় পার করেছি। টাকা পয়সাও ফুরিয়ে গিয়েছিলো। আর কয়েকদিন এই অবস্থায় থাকলেই ঝামেলায় পরে যেতাম। তবে ঈদের আগে লকডাউন শিথিলের সংবাদ পেয়ে দ্রæত নারায়ণগঞ্জ এসেছি। এখন ঈদের আগ পর্যন্ত ভালো ভাবে যদি লঞ্চ চালাতে পারি তাহলে কিছুটা হলেও অর্থিক মন্দা কাটাতে পারবো।