শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১   ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

রাতের আঁধারে অনিরাপদ নারায়ণগঞ্জ

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৭:২৬ পিএম, ১৫ জুলাই ২০২১ বৃহস্পতিবার

 

# এক রাতে দুই খুন, অটো ও মোবাইল ছিনতাই

# অসচেতনতার কারণে এগুলো ঘটছে : এসপি

রাতের আঁধারে অনিরাপদ হয়ে উঠছে নারায়ণগঞ্জ। শহর থেকে শহরতলীতে বিরাজ করছে একই চিত্র। দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ছিনতাইকারীরা। বিশেষ করে অটো রিক্সাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একাধিক দুর্ধর্ষ ছিনতাই চক্র। সম্প্রতি ফতুল্লার ইসদাইর ও পিলকুনি এলাকায় পৃথক দুটি ঘটনায় দু’জন চালককে নির্মম ভাবে কুপিয়ে হত্যার পর অটো ছিনতাইয়ের রেশ না কাটতেই গত পরশু এক রাতেই নারায়ণগঞ্জের দুই উপজেলায় ঘটেছে দুটি খুনের ঘটনা। একটি সদর উপজেলার বক্তাবলি এবং অপরটি আড়াইহাজার উপজেলার  মনোহরদী গ্রামে।

 

এর মধ্যে ফতুল্লার বক্তাবলিতে রবিন নামে এক চালককে শ্বাস রোধে হত্যা করে ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা ছিনিয়ে নেয়া হয়। যদিও পুলিশ বলছে, ওই ঘটনার সাথে নির্দিষ্ট কোন ছিনতাইকারী চক্র জড়িত নয়; তার বন্ধুই রিক্সা বিক্রি করাকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। এদিকে, বক্তাবলির ঘটনা ছিনতাইকারী চক্রের দ্বারা না হলেও ছিনতাইকারী চক্র যে কতটা তৎপর, তার আরো একটি প্রমান মিলেছে গত পরশু আড়াইহাজার উপজেলায়।

 

থানা সূত্রে জানা গেছে, রাত ১০টার দিকে একদল ছিনতাইকারী সিএনজি যোগে উপজেলার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের এলাকায় এসে আশেকে মোস্তফা নামে এক শ্রমিককে নির্মম ভাবে কুপিয়ে খুনের পর তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এভাবেই জেলাজুড়ে একেরপর এক ছিনতাই ও খুনের ঘটনায় আতঙ্কে আছে বাসিন্দারা। তথ্য বলছে, চলতি বছর নারায়ণগঞ্জে কেবল ইজিবাইক বা মিশুক ছিনতাইকে কেন্দ্র করে ৬টি খুনের ঘটনা ঘটে। এছাড়া, প্রায় সময়ই চালককে আহত করে এবং অচেতন করেও ছিনিয়ে নিচ্ছে অটো রিক্সা।

 

পুলিশ বলছে, এসব ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারও করা হচ্ছে। তবে, হত্যাকান্ডের পর জড়িতরা গ্রেফতার ও অটো উদ্ধার হলেও থেমে নেই খুন ও ছিনতাইয়ের ঘটনা। যদিও, ইসদাইরে চালককে হত্যা করে অটো ছিনতাইয়ের পর পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি করেছিলেন, ‘অটো ছিনতাই চক্রের মুল হোতাসহ তার সহযোগিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপরও গতকাল বক্তাবলি এলাকায় অটো চালককে খুনের পর অটো ছিনতাইয়ের ঘটনা পুলিশের সেই দাবীকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। সূত্র বলছে, রাতের আঁধারে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠা এসব ছিনতাইকারীদের সাথে অসাধু কিছু গ্যারেজ মালিকদের সম্পর্ক রয়েছে। গ্যারেজ মালিকরা জেনে বুঝেই এসকল ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া অটো রিক্সা ক্রয়ের পর রং পরিবর্তন করে চালিয়ে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে ছিনতাইকারী চক্রের সাথে জড়িত আছে অসাধু গ্যারেজ মালিকরাও। জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমও বলছেন একই কথা।

 

গত ৩ জুলাই দৈনিক যুগের চিন্তাকে দেয়া এক স্বাক্ষাৎকারে পুলিশ সুপার বলেছিলেন, ‘অটোগুলো ছিনতাইয়ের পর গ্যারেজ মালিককে দেয়া হতো। সেই গ্যারেজ মালিককে আমরা সনাক্ত করতে পেরেছি। আশাকরি আজ (৩ জুলাই) রাতেই বেশকিছু অটোসহ তাকে গ্রেফতার করতে পারবো। কাল (৪ জুলাই) সকালের মধ্যেই প্রেস কনফারেন্স করে ভালো খবর দিতে পারবো। চোরাই অটো কেনার নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বড় যেই গ্যারেজ মালিক, তাকেই আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরতে পারবো।’ গত ৩ জুলাই রাতে জেলা পুলিশ সুপার এই প্রত্যয় ব্যক্ত করার পর গত কয়েকদিন পূর্বে ফতুল্লায় বেশকিছু ইজিবাইক ও মিশুকসহ এক গ্যারেজ মালিককে গ্রেফতার করে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। তবে, জেলাজুড়ে সক্রিয় থাকা অটোছিনতাই চক্রের সাথে কেবল ফতুল্লার ওই একজন গ্যারেজ মালিকই জড়িত? এমন প্রশ্ন উঠলেও পরবর্তীতে ওই চক্রের সাথে জড়িত অন্যকোন গ্যারেজ মালিককে সনাক্ত করার কথা জানাতে পারেনি পুলিশ।

 

এদিকে, গতকাল ফতুল্লার বক্তাবলী ও গত পরশু আড়াইহাজারের মনোহরদী এলাকায় পৃথক দু’টি খুনের ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘বক্তাবলিতে যেই ঘটনা ঘটেছে, এটার সাথে অটোছিনতাই চক্রের কোন যোগসাজস নেই। এই হত্যাকান্ড তার বন্ধু ঘটিয়েছে। ইতিমধ্যেই তাকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।’ আড়াইহাজারের ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার বলেন, ছিনতাইয়ের এসব ঘটনা কেবল নারায়ণগঞ্জেই নয়, সারা বাংলাদেশেই ঘটছে। আড়াইহাজারের ঘটনাটা হচ্ছে রাতে রাস্তার নির্জন স্থানে দাঁড়িয়ে মোবাইল চালাচ্ছিল। এসময় ছিনতাইকারীরা এসে তার মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার সময় চাকু দিয়ে আঘাত করে এবং পরবর্তীতে সে মারা যায়।’

 

লকডাউনের কারণে মানুষের চলাচল কম হওয়ায় এই ধরনের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে কিনা- ‘এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অপরাধী যখন সুযোগ পাবে, তখন অপরাধ করবেই। কারণ রাত ১০টার সময়ে গ্রামের ভিতরের রাস্তায় বসে ছিলো। মানুষকে সচেতন হতে হবে। অপ্রয়োজনে ঘোরাফেরা করা যাবে না। গভীর রাতে অটো নিয়ে নির্জন স্থানে চলাচল করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অসচেতনতার কারণে এগুলো ঘটছে। আমরা প্রতিনিয়তই মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। নির্দেশনা দিচ্ছি। কিন্তু মানুষ এগুলো শোনে না।’ সড়কে টহল ব্যবস্থাপনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারের উন্নয়ন মূখর কর্মকান্ডের কারণে প্রতিটি গ্রাম গঞ্জের পাড়া-মহল্লার অলিগলি সড়ক এখন সড়ক হয়ে গেছে। এতো সড়কে টহল ব্যবস্থা ১০০ ভাগ নিশ্চিত করাটা কঠিন।

 

এক্ষেত্রে আমি মনে করি, লোকাল জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেককে নিজের অবস্থান থেকে সহযোগিতা করতে হবে। প্রতিটি সড়ক এবং বাসা বাড়ির সামনে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। এলাকায় চৌকিদারি ব্যবস্থা চালু রাখা। এই ধরনের সিকিউরিটি ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হলে এগুলো কমে আসবে। এগুলো বাস্তবায়নের জন্য জনপ্রতিনিধিদের কাছে আহবান জানাচ্ছি। সচেতন মহল বলছেন, চলমান লকডাউনের মধ্যে রাতে শহর বা শহরতলীর দোকানগুলো বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের চলাচল থাকে তুলনামূলক কম। চারিদিকে থাকে সুনসান নিরবতা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল ব্যবস্থাও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল থাকায় রাত যত গভীর হয়, ততই খোলশ মুক্ত হয় অপরাধিরা। এক্ষেত্রে রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল কার্যক্রম আরো জোড়ালো করার দাবি জানিয়েছেন নগরবাসী।