শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১   ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

“চ্যালেঞ্জে পড়বেন দুই এমপি, সহজে জিতবেন আইভী”

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৯:১৫ পিএম, ১৫ জুলাই ২০২১ বৃহস্পতিবার

নারায়ণগঞ্জে যদি ভোট হয় আর সেই ভোটে অবাধে জনগণ অংশগ্রহণ করতে পারেন তাহলে বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন দুই ওসমান এমপি। অনেকে মনে করেন আগামী নির্বাচন যদি অংশগ্রহণমূলক হয় এবং অবাধে জনগণ ভোট দিতে পারেন তাহলে জেতা কঠিন হবে দুই ওসমান এমপির। কিন্তু বিপরীতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী এবারও অনায়াসে জিতে যাবেন।

 

তাকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কোনো প্রার্থী এখনো নারায়ণগঞ্জে নেই। কিন্তু কেনো জনগণের মাঝে দুই ওসমান এমপি আর মেয়র আইভীর এই অবস্থান? এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সঙ্গে আলাপকালে তারা বেশ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেন। তার মাঝে এক নম্বর বিষয়টি হলো সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক। এ বিষয়ে অনেকের পরিষ্কার বক্তব্য হলো ওসমানরা নেতাকর্মী নির্ভর রাজনীতি করেন। তাদের সঙ্গে সরাসরি জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই বললেই চলে। কিন্তু বিপরীতে মেয়র আইভী জনগণ নির্ভর রাজনীতি করেন। তিনি সব সময়ই জনগনকে অধিক গুরুত্ব দেন এবং অবাধে জনগণের সঙ্গে কথা বলেন। ওসমান এমপিদেরকে জনগণ ভয় পায়। কিন্তু মেয়র আইভীকে কেউ ভয় পায় না। ওসমানরা জনগণকে একদম সময় দেন না।

 

তাদের সাথে মুখোমুখী বসে জনগণ কোনো কথা বলতে সাহস পান না। এমনকি জনগণ তাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলার জন্য দুই এমপির কোনো সাক্ষাৎ পান না। কিন্তু বিপরিতে মেয়র আইভী তার কার্যালয়ে এবং বাড়িতে সরাক্ষণই জনগনকে সাক্ষাৎ দেন এবং মন খুলে কথা বলেন। এছাড়া মানুষ কোনো সমস্যা নিয়ে মেয়রের কাছে আসলে তিনি নিজে গিয়ে সেই সমস্যা দেখেন এবং পরে সমাধান করেন। কিন্তু এমপিরা সরেজমিন গিয়ে কখনোই কোনো সমস্যা দেখেন না। তারা তাদের পছন্দের লোকদের কাছ থেকে যা শোনেন তাই করেন।

 

যার ফলে আইভীর এলাকায় ভালো কাজ হলেও সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ফতুল্লা এবং সেলিম ওসমানের বন্দর এবং সদরের ইউনিয়নগুলিতে অনেক সমস্যা বিদ্যমান। বিশেষ করে শামীম ওসমানের ফতুল্লা এলাকাতো অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে এখন একেবারে পানির নিচে ডুবে থাকে। ফলে জনগণের সঙ্গে আইভীর সম্পর্ক নির্ভর হলেও ওসমান এমপিদের সঙ্গে তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। তাই যেকোনো অবাধ ও সুষ্টু নির্বাচনে জনগণ মেয়র আইভীকে খুশী মনে ভোট দিলেও দুই এমপিকে ভোট দেবেন কিনা সেই প্রশ্ন রয়েছে।

 


এছাড়া নারায়ণগঞ্জ শহরে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ বেশ পূরনো। তবে সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ নেই। কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো তিনি সরাসরি সন্ত্রাসী না পাললেও বেশ কিছু বিতর্কিত ব্যাক্তিকে লালন পালন করেন। তাছাড়া নারায়ণগঞ্জ শহরে সন্ত্রাস দমনে তার কোনো ভূমিকাও নেই। তার নির্বাচনী এলাকায় যে সকল সন্ত্রাসীরা রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে সেলিম ওসমান তেমন কোনো শক্ত অবস্থানও নিচ্ছেন না। এক কথায় ওসমান পরিবারকে অনেকেই এই শহরে সন্ত্রাসীদের লালন পালন এবং নতুন নতুন সন্ত্রাসীর আবাদ করার দায়ে অভিযুক্ত করে থাকেন। তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ বেশ পূরনো।

 

এখনো অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় এই পরিবারের সদস্যদের নামেই প্রভাব বিস্তার করে থাকে সন্ত্রাসীরা। কিন্তু বিপরিতে মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীকে প্রশ্রয় দেয়ার কোনো অভিযোগ নেই। বরং তিনি এই শহরে সকল প্রকারের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে স্বোচ্চার রয়েছেন। মানুষ মনে করেন আইভী না থাকলে নারায়ণগঞ্জ শহরে আরো বহুগুণ বেশি সন্ত্রাস বেড়ে যেতো। আর এ কারনেও মেয়র আইভীকেই আবারও ভোট দিতে চায় মানুষ। এছাড়া ওসমান পরিবার থেকে স্বাধীনতার পর বার বার এমপি হয়েও যে উন্নয়ন করতে পারেননি, আইভী মেয়র হয়ে গত সতেরো বছরে সেই উন্নয়ন করেছেন। আইভী তার এলাকায় পরিকল্পিত উন্নয়ন করেছেন। রাস্তাঘাট আর ড্রেনেজ ব্যাবস্থাকে একেবারে পরিকল্পিতভাবে ঢেলে সাজিয়েছেন মেয়র আইভী। কিন্তু শামীম ওসমান বা সেলিম ওসমানের এলাকায় কোনো পরিকল্পিত ড্রেনেজ সুবিধা গড়ে তোলা হয়নি।

 

এছাড়া মেয়র আইভী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায় অন্তত দশটি মেঘা প্রকল্পের কাজ করেছেন। এসব মেঘা প্রকল্পের মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো শেখ রাসেল পার্ক, বাবুরাইল খাল, সিদ্ধিরগঞ্জ খাল, বিশাল নগরভবনসহ আরো অনেক কিছুই করেছেন আইভী যা কিনা নারায়ণগঞ্জের জনগণের নজর কেড়েছে। মানুষ এসব মেঘা প্রকল্পের সুফল ভোগ করছেন। কিন্তু ওসমান পরিবারের তিন ভাই বার বার এমপি হলেও তারা এই শহরে বা তাদের নির্বাচনী এলাকায় এমন কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন নাই। ফলে এই দিক দিয়েও জনগণের মন কাড়তে সক্ষম হয়েছেন মেয়র আইভী।  তাই আগামী দিনে আবার যদি কখনো ভোটের রাজনীতি ফিরে আসে তাহলে মেয়র আইভী যতোটা সহজে জয়ী হতে পারবেন, ওসমান এমপিরা ততো সহজে জয়ী হতে পারবেন না বলেই নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ মানুষ মনে করেন।