শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১   ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আরো সময় চায় তদন্ত কমিটি

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৫:৫৩ পিএম, ১৬ জুলাই ২০২১ শুক্রবার

 # কোন দপ্তরের গাফলতি থাকলেও ছাড় পাবে না : শামীম বেপারী
 
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ এলাকার হাশেম ফুড এন্ড বেভারেজ কোম্পানীতে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় চার সংস্থার পক্ষ থেকে পৃথক ৪টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও তিনটি কমিটিই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে পারছে না। তারা প্রথম দফায় সময় বাড়িয়ে আবেদন করেছেন নিজ নিজ দপ্তরের প্রধান কর্মকর্তাদের কাছে।

 

অন্যদিকে, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি সময় নিয়েছে ১০ দিনের। যা গত ১২ জুলাই গঠিত হয়। অর্থাৎ ১২ জুলাই থেকে নিয়ে পরবর্তী ১০ কার্যদিবস পর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি। এদিকে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা না দিতে পাড়া তিনটি কমিটির মধ্যে রয়েছে, জেলা প্রশাসন, কল কারখানা অধিদপ্তর এবং ফায়ার সার্ভিস। জানা গেছে, গত ৮ জুলাই রূপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকার হাশেম ফুড এন্ড বেভারেজ কোম্পানীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

 

এতে ওই কারখানার ৫২ জন শ্রমিক আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণ করেন। ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ড ও হতাহতের ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় পুলিশ বাদি হয়ে মামলা দায়ের করলেও রহস্য উদ্ঘাটনে ৪টি সরকারি প্রতিষ্ঠান পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এর মধ্যে অগ্নিকান্ডের পরদিন অর্থাৎ গত ৯ জুলাই তদন্ত কমিটি গঠন করেন জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস এবং কলকারখানা অধিদপ্তর এবং ১২ জুলাই তদন্ত কমিটি গঠন করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শামীম ব্যাপারীকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। এই কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো।

 

একইদিন (৯ জুলাই) ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের গঠিত তদন্ত কমিটিকেও ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিলো। একই ভাবে কলকারখানা অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক (নিরাপত্তা) প্রকৌশলী ফরিদ আহমেদকে প্রধান করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে কলকারখানা অধিদপ্তর। এই কমিটি প্রতিবেদন জমা দিতে সময় নিয়েছিলো পাঁচ কার্যদিবসের। তবে, নির্দিষ্ট সময়ে পেড়িয়ে গেলেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি কোন কমিটিই।

 

জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম বেপারী দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, আমরা তদন্ত কমিটির সকলে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। কয়েক জনের মতামত পেয়েছি। আমাদের তদন্ত কার্যক্রম চলমান আছে। প্রায় সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন শুধু চেক এন্ড ব্যালেন্স করে আগামী রবিবার আমরা আবার বসবো। তারপর দেখি কি করা যায়। আশা করছি দ্রæত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিয়ে দেব। তদন্ত কার্যক্রম চলমান থাকায় এখন কিছু বলা যাচ্ছে না।

 

কলকারখানা অধিদপ্তর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান এবং অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক (নিরাপত্তা) প্রকৌশলী ফরিদ আহমেদ দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘আমাদের কমিটির দুই সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন করা যাচ্ছে না। আমরা আরো এক সপ্তাহ সময় চেয়েছি। আশা করছি, পরবর্তী সময়ের মধ্যে আমাদের তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন হবে এবং প্রতিবেদন জমা দিতে পারবো।’ এদিকে, ফায়ার সার্ভিস গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান লে. কর্নেল জিল্লুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই তার পক্ষ থেকে বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

 

তবে, ফায়ার সার্ভিসের একাধিক সূত্র দৈনিক যুগের চিন্তাকে জানিয়েছে, সাত দিনের সময় নিলেও তাদের তদন্ত প্রতিবেদনের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে মধ্যে শেষ হয়নি। এখনো তদন্ত কার্যক্রম চলমান আছে। তারাও সময় বাড়িয়ে নেবেন বলে ফায়ার সার্ভিসের একটি সূত্র দৈনিক যুগের চিন্তাকে নিশ্চিত করেছেন। জানা গেছে, গত ৮ জুলাই রূপগঞ্জ ট্র্যাজেডিতে ৫২ জনের প্রাণহানীর ঘটনা দাগ কেটেছে দেশবাসির হৃদয়ে। মর্মান্তিক এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট কয়েকটি দপ্তর নিয়ে। রূপগঞ্জের ওই প্রতিষ্ঠানটির ফায়ার সেফটি ব্যবস্থা পর্যাপ্ত ছিলো না।  

 

পর্যাপ্ত সেফটি ব্যবস্থা না থাকা সত্বেও রহস্যজনক ভাবে ওই প্রতিষ্ঠানে রয়েছে বিস্ফোরক ও ফায়ার সেফটির সনদপত্র! কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও দিয়েছে সনদপত্র। বছর বছর তা নবায়নও হচ্ছে!  শুধু কী তাই? ওই ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোডও মানা হয়নি বলে ঘটনাস্থলে যাওয়া ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তরা জানিয়েছেন। অদৃশ্য কারণে সেদিকে নজর দেয়নি রাজউক। অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা, ফায়ার এক্সিট বা ইমারজেন্সি এক্সিট ব্যবস্থা না থাকা এবং বিল্ডিং কোড না মেনেও কোন পন্থায় মিলেছে সনদপত্র? বা তদন্তে এই বিষয় মাথায় রাখা হবে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম বেপারী দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, আমাদের কমিটিতে এই দপ্তরগুলোর অফিসাররাও আছেন। আমরা তাদের বক্তব্য লিখিত ভাবে নিচ্ছি যে, তারা কেন সনদপত্র দিয়েছে বা কিভাবে দিয়েছে। যেহেতু তদন্ত কার্যক্রম চলমান আছে, তাই নীতিমালা অনুযায়ী এই মুহুর্তে এর চেয়ে বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে, যদি কোন ডিপার্টম্যান্টের গাফলতি থাকে, তাহলে তা আমাদের প্রতিবেদনে উঠে আসবে। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন যে, এই ঘটনার পেছনে কারো যদি দায়িত্ব অবহেলা থেকে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।