শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১   ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

বাদীর দাবি মামলা করেননি, পুলিশ বলে করেছেন

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৯:৪৫ পিএম, ১৬ জুলাই ২০২১ শুক্রবার

# মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাদ, আপোষ-মিমাংসায় ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে, সাদা পৃষ্ঠায় স্বাক্ষর রেখেছে পুলিশ

 

মামলার বাদী হিসেবে যাকে দেখানো হয়েছে তিনি বলছেন মামলা তিনি করেননি। অথচ পুলিশের দাবি তিনজনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আবার দুর্ঘটনাজনিত কারণে মৃত্যুর ঘটনায় আসামী করা হয়নি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এবং সত্ত্বধিকারীকে। উল্টো মূল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে এড়িয়ে ভিন্ন ভিন্ন ঠিকাদারকে বেঁছে বেঁছে আসামী করার অভিযোগ উঠেছে বন্দর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।

 

সূত্র জানিয়েছে, গত ১৩ জুলাই দুপুরে বন্দরের উত্তর লক্ষণখোলায় সিটি করপোরেশনের ড্রেন নির্মাণের সময় একটি স্কুলের দেয়াল ধসে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এতে আহত হন আরেক শ্রমিক। দীপা কনস্ট্রাকশনের সত্ত্বাধীকারী রাসেলের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অধীন কাজ করতো। কিন্তু মূল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভূক্ত না করে অন্য তিনজনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে বন্দর থানায় (নং-২০, তারিখ ১৪/৭/২১)।

 

এদিকে মামলার বাদী হিসেবে যাকে দেখানো হয়েছে সেই আলতাফ হোসেনের দাবি, তিনি কারো নামেই অভিযোগ কিংবা মামলা দায়ের করেননি। এছাড়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দীপা কনস্ট্রাকশনের সাথে তার ক্ষতিপূরণ বিষয়ক আপোষ মিমাংসা করেছেন। আলতাফ হোসেনের বাড়ি গাইবান্দার বালাহাটা গোবিন্দপুর নেকিরভিটা। তিনি  বন্দরের একরামপুর ইস্পাহানী বাজার মাষ্টারনীর বাড়ির ভাড়াটিয়া। মামলায় বিবাদী করা হয়েছে শুক্কুর প্রধান, সাখাওয়াত হোসেন এবং আকিলকে।

 

এছাড়া অজ্ঞাত আরো ২/৩ জন কন্ট্রাকটরকে আসামী করা হয়েছে।আলতাফ হোসেনের স্বাক্ষরিত বন্দর থানায় দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত ১৩ জুলাই ২০২১ দুপুর দেড়টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৫নং ওয়ার্ডে  ৪২নং উত্তর লক্ষণখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে সিটি করপোরেশনের ড্রেনের কাজ করার সময় স্কুলের দেয়াল ভেঙে আলতাফ হোসেন স্ত্রী দুলালী বেগম (৩৫), আলতাফের নিকটাত্মীয় ভাতিজী জামাই মো.টুকু মিয়া ওরফে হৃদয় (৩২) এবং পারভীন সুলতানা (২৭ মারাত্মক জখমপ্রাপ্ত হন। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার আশতাফের স্ত্রী দুলালী বেগম ও তার ভাতিজী জামাইকে মৃত ঘোষণা করে। চিকৎসাধীন অবস্থায় আছেন পারভীন সুলতানা। মামলার এজহারে আলতাফের বরাত দিয়ে উল্লেখ আছে, যাদের মামলায় বিবাদী করা হয়েছে তাদের অবহেলা ও গাফলতির কারণে এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে।  

 


মামলার বাদী আলতাফ হোসেন (৪৫) দাবি করেন, তিনি থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করেননি। স্ত্রীর লাশ দাফনের জন্য বর্তমানে গাইবান্দাতে থাকা আলতাফ বলেন, আমিসহ আমার স্ত্রী গত চার-পাঁচবছর যাবৎ রাসেলের মালিকাধীন দীপা কন্সট্রাকশনের কাজ করছি। দেয়াল ধসে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে তাতে আমার স্ত্রী ও আমার ভাতিজী জামাই মারা যান। যেহুতু এটি একটি দুর্ঘটনা তাই আমি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করিনি। তাছাড়া দীপা কন্সট্রাকশনের সত্ত¡াধিকারী রাসেলের সাথে আমার ঘটনার পরপরই আপোষ মিমাংসা হয়েছে। আপোষে লাশ দাফন বাবদ যতটাকা লাগে তা দিবেন। লাশ দাফনের জন্য নগদ ১ লাখ টাকা দিয়েছেন সেই প্রতিষ্ঠানের মালিক। যিনি হাসপাতালে রয়েছেন সেখানে তারও সব খরচ দিচ্ছেন তারা। আমার একটি মেয়ে বিবাহযোগ্য, আরেকটি মেয়েও ছোট, ছেলেটাও ছোট তাদের ব্যাপারেও সহযোগিতার কথা আপোষনামায় আমি বলেছি, তারাও বলেছে আমাকে সহযোগিতা করবে।  যেহুতু দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে আমি কেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবো। 

 


আলতাফ হোসেন বলেন, আমাকে পুলিশ মামলা দিতে বললে আমি বলেছি এটা দুর্ঘটনায় হয়ে গেছে। এই ক্ষতি অপূরণীয়। লিখিতভাবে দীপা কনস্ট্রাকশন আমাদের ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। আমি মামলা করিনি। আমি মুর্খ মানুষ। আমাকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখেছে পুলিশ। বলেছে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিলে তো কোন সমস্যা নেই। আমি কারো নামে মামলা করিনি, আমি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগও করিনি। 

 


মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) শহীদুল আলম বলেন,  ‘মামলা দিয়েছে বাদী, এজহার দিয়েছে বাদী, অফিসার ইনচার্জ মামলা রেকর্ড করেছেন। আমাকে আইও নিযুক্ত করেছে আমাকে। মামলায় কাদের আসামী করা হয়েছে এটা আমার জানার কথা না। আমি রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করছি। মামলা রুজু হওয়ার আগের বিষয় সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারবোনা। ঠিকারদারী প্রতিষ্ঠান দীপা কন্সট্রাকশনের সত্ত্বাধিকারীকে কেনই বা এ মামলায় আসামী করা হলোনা সেটিও বলতে পারছিনা। আমাকে যেভাবে মামলা দেয়া হয়েছে সে অবস্থা থেকেই আমি তদন্ত করছি। পেছনে কি হয়েছে সেটি আমি জানিনা।’ 

 

এব্যপারে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘দেয়াল ধসে দুইজনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। টেকনিক্যাল কারণে মামলার আসামিদের সুনির্দিষ্ট করে নাম বলা যাচ্ছেনা। তিনজন মামলায় এজহারনামীয় আসামী। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে।’ আপোষ মিমাংসার বিষয়টি তিনি জানেননা বলে মন্তব্য করেন।