শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১   ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

প্রতারণা করে স্বামীর কিডনী বিক্রি, পরে তালাক

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৪:৫১ পিএম, ২০ জুলাই ২০২১ মঙ্গলবার

# প্রথমে চাকুরীর কথা বলে ভারতে পাঠান স্ত্রীর পরিবার

# তালাকের নাটক করে হাসপাতালে চাকুরী

# সুখের স্বপ্ন দেখিয়ে কিডনী বিক্রিতে রাজি করান শ্বশুর-শ্বাশুড়ি

# কিডনী হস্তান্তরের পর বিক্রির ৫ লাখ টাকা আত্মসাত

 

 কথায় বলে ‘টাকায় কি না হয়’। টাকার লোভ এতই ভয়ানক হয় যে, এ লোভের কারণে কত সংসার কত নাটকীয়তার মাধ্যমে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। টাকার (যৌতুকের) লোভে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের নির্যাতনে কত স্ত্রীকে তালাক দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। কত স্ত্রী টাকার জন্য তার স্বামী, সন্তান ও সংসার ছেড়ে পরকীয়ার মাধ্যমে অন্য পুরুষের হাত ধরে পলিয়ে যাওয়ার খবরও জানা যায়। এমনকি টাকার লোভের কারণে অনেককেই তার প্রিয়জনের হাতে খুনও হতে হয়। কিন্তু তালাক দেয়ার ভয় দেখিয়ে বউ পাগল স্বামীকে চাকরীর উছিলায় ভারতে পাঠিয়ে আবার তালাক দেয়া, এবং সে তালাক প্রত্যাহার করে পুনরায় তালাকের ভয় দেখিয়ে কিডনী বিক্রি করতে বাধ্য করে সেই টাকা অত্মসাৎ করে পুনরায় তালাক প্রদান করার যেন সব ধরণের গল্পকে হার মানায়। এমনই এক অভিনব এবং অমানবিক ঘটনার খবর জানা গেছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সানারপাড় এলাকায়। এ ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলাও দায়ের করেছেন নাসিক ৩নং ওয়ার্ডের সানারপাড় এলাকার নাজাত মঞ্জিলের নুরুন্নবীর ছেলে মাহমুদুল হাসান তাসিন। মামলায় আসামী করা হয়েছে তার স্ত্রী মো.আমির হোসেনের মেয়ে মিমিয়া আক্তার (২১), শ্বাশুড়ি হোসনে আরা (৪৫),  শামীম আহমেদ (৩০), শ্বশুর  মো.আমির হোসেন (৫০) এবং কামাল (৪৫)।

 

মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২০২০ সালের ২৪ জুন মাহমুদুল হাসান তাসিন তার স্ত্রী  মিমিয়া আক্তারসহ আমার শ্বশুর, শাশুড়ির  কু-পরামর্শে আমি আমার শ্বশুরের বাসায় চলিয়া যাই এবং আমরা সেখানে বসবাস শুরু করি। পরবর্তীতে আমার স্বল্প আয়ের উপার্জনে আমার স্ত্রীসহ শ্বশুর শাশুড়ি আমার সংসার চলবে না বলে তাসিনকে ৬ মাসের চুক্তি করে তার শ্বশুরবাড়ির পরিচিত আসামি কামালের সাথে ভারতে যেয়ে চাকুরী করিতে বলে। তাসিন প্রথমে তাদের কথায় রাজি না হইলে তার স্ত্রী রাগ করলে অবশেষে তাসিন যেতে রাজি হন। পরে কামালের সাথে তাসিন শ্বশুর বাড়ি থেকে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

 

 ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর বেলা সাড়ে বারটায় ভারতে প্রবেশ করেন এবং একজন ভারতীয় নাগরিক তাকে ভারতে রিসিভ করে কামালকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানায়। অতঃপর সেখান থেকে তাসিন কলকাতা বিমান বন্দর থেকে বিমান যোগে দিল্লি নিয়ে যায় এবং দিল্লির শাহীনবাগ এপোলো হাসপাতালে আমাকে কাজে লাগিয়ে দেয়। পরবর্তীতে তাসিন তার স্ত্রী মিমিকে গত ২৬ নভেম্বর ফোন করে জানায়  গত ২৫ নভেম্বর তাসিনকে তালাক দিয়েছে তার স্ত্রী। তাসিন যেন তার স্ত্রী মিমিয়ার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ না করে। তাসিন তাকে বারবার ফোন করিলেও তাসিনের স্ত্রী তার ফোন রিসিভ করে না। প্রায় ১ মাস পর বেতন পেয়ে ফোন কিনে তাসিনের মাকে ফোন করিয়া জানিতে পারি যে, তাসিনের স্ত্রী মিমিয়া তাকে তালাক দিয়েছে।

 

 ইতিমধ্যে তাসিনকে বিভিন্ন স্থানে খুঁজে না পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় জিডি এন্ট্রি করে (জিডি নং-৩৮, তারিখ ০১/১২/২০২০) তার মা । এরপর তাসিনের স্ত্রী মিমিয়াকে তিনি ফোন করিলে সে তাকে জানায় যদি তাসিনের মাজিডি প্রত্যাহার করে তবে তার স্ত্রী মিমিয়া  তালাক প্রত্যাহার করিবে। পরবর্তীতে তাসিনের স্ত্রী গত ৭ ফেব্রুয়ারি তালাক প্রত্যাহার করে। পরবর্তীতে তাসিন তার স্ত্রী মিমিয়াকে ০১৮২৬-৩৬১৬৯২, ০১৭১৭-৬২৮১৭৪ নং বিকাশ নম্বরে প্রায় ১ লাখ টাকা ভারত হতে পাঠাই। 

 

এর কিছুদিন পর তাসিন বাংলাদেশে আসবে বললে তার স্ত্রী তাকে জানায় , যেই কামালের সাথে তার স্ত্রীর পরিবার তাকে ভারতে পাঠিয়েছে তার কাছে কয়েকজন কিডনী রোগী আছে এবং তাদের কিডনীর সাথে ম্যাচ করিলে যদি আমার কিডনী বিক্রি করি তাহলে কিডনী বিক্রির ৫ লাখ টাকা দিয়ে আমরা পরবর্তীতে সুখে শান্তিতে সংসার করিতে পারবো। আমার স্ত্রীর এসব কথায় রাজি না হলে তার শ্বশুর, শ্বাশুড়িসহ অন্যান্য আসামিরা  তাসিনকে জানায় যে, তাসিন যদি কিডনী বিক্রি না করে তাহলে তার স্ত্রী মিমি আমাকে তালাক দিয়ে দিবে।  এভাবেই তারা তাসিনকে ব্ল্যাকমেইলিং করতে থাকে। পরবর্তীতে তাসিন অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমার সংসারের কথা চিন্তা করিয়া তাদের কথায় রাজি হন এবং প্রায় ৩ মাস অপেক্ষার পরে আমার কিডনী গ্রুপের রোগী পাওয়া গেলে চলতি বছরের গত ৭ জুন বেলা ২টায় এপোলো হাসপাতাল, নয়ডা-তে অপারেশনের মাধ্যমে তাসিনের কিডনী হস্তান্তর করেন। পরে কিডনী বিক্রির টাকা তাসিনের স্ত্রী, শ্বশুর-শ্বাশুড়ির মাধ্যমে বাংলাদেশে লেনদেন করে তাসিনকে জানায় যে, তারা টাকা পেয়ে গেছে এবং তাদের কাছে জমা আছে।  তারা বলেন, এরপর তারা তাসিনকে দ্রুত বাংলাদেশে আসতে বলে। 

 

পরবর্তীতে আমি ২৪ জুন সকাল ১১ টায় আখাউড়র বর্ডার দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন।  ব্রাহ্মনবাড়িয়া হোটেল তাজ গ্রান্ড এ কোয়রেন্টাইন করি। এবং সেখানে থাকা অবস্থায় তার স্ত্রী মিমিয়াকে ফোন করিলে তাসিন  জানতে পারেন, তার স্ত্রী মিমিয়া তাকে পুনরায় তালাক প্রদান করিয়াছে। কোয়ারেন্টাইন শেষ করিয়া গত ৮ জুলাই আমি আমার বাড়িতে ফিরে আসি। তার স্ত্রী, শ্বশুর-শ্বাশুড়ি প্রতারণার মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের জন্য আমাকে মানসিক চাপ দিয়া কৌশলে ২০২০ এর ২৪ নভেম্বর বেলা সাড়ে বারোটায় ভারতে আমাকে পাচার করিয়া প্রতারণার আশ্রয় নিয়া আমাকে প্রলুব্ধ করিয়া আমার শরীর হইতে কিডনী হস্তান্তর করে তাদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাংলাদেশে অবস্থান করিয়া ৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। এরপরপরই তিনি এই মামলা দায়ের করেন।

 

 এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ পরিদর্শক ফয়সাল আলম যুগের চিন্তাকে জানান, এই ঘটনায় ভূক্তভোগীর শ্বশুর আমীর হোসেন ও শামীম আহমেদ নামের আরো এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা মানব পাচারের ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে যা যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। এ ঘটনা সংশ্লিষ্ট অন্যদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে।