শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১   ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

‘কাউয়া’ খুঁজছে আওয়ামী লীগ

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:০৫ পিএম, ৩১ জুলাই ২০২১ শনিবার

# সকল কমিটিতে হাইব্রীডদের ব্যাপারে তথ্য নেয়া হচ্ছে


# জেলা ও মহানগরে বেনামী সংগঠনগুলোর নেতাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে


# অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিদের ব্যাপারে আরো খোঁজ-খবর নেয়া হবে : আবদুল হাই


# কাউয়া-ব্যাঙদের লাগাম টানতে না পারলে বদনাম হবে : আনোয়ার হোসেন



নানা সংগঠনের সকল কমিটিতে অনুপ্রবেশকার হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ‘কাউয়াদের’ খুঁজতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। গত দুইবছর যাবৎ নানা অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগে ‘কাউয়া’- হাইব্রিড ঢুকেছে বলে নানা বক্তব্যে বলে আসছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

 

নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনও অবিরত নানা অনুষ্ঠানে ‘কাউয়া’- ব্যাঙ বলে অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে সচেতন করে আসছেন। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনের বাইরে অন্তত ৭৩টি  ভুইফোড় সংগঠন সামনে এসেছে। এমনকি নারায়ণগঞ্জে গেল দুই বছরের বিভিন্ন উপজেলা কমিটি এবং প্রস্তাবিত কমিটির মধ্যে অনুপ্রবেশ করেছে ওবায়দুল কাদের কথিত ‘কাউয়ারা’ অভিযোগ ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতাদের।

 

সূত্র জানিয়েছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদর, বন্দর, ফতুল্লা, সোনারগাঁ, আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জ থানা কমিটি নিয়ে প্রতিটিতে নানা অভিযোগ রয়েছে। অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছ রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার থানা আওয়ামী লীগের কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমেও হলেও এরপর খেই হারায় জেলা আওয়ামী লীগ। সোনারগাঁয়ে আহবায়ক কমিটি নিয়ে দুই বছরের নাটকে জল গড়িয়েছে অনেক দূর। সেখানেও সর্বশেষ দেয়া আহবায়ক কমিটি নিয়ে রয়েছে বিপত্তি। মহানগর আওয়ামী লীগের নেতায় নেতায় অনৈক্যে এই কমিটির অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতাদেরও দেখা গেছে বিভিন্ন ভুইভোড় কমিটির অনুষ্ঠানে। এমনকি দীর্ঘদিনের কমিটিতে এখন পর্যন্ত  ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কোন কমিটিই করা যায়নি।

 

যার ফলে মহানগর এলাকর সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর ও শহরে নানা ভুইভোড় সংগঠন ও বেনামধারী আওয়ামী লীগ নেতার উত্থান ঘটেছে। অবশ্য আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযানের পরও কিছুটা সংযত নেতৃবৃন্দ। সম্প্রতি জেলা আওয়ামীয় লীগের কাছে সদর আওয়ামী লীগের কমিটিতে প্রস্তাবনার করা নানা ব্যক্তির নামে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেছে তৃণমূল। সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ততা নেই, জামাত-বিএনপি থেকে আগত ও সর্বসাকুল্যে এই প্রথম আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য হয়েছে এমন লোকজনকে সদর থানা আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাইয়ে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে একটি পক্ষ। এসংক্রান্ত একটি অভিযোগপত্রও জেলা আওয়ামী লীগ বরাবর দেওয়া হয়েছে।

 

সূত্র জানায়, গোগনগর ইউনিয়নে সদর থানা আওয়ামী লীগের কমিটিতে নাম প্রস্তাব করা হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজির উদ্দিন আহমেদ, তার দুই পুত্র আবু সাঈদ শিপলু এবং আরিফ হোসেন বিপলুর। কিন্তু এই পরিবার কখনোই আওয়ামী লীগ কিংবা সহযোগী সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলনা। এই ই্উনিয়নে চেয়ারম্যান মনোনয়ন প্রত্যাশী ফজর আলীও এই প্রথম আওয়ামী লীগের সদস্য হয়েছে। একই অবস্থা এসএম মোসলেহ উদ্দিনের। অভিযোগ আছে, তিনি চাকুরী জীবনে সিবিএ’র বিএনপির রাজনীতি করতেন। আওয়ামী লীগ না করেও সানু মিয়া মাতবর ও তার ছেলে মিয়া সোহেল সদর থানা আওয়ামী লীগে স্থান পেতে লাইন ধরেছেন। আনিছুর রহমান ও মাহবুবুর রহমান পাপ্পু আপন দুই ভাইও এই প্রথম আওয়ামী লীগের সদস্য হয়েছেন। তারা এখন সদর থানা আওয়ামী লীগের পদ চাচ্ছেন। মোস্তফা কামাল, গাজী কামাল, আপন দুই ভাই মো.আতাউর রহমান রতন ও মো.সাঈদ রহমান জীবনে প্রথম আওয়ামী লীগের সদস্য হয়েই সদর থানা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ চাইছেন। নৌকা প্রার্থীর বিপক্ষে গিয়ে নির্বাচন করা বশির শিকদারও চান ভালো পদ। এরকম আরো কিছু বিতর্কিত নাম প্রস্তাব করা হয়েছে গোগনগর ইউনিয়ন থেকে।

 

সূত্র জানায়, আলীরটেকের সায়েম আহমেদ এই প্রথম আওয়ামী লীগের সদস্য হয়েছে। উদ্দেশ্য সামনের ইউপি নির্বাচনে নৌকার মার্কা পাওয়া। এই ইউনিয়নের সুলতানা কখনো আওয়ামী লীগ না করেও চান সদর থানা আওয়ামী লীগের পোষ্ট। সদর থানা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অনুমোদনের জন্য যে সকল ব্যক্তিদের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে তাদের অনেকেই বিএনপি জামাত থেকে আসা। সেই সাথে দলের কর্মকান্ডের সাথে জরিত নয়। গোগনগর ইউনিয়নের ফজল আলী নামে এক ব্যক্তি প্রাথমিক সদস্য হয়েছে। কিন্তু তাকে থানার গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রস্তা আকারে রাখা হয়েছে তিনি এলাকায় বাচ্চু বাহিনী নামে দূধর্ষ ক্যাডার তৈরী করেছে। সেই সাথে কখনো আওয়ামীলীগের সাথে জড়িত ছিলনা। যা নিয়ে ত্যাগী নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে। প্রস্তাবিত কমিটিতে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ হিসেবে উল্লেখ্য করা হয়, একই পরিবারের ৩ জনের নাম পদে রাখা হয়েছে।

 

মুক্তিযোদ্ধা নাজির উদ্দিন, আবু সাইদ শিপলু, এবং আরিফ হোসেন বিপলু, তারা ৩ জনেই সম্পর্কে পিতা-পুত্র। বিপলু কোন দিনই আওয়ামীলীগের সাথে বা সহযোগি অঙ্গ সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলনা। সানু মিয়া মাতবর ও মিয়া সোহেল  সম্পর্কে পিতা পুত্র, তারা কখনো আওয়ামীলীগের সাথে জড়িত ছিলনা। এই প্রথম তারা প্রাথমিক সদস্য হয়েছে  নিয়ম বহির্ভূত ভাবে তাদের পদ পদবী প্রস্তাব আকারে রাখা হয়েছে। যা দলের স্বার্থের পরিপন্থী। সূূত্র জানিয়েছে, শুধু সদর আওয়ামী লীগ নয়, ফতুল্লা, বন্দর আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ উঠেছে। জেলা আওয়ামী লীগের বন্দরের স্থায়ী বাসিন্দা শীর্ষ স্থানীয় নেতারা অভিযোগ করেছেন, এখানে কাদের আওয়ামী লীগে স্থান দেয়া হয়েছে সেটি তারা জানেননা এমনকি সম্মেলনের কথাও জানেননা। জেলা আওয়ামী লীগের সভাতেও এমন কোন দিন নির্ধারণ করা হয়নি। সেখানকার নেতারা অভিযোগ করেন, মূলত জাতীয়-পার্টি ঘেষা অনেক নেতাদের আওয়ামী লীগার বানাতেই এমন কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে।

 


সোনারগাঁয়ের আহবায়ক কমিটি নানা বাধাবিপত্তির মুখেও চলেছে। সেখানেও অনুপ্রবেশকারী রয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় নেতারা। তারা বলেন, জাতীয় পার্টির প্রেসক্রিপশনে সেই কমিটিতে অনেক কিছু করার চেষ্টা করা হয়েছে। তারা বলেন, সেখানে কয়েকজন ব্যক্তি রয়েছে যারা জাতীয় পার্টির এমপিকে সমর্থন দিয়ে মন জয় করার চেষ্টা করেছে। হেফাজতের মামুনুল হক কাণ্ডের পর সেটি আরো প্রকাশ্যে এসেছে। এরপর থেকে সোনারগাঁয়ের চিহ্নিত হাইব্রীড নেতারা চুপসে গেছেন। আহবায়ক কমিটির এক নেতাকে নিয়ে ঘোর আপত্তি রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাইয়ের। সোনারগাঁয়ের বারদী ইউনিয়নের গোলাপাড়া গ্রামের সালাউদ্দিনের তিন ছেলে তিনদলের রাজনীতি করেন। ওই পরিবারের সদস্য লায়ন বাবুল সদ্য সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটিতে সদস্য পদে স্থান পেয়েছেন। নৌকা প্রতীকে এবার বারদী ইউনিয়নেও তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী।

 

তবে লায়ন বাবুলের বাবা সালাউদ্দিনও এলাকার চিহ্নিত প্রভাবশালী বিএনপি নেতা। লায়ন বাবুলের ভাই জসিম উদ্দিন বিএনপি জামাতের রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। বিএনপির হয়ে সরকার পতনের আন্দোলন করে একাধিক মামলার আসামী হয়েছেন। বিশেষ করে ২০১৩-২০১৪ সালে বিএনপি জামাতের আগুন সন্ত্রাস কর্মকাণ্ডের মামলায় এজহারভুক্ত আসামী তিনি। এছাড়া লায়ন বাবুল নিজেও জাতীয় পার্টি ঘনিষ্ট একজন ব্যক্তি। এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার সাথেও রয়েছে তার গভীর সখ্যতা। কিন্তু এলাকায় আওয়ামী লীগের দাপট থাকায় জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যাওয়ার মনস্থির করেন লায়ন বাবুল। মাধ্যম হিসেবে লায়ন বাবুলের আরেকভাই আমিনুল ইসলামকে বেঁছে নেন তিনি। আমিনুল ইসলাম সাবেক এমপি কায়সার হাসনাতের ঘনিষ্ট। তিনি  আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। এবং গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জহিরুল হকের কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।

 

বারদী ইউনিয়নের এলাকাবাসী জানান, লায়ন বাবুলের পুরো পরিবার সবদলের রাজনীতি ঠিক রেখে নিজেদের আখের গোছান। সম্প্রতি সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটিতে সদস্যপদ বাগিয়ে এনে নিজেদের জাহির করছে তার পরিবার। তারা বলছে, যে কোন দল ক্ষমতায় থাকলে তাদের কোন সমস্যা নেই।  এবার গত বার ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী লায়ন বাবুলের ছোট ভাই আমিনুল ইসলামকে সরিয়ে এবার আসন্ন বারদী ইউনিয়ন পরিষদ নিবার্চনে লায়ন বাবুল নিজেই প্রার্থী হবেন। তাই এই পরিবারটির এমন রাজনৈতিক নাটকীয় ঘটনা ঘটিয়ে তারা নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তির অবস্থান জানান দিচ্ছেন।



এদিকে ফতুল্লা এলাকায় নামে বেনামে অনেকেই আওয়ামী লীগের বদনাম করছে। সূত্র জানিয়েছে, বিসিকের ঝুট সন্ত্রাস হিসেবে পরিচিত রকমত ওরফে কাইল্লা রকমত, যুবলীগের কথিত নেতা আজমত আলী, কুতুবপুরের স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা পরিচয়দানকারী মীর হোসেন মীরু এবং ভূইফোঁড় সংগঠন হিসেবে আলোচনায় আসা মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগের ফতুল্লা থানা কমিটির সদস্য সচিব অহিদুল ইসলাম অহিদ তো রয়েছেন তাদের মতো আরো শ’খানেক নেতা গোটা ফতুল্লা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। যারা থানা আওয়ামী লীগ, মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদেরও তোয়াক্কা করেননা।

 

এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগ নামে সম্প্রতি একটি সংগঠনের জেলার নেতারা মাত্র কয়েকদিন আগে এসপি-ডিসি, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাদের ফুল দিয়ে আলোচনায় আসে। এই সংগঠনের অধিকাংশ নেতাদেরই আওয়ামী লীগের ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ জেলা ও মহানগরের কিছু নেতাও রয়েছে বিতর্কিতদের দলে। নানা ব্যানার পোস্টারে ছেয়ে ফেলে এরা গোটা এলাকা। বাংলাদেশ আওয়ামী তৃণমূল লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক  ও জেলা বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সভাপতি জসিমউদ্দিনের নেতৃত্বেও এমন একটি দল সক্রিয় রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগের নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি খন্দকার মাসুদুর রহমান দীপু, সাধারণ সম্পাদক জহির তালুকদারের নেতৃত্বে  একটি সংগঠন রাতারাতি সক্রিয় হয়ে আওয়ামী লীগার বনে গেছেন। এমন সংগঠন ও সংগঠন ছাড়া আওয়ামী লীগের সংখ্যা অন্তত কয়েক হাজার হবে জেলায় বলে মনে করেন আওয়ামী তৃণমূল।



সূত্র জানায়, এখানেই শেষ নয়, মহানগর আওয়ামী লীগের ২৭টি ওয়ার্ডে নাম ছাড়া আওয়ামী লীগার নেতার অভাব নেই। তাছাড়া যুব লীগ, ছাত্র লীগ কমিটিতে নেই এমন নেতার সঠিক সংখ্যাও জানা নেই। কিশোর গ্যাং-মাদকব্যবসা-ঝুট ব্যবসা-পরিবহন ব্যবসা সহ নানা ব্যবসার সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে এরা নানা ভুইফোড় সংগঠন করে লীগ নাম ব্যবহার করে আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়েছে।  

 

জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘যারা দলকে ব্যবহার করে স্বার্থ আদায় করে, সেই সকল স্বার্থান্বেষী মহলকে ছাড় দেয়া উচিত হবে না। জনগণের দল হলো আওয়ামী লীগ। জনগণের ভালোবাসার জায়গায় যারাই আঘাত আনার চেষ্টা করবে বা যাদের কর্মকান্ডে দলের জনপ্রিয়তা নষ্ট হবে তাদের কাউকেই রেহাই  দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা এই বিষয়গুলো কঠোরভাবে দেখার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।’

 

আনোয়ার হোসেন আরো বলেন, ‘ঠকবাজরা সব সময় ঠকবাজি করে, প্রতারণা করে। প্রতারকদের কাছথেকে আমরাও কখনো কখনো প্রতারণার শিকার হই। এই জন্য আমি মনে করি, এসব থেকে দূরে থাকতে সকলের সহযোগিতা করা উচিত। আমাদের নেতা-কর্মীদেরও আরো সজাগ থাকতে হবে- যাতে স্বার্থান্বেষী মহল আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা ক্ষুন্ন করতে না পারে। সুপারিশকারীদের একটা জবাবদিহিতা রয়েছে। এইগুলো আলোচনা হচ্ছে, এ ধরণের কাজ কারা করে তাও বের হয়ে যায়। আমাদের সকলকেই দায়িত্বশীল হতে হবে। আমরা কাকে সমর্থন করব, তার অতীত কী, তার বর্তমান কী, তার গতিবিধি কী-এ বিষয়গুলো জেনে শুনেই সমর্থন করতে হবে। কাউয়া-ব্যাঙদের লাগাম টানতে না পারলে দলের বদনাম হবে।’



এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘যাদের কারণে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে, যাদের কারণে জননেত্রী শেখ হাসিনার সকল অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, তাদেরকে কোনোভাবেই দলে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া উচিত না। এই ধরনের কেউ থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’


শুধু যে আওয়ামী লীগের চিত্র এটি গত কয়েকবছর যাবৎ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগে তো বটেই এমনকি আওয়ামী পন্থী আইনজীবীদের সংগঠনেও অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে সচেতন করে আসছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য এড.আনিসুর রহমান দীপু। তিনি যুগের চিন্তাকে বলেন, হাইব্রীড-কাউয়ারা সব জায়গাতেই রয়েছে। তাদের কারণে আওয়ামী লীগ নেতারা অতিষ্ঠ। এসব হাইব্রীড-কাউয়ারা প্রথমে বড় মাপের নেতাদের টার্গেট করে, এরপর ছবি তোলে। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এরপর বিভিন্ন ভুইফোড় সংগঠনের মাধ্যমে নানা প্রোগ্রামে টার্গেট করা নেতাদের দাওয়াত করে। তারপর তাদের স্বার্থ হাসিলে মনোযোগী হয়। এদের কারণে ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতারা দূরে সরে যাচ্ছে। আমাদের উচিৎ এখনই  লাগাম টেনে ধরা।

 


উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২২ মার্চ সিলেটে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় ‘কাউয়া’ কারা- এর একটি ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ওই প্রতিনিধি সভায় কাদের বলেছিলেন, ‘প্রচার লীগ, তরুণ লীগ, কর্মজীবী লীগ, ডিজিটাল লীগ, হাইব্রিড লীগ আছে। কথা হাছা, সংগঠনে কাউয়া ঢুকছে। জায়গায় জায়গায় কাউয়া আছে। পেশাহীন পেশাজীবী দরকার নেই।’