শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১   ১২ শাওয়াল ১৪৪৫

ঐক্য ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:৩৫ পিএম, ৩১ জুলাই ২০২১ শনিবার

# নাগিনা যোহার মৃত্যুর পরও ওসমান ভাতৃদ্বয়ের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন আইভী


# সেবার আইভী এগিয়ে আসলেও তা ধরে রাখেনি উত্তর মেরুপন্থীরা



প্রভাব, নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব নিয়ে দুই মেরুতে বিভক্ত নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠন। এই দুই মেরু উত্তর-দক্ষিণ হিসেবে অধিক পরিচিত। উত্তরের মুখপাত্র সাংসদ শামীম ওসমান এবং দক্ষিণে মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী। মেরুকরণের রাজনীতির ফলে আওয়ামী লীগের অভ্যান্তরিণ কোন্দল ঘণিভূত হয়ে উত্তাপ ছড়িয়েছিলো প্রতিনিয়তই। সেই উত্তাপ আপাতত নেই। দুই মেরুতে লেগেছে ঐক্যের বাতাস। তবে, সেই ঐক্য ধরে রাখাটাই এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধামহল।

 


জানা গেছে, গত ২৫ জুলাই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর মা মমতাজ বেগম ইন্তেকাল করেন। মেরুগত রাজনীতির কারণে দুরত্ব থাকলেও সেই দুরত্ব ঘুচিয়ে দেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ সেলিম ওসমান। ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং জানাজায় অংশগ্রহণের পর মেয়র আইভীর বাসায় গিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে শান্তনা দেন। অন্যদিকে, জানাজায় শরিক হতে না পারলেও গত ২৭ জুলাই সাংসদ শামীম ওসমান তার অনুসারী নেতাদের নিয়ে মাসদাইর গোরস্থানে গিয়ে মেয়র আইভীর মায়ের কবর জিয়ারত করেন এবং পরবর্তীতে মেয়র আইভীর বাসায় গিয়ে তার মাথায় হাত রেখে তাকে শান্তনা দেন। শুধু কী তাই? মেয়র আইভীর মায়ের মৃত্যুর চারদিনের দোয়া ও মিলাদেও অংশ নেন শামীম ওসমান ও তার অনুসারী তথা উত্তর বলয়ের নেতারা।

 

ফলে উত্তর-দক্ষিণে বিভক্ত থাকা নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগে দেখা দিয়েছে মিলনের সুবাতাস। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাদের আলোচনাতেও এখন এই প্রসঙ্গই প্রধান্য পাচ্ছে। তবে, ঐক্যের এই পথ সুগম হলেও আদোতে তা ধরে রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কেননা, ঐক্যে ফেরার এই পথ বহু আগেই অবলম্বন করেছিলেন সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। সাংসদ সেলিম ও শামীম ওসমানের মাতা নাগিনা জোহা মৃত্যুর পর একই ভাবে মেয়র আইভীও শত বিরোধ ভুলে তাদের বাড়িতে ছুটে গিয়েছিলেন। শোকাহত ওসমান পরিবারের শোকের অংশিদার হয়েছিলেন মেয়র আইভীও। তখনই নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিভাজন ঘুচিয়ে যাওয়ার জোড়ালো সম্ভাবনা দেখা গিয়েছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়ে উঠেনি। নানা ইস্যুতেই দুরত্ব বাড়াতে দেখা গেছে উত্তর মেরুপন্থিদের। সাংসদ শামীম ওসমান ও তার অনুসারিরা প্রকাশ্যেই মেয়র আইভীর বিরোধীতা করে গেছেন। এমনকি সম্প্রতি মেয়র  আইভীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত সকল ইস্যুর নেপথ্যে উত্তর মেরুর প্রভাবশালী নেতাদের ইন্ধন রয়েছে বলেও দক্ষিন মেরুপন্থি নেতাদের বক্তব্যে শোনা গেছে।

 


তাই বোদ্ধা মহল বলছেন, ইতিপূর্বে শামীম ওসমানের মায়ের মৃত্যুতে মেয়র আইভী তাদের পাশে দাঁড়ানোর পরও যেহেতু ঐক্য ফেরেনি, সেহেতু এবার শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান শোকাহত মেয়র আইভীর পাশে দাঁড়িয়ে ঐক্য ফেরাতে পারেন কিনা- তাই এখন উভয় মেরুর নেতাদের জন্যই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঠ পর্যায়ে নেতারা বলছেন, নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখার এই চ্যালেঞ্জ এখন মেয়র আইভী এবং সাংসদ সেলিম ও শামীম ওসমানের উপর।
এই প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘তাদের মধ্যে যেই সহাবস্থান এখন দেখা যাচ্ছে, তা কতদিন ধরে রাখতে পারে তাই এখন দেখার বিষয়।’

 


যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সাংসদ শামীম ওসমানের মায়ের মৃত্যুর পরও মেয়র আইভী সকল বিভাজন ভুলে গিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।  এখন মেয়র আইভীর মায়ের মৃত্যুর পর সাংসদ সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমানও মেয়র আইভীর পাশে দাঁড়িয়েছেন ঠিক, তবে এই পাশে দাঁড়ানোটা লোক দেখানো না হয়ে যেন মন থেকেই হয়, সেই প্রত্যাশা করি।’

 


মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ-নিজাম বলেন, ‘মেয়র আইভী আপা মা হারিয়েছেন। এই অবস্থায় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে শত দুরত্ব থাকলেও সাংসদ সেলিম ওসমান এবং শামীম ওসমান ভাই তার বাসায় গিয়েছে। খোঁজ খবর নিয়েছে। সারা দেশেই এটা নিয়ে ভালো আলোচনা হচ্ছে। তাই আমি মনেকরি, এটা চলমান রাখার দায়িত্ব যথেষ্ঠ আইভী আপারও আছে। তাদেরকে বড় ভাই হিসেবে, সিনিয়র নেতা হিসেবে আইভী আপা যদি তার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করে, তাহলে আমি মনে করি তাদের মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়ে যেই ভুল বুঝাবুঝি রয়েছে, তা থাকবে না। আসলে সময়ই সব বলে দেবে।’      


ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু মোহাম্মদ শরীফুল হক বলেন, ‘শোকের সময়ে শামীম ওসমান ভাই মেয়র আইভীর বাসায় গিয়ে তার প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে নিজেকে মহানুভব লিডার হিসেবে প্রমান করেছেন। এই ধারাটা যেন অভ্যাহত থাকে, সেই কামনা করছি।’