শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১   ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

লাইসেন্স ছাড়া চলছে হোসিয়ারী ও মিনি কারখানা

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:৪৯ পিএম, ২৬ আগস্ট ২০২১ বৃহস্পতিবার

শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জে গড়ে উঠছে একেরপর এক হোসিয়ারী ও মিনি প্রিন্টিং কারখানা। যা কলকারখানা অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত নয়। অর্থাৎ কলকারখানা অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রেশন বা লাইসেন্স ছাড়াই চলছে হোসিয়ারী ও মিনি প্রিন্টিং কারখানাগুলো। এতে করে, বছরে প্রায় কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

 

এদিকে, নারায়ণগঞ্জে লাইসেন্স বিহীন কত সংখ্যক হোসিয়ারী ও প্রিন্টিং কারখানা রয়েছে সেই তথ্যও নেই কলকারখানা অধিদপ্তরের কাছে। অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক সৌমেন বড়–য়ার ভাষ্যমতে, ‘হোসিয়ারীগুলো লাইসেন্স পাওয়ার মত উপযুক্ত না হওয়ায় আবেদন করলেও লাইসেন্স দেয়া হয় না। আবার অনেকে আবেদনও করেন না। তাছাড়া, লোকবল সংকট থাকায় লাইসেন্স বিহীন প্রতিষ্ঠানের তালিকাও করা যাচ্ছে না।’  কলকারখানা অধিপ্তরের কাছে হোসিয়ারী বা মিনি প্রিন্টিং কারখানাগুলোর সঠিক তালিকা না থাকলেও সূত্র বলছে, কেবল সদর উপজেলাতেই অন্তত ৫ হাজারেরও বেশি হোসিয়ারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। একই সাথে রেজিস্ট্রেশন বিহীন প্রিন্টিং কারখানার সংখ্যা আরো প্রায় ২ হাজারের মত।  

 

প্রাপ্ত তথ্য মতে, কলকারখানা অধিদপ্তর লাইসেন্স ফি নির্ধারন করে থাকেন শ্রমিক সংখ্যার উপর ভিত্তি করে। যা ক্যাটাগরি হিসেবে বিবেচ্য। অ থেকে ক পর্যন্ত ১১ ক্যাটাগরিতে রেজিষ্ট্রেশন ফি ভিন্ন অংকে নির্ধারণ হয়। এর মধ্যে ১-৫০ জন শ্রমিক কাজ করা প্রতিষ্ঠান অ ক্যাটাগরির অন্তর্ভূক্ত। ৫১-১০০ জন শ্রমিক কাজ প্রতিষ্ঠান ই ক্যাটাগরি এবং ১০১-১৫০ জন শ্রমিক কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলো ঈ ক্যাটাগরীর অন্তর্ভূক্ত। অ ক্যাটাগরির রেজিস্ট্রেশন ফি বছরে পাঁচশত টাকা, ই ক্যাটাগরির ফি এক হাজার টাকা এবং ঈ ক্যাটাগরীর ফি বছরে এক হাজার পাঁচশত টাকা। প্রতি ক্যাটাগরীর ফি’র সাথে আরো ১৫ শতাংশ ভ্যাট সংযুক্ত।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর নয়ামাটি ও রিভার ভিউ’র হোসিয়ারীগুলো শ্রমিক সংখ্যায় অ ক্যাটাগরির অন্তর্ভূক্ত হলেও শহর বা শহর তলীতে গড়ে উঠা হোসিয়ারী ও প্রিন্টিং কারখানাগুলোর বেশির ভাগই বি ও সি ক্যাটাগরির মধ্যে পরে। শিল্প অধিদপ্তরের লাইসেন্স বিহীন এই প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে ‘বি’ ক্যাটাগরীতে ধরা হলেও সদর উপজেলায় মোট ৭ হাজার হোসিয়ারী ও প্রিন্টিং কারখানা থেকে বছরে রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে ৭০ লাখ টাকা। এর সাথে যুক্ত ১৫ শতাংশ ভ্যাট বাবদ আরো প্রায় ১০ লাখ টাকা সহ মোট ৮০ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। বন্দর, রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ ও আড়াইহাজার উপজেলা ওই সমিকরণের বাইরে! এসব উপজেলাগুলোর সমষ্টিগত সমিকরণ সদর উপজেলার চেয়েও বেশি হবে বলে ধারণা করছেন বোদ্ধা মহল।

 


জানা গেছে, শহরতলীতে গড়ে উঠা হোসিয়ারী ও প্রিন্টিং কারখানাগুলো সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে। তবে, ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করলেও তা ইউনিয়ন পরিষদের অধিনস্ত সরকারী ট্যাক্স হিসেবে বিবেচ্য। এক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক ট্যাক্সের হিসেব ভিন্ন। সরকার সেই রাজস্ব পেতে চাইলে প্রতিষ্ঠানগুলো আনতে হবে কলকারখানা অধিপ্তরের রেজিস্ট্রেশনের আওতায়। অন্যথায় একই পন্থায় বছরের পর বছর রাজস্ব হারাবে রাষ্ট্র।

 


এই বিষয়ে জানতে চাইলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিপ্তর নারায়ণগঞ্জ জেলার উপ-মহাপরিদর্শক সৌমেন বড়ুয়া দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেছিলেন- ‘নারায়ণগঞ্জের যেই হোসিয়ারী প্রতিষ্ঠান বা মিনি প্রিন্টিং কারখানাগুলো রয়েছে, এগুলো লাইসেন্স পাওয়ার উপযুক্ত নয়। যেমন অবকাঠামোগত দিকসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো লাইসেন্স পাওয়ার অনুপোযোগি। বিশেষ করে শহরের নয়ামাটি ও রিভার ভিউ মার্কেটে বিপুল সংখ্যক হোসিয়ারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওই ভবনগুলো একেবারেই ঝুকিপূর্ন। তাই অনুপোযোগি বা ঝুকিপূর্ন প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমরা লাইসেন্স করে দিতে পারি না। ফলে প্রতিষ্ঠানের মালিকরা ট্রেড লাইসেন্স দিয়েই ব্যবসা পরিচালনা করছে। আমরা অভিযানে গেলেও তারা ট্রেড লাইসেন্সের কাগজ দেখায়।’  

 


এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের লোকবল কম। এরপরও আমি এই জেলার দায়িত্বে আসার পর থেকে কাজ করে যাচ্ছি। গত অর্থ বছরে নয়ামাটি ও রিভার ভিউ মার্কেটের মোট ৪৭টি হোসিয়ারী প্রতিষ্ঠানকে মামলা দিয়েছি। এখনো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে লেবার কোর্টে মামলা দায়েরের কাজ চলছে। সবাইকে সতর্কও করা হচ্ছে। এর বাইরেতো আমাদের করনীয় কিছু নেই। আমাদের মোবাইল কোর্ট করার ব্যবস্থাও নেই।’ কলকারখানা অধিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ বা সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স দেয়াটা সমন্বয়হীনতার অভাব কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটাকে সমন্বয়হীনতা বলবো না, তবে এই বিষয়ে আমাদের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা হচ্ছে। আমাদের লাইসেন্স বা প্রত্যায়নপত্র ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ বা সিটি করপোরেশন যেন ট্রেড লাইসেন্স না দেয়।’