শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১   ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

৫৪৪ দিন পর চিরচেনা রূপে ফিরল শিক্ষার্থীরা

রাকিবুল ইসলাম

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৬:১১ পিএম, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ সোমবার

# ক্লাসে ফিরতে পেরে খুশি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা


# স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে ছিল কড়াকড়ি


# প্রাণচাঞ্চল্য ফিরতে সময় লাগবে আরো কয়েকদিন



দিনের শুরুতে নারায়ণগঞ্জ শহরের অনেক এলাকাতেই দেখা গেছে পথে পথে ছেলেমেয়েরা হেঁটে স্কুল কলেজে যাচ্ছে। আবার কেউ অভিভাবকের সাথে। কেউ সহপাঠীদের সাথে দল বেঁধে। কেউবা একাকী। তাদের পরনে স্কুলপোশাক। পিঠে ব্যাগ।

 

জেলার মাসদাইর অবস্থিত সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ফটক দিয়ে সকাল আটটার কিছু আগে দলে দলে শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করছিল। এসময় অনেককেই জড়ো হয়ে গল্প করতে দেখা গেছে। তাদের চেহারায় ছিল খুশির ঝিলিক, অনেকদিন পর বন্ধু-সহপাঠীদের সাথে দেখা হবার আনন্দ। যা অন্যরকম অনুভূতি প্রকাশ করছে। ৫৪৪ দিন পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলায় ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে এ আনন্দ বিরাজ করছে।

 

এদিকে করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে পুরো শিক্ষাপঞ্জি স্তব্ধ হয়ে গেছে। মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা কমায় প্রায় দেড় বছর পর গতকাল রোববার সারা দেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের মাঝে এক ধরনের আনন্দ বিরাজ করলেও অভিভাবকদের মাঝে আতঙ্ক কাটে নাই। তাদের মাঝে করোনার একটা ভয় রয়ে গেছে। এদিন সকাল থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে স্বশরীরে পাঠদান শুরু হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। তবে একই সঙ্গে করোনার সংক্রমণ ফের বাড়ার শঙ্কায় তাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও রয়েছে।

 


গতকাল নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করছে। তাদের পরনে সেই চিরচেনা স্কুল ড্রেস, কাঁধে বইয়ের ব্যাগ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মুখে মাস্ক পরিধান করে স্কুলে এসেছে তারা। এছাড়াও বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষার্থীদের ফুল, চকলেট, বেলুন দিয়ে স্বাগত জানাতে দেখা গেছে। স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী ভিড় এড়াতে অনেক স্কুলেই অভিভাবকদেরকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। সেই সাথে বিদ্যালয়ের ফটকে ছাত্র ছাত্রীদের তাপ মাত্রা মেপে প্রবেশ করানো হচ্ছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থী হাত ধুয়ে স্যানিটাইজার ব্যবহার করে শ্রেনী কক্ষে গিয়ে এক বেঞ্চে একজন করে বসতে বলা হয়। তবে দীর্ঘদিন পর স্কুল খুললেও সহপাঠীদের সঙ্গে আগের সেই হইহুল্লোড় নেই। সামনের বেঞ্চ ধরা নিয়ে নেই হুড়োহুড়িও।

 

জানা গেছে, প্রায় ১৮ মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে। বছরের শুরুতে এসএসসি ও এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা আয়োজন করার কথা থাকলেও এখনো তা সম্ভব হয়নি। গত দেড় বছরেরও বেশি সময়ে দফায় দফায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানোর কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় শ্রেণীকক্ষে কোন পাঠদান হয়নি। জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফের প্রকাশিত এক নিবন্ধ থেকে জানা যায়, গত মার্চ মাস পর্যন্ত টানা এক বছর পৃথিবীজুড়ে প্রায় সতের কোটি শিক্ষার্থী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এর  মাঝে বাংলাদেশ অন্যতম। এই প্রসঙ্গে কথা হয় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুফাইদার সাথে। সে বলে, ‘দেড় বছর পর স্কুলে আসলাম। বন্ধুদের সঙ্গে আবার দেখা হওয়ায় খুব ভালো লাগছে। মর্গ্যান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের রুমাইসা বলেন, দীর্ঘ দিন পর ক্লাস শুরু হলো। বাসায় থাকতে থাকতে বরিং হয়েগেছি। তা ছাড়া বান্ধবীদের সাথে অনেক দিন দেখা হয় না। সবার সাথে দেখা হওয়ায় অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে। তাছাড়া আমরা পড়া লেখায় আগের মত মনোযোগি হতে পারবো।

 


অভিভাবকরা জানান, দীর্ঘ দিন ধরে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় ছেলে-মেয়েরা পড়া লেখা থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছে। ছেলে মেয়েরা যেন আগের মত পড়ায় মনোযোগি হতে পারে আমরা সেই প্রত্যাশা করি। আমরা চাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেন আর বন্ধ না হয়।


নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. কামরুল ইসলাম বলেন, স্কুল খোলার খবরে শিশুরা খুব খুশি। তারা উৎফুল্লা ভাবে স্কুলে আসছে। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। আজকে প্রথ দিনের মত সকলের উপস্থিতি ভালো ছিল।


সরকারি আইইটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মাসুদা আক্তার জানান, প্রথম দিনে নবম শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের ৩ টা ভাগে ক্লাস হয়েছে। পর্যায় ক্রমে অন্যান্য শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের ক্লাস হবে। এছাড়া শনি থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিদিন দশম এবং এস এসসি শিক্ষার্থীদের পাঠ দান হবে।


নারায়ণগঞ্জ তোলারাম কলেজের অধ্যক্ষ বেলা রানী সিংহ জানান, আমরা সার্বক্ষণিকভাবে শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ রেখে পড়া শুনার প্রতি মনোযোগ রাখার চেষ্টা করেছি। রোববার আমাদের একাদশ - দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সকাল ৮ টায় ক্লাস শুরু হয়েছে। প্রতিটি ভবনের সামনে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ছাত্র ছাত্রীরা কলেজে প্রবেশ করছে। শিক্ষার্থীরা যেন আগের মত পড়া লেখায় মনোযোগী হতে পারে তার জন্য শিক্ষকদের প্রতি বিশেষভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

 


জেলা শিক্ষা অফিসার শরীফুল ইসলাম জানান, আমরা পুরো জেলায় গুরে দেখেছি নারায়ণগঞ্জে সবকটি প্রতিষ্ঠানে ভালো পরিবেশে পাঠ দান শুরু হয়েছে। ২০২১-২২ সনের এসএসসি, এইচএসসি এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস হবে। এছাড়া অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে একদিন ক্লাস হবে। তাছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কতজন শিক্ষার্থী ঝরে গেছে তাদের একটা তালিকা জমা দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাবো।

 


জেলা শিক্ষা অফিসের সুত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে প্রায় ৮৪৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযুগে পাঠদান শুরু হয়েছে। জেলায় সরকারি বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সহ প্রায় ৩০০ টি স্কুল কলেজ মাদরাসা রয়েছে। এছাড়াও ৫৪৭ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রসঙ্গত করোনার কারনে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। প্রায় আঠার মাস পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে।