বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১   ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

নানা সমালোচনায় আলোচিত নাসিক কাউন্সিলররা

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৬:২৭ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ মঙ্গলবার


# বেশ বদলে ইমেজ পুনরুদ্ধারে তৎপর
# রাজনীতিবিদ, সুধীজনদের চোখেও নেতিবাচক

 

আসছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। তাই দীর্ঘদিন ধরে নানা কৌশল ও মানবিকতার ছোঁয়ায় এলাকার মানুষের কাছে হিরো হয়েছেন কাউন্সিলররা। তাদের মধ্যে কেউ কেউ  তার এলাকার মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছেন। তবে কারো কারো বিরুদ্ধে নানা ঘটনা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হয়েছে এলাকা জুড়ে। কাউকে কাউকে গুণ্ডা বলেও অবহিত করা হয়েছে নানা সময়। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের নাগরিক সমাজের নেতারাও একমত প্রকাশ করেছেন। তবে কাউন্সিলরদের দাবি যেসব ঘটনা ঘটেছে তা অনাকাঙ্খিত।


২০১৬ সালের নাসিক নির্বাচনের পর থেকে এই পর্যন্ত একের পর এক আলোচিত ঘটনার জন্ম দিচ্ছেন কাউন্সিলররা। জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রর্দশন করা, চাঁদাবাজির মামলা, হত্যার হুমকি, ধর্ষণের অভিযোগে মামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া মাদক তো আছেই। এমনকি বাদ যায়নি একে অপরের বিরুদ্ধে অস্ত্র প্রদর্শনের ঘটনাও। এসব ঘটনাকে অনেকে গুণ্ডাদের সাথে তুলনা করেছেন। কারণ চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, মাদক কারবারি ও হুমকি সাধারণত গুণ্ডাদের পেশা।


সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েলের মতে, বিগত সময় অনেক বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দিয়েছে কাউন্সিলররা। তাদের মধ্যে এসব কাউন্সিলরও আছে। অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। অনেকে পাড়া মহল্লার নামি-দামি লোকহলেও তাদের আচরণ গুণ্ডাদের মতো। তবে সবার কার্যকালাপ একই রকম নয়। তারা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে তাদের কর্মকান্ড করে আলোচিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অনেকে নানা ভালো কাজের জন্য এলাকায় সুনামও কামিয়েছেন।


জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই বলেন, অনেক এলাকায় স্থানীয় মানুষের কাছে কাউন্সিলর পরিচিয় ব্যবহার করে গুণ্ডামী করে তাদের লোকজন। তারা নানা কর্মকান্ড ঘটিয়েও থাকে। তিনি বলেন, অনেক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ অনেক দামি গাড়িতে চড়ে বেড়ান। বিশাল দলবল নিয়ে চলাচল করেন। কিন্তু আমরা মনে করি কাউন্সিলর মানে এলাকার মানুষের প্রিয় ব্যক্তি। তারা কোন গুন্ডা নয় যে তাকে দলবল নিয়ে চলাচল করতে হবে। পাশাপাশি অস্ত্র দিয়ে নানা ঘটনা ঘটিয়ে আলোচনায় আসতে হবে।


জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, নাসিকের অনেক কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। অনেকে বিভিন্ন ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, মাদক কারবারি ও হুমকি সাধারণত গুণ্ডাদের পেশা। তবে গুন্ডামী করে কেউ আইনের চোখ ফাঁকি দিতে পারবে না।
এ বিষয়ে জানতে কাউন্সিলরদের মুঠো ফোনে ফোন করা হয়। তবে তাদের মধ্যে কারো নাম্বার বন্ধ ছিলো আবার কেউ ফোন ধরেনি। তবে কেউ কেউ বলেছেন যেসব ঘটনা ঘটেছে তা অনাকাঙ্খিত।  তবে বর্তমানে সব কিছু ঠিকঠাক রয়েছে।


বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফউদ্দিন আহমেদ দুলাল প্রধান চারজন সহযোগী নিয়ে ৫০ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার হয় জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হাতে। তার বিরুদ্ধে বন্দরের এক নারীর জমি দখলের অভিযোগ উঠেছিলো। ওই ঘটনার সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন পরিবারটি।


নাসিকের ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু ২০০১ সালের ১৬ জুন নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলা মামলায় আসামি। আরেক ঘটনায় তাকে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে শহরের ডন চেম্বার এলাকায় কাউন্সিলের কার্যালয় থেকে আটক করেছিলো। যদিও তিনি বর্তমানে করোনাকালীন সময়ে মানুষকে নানা ধরনের সহযোগিতা করায় তাকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে পাড়া মহল্লা জুড়ে।


নাসিক ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবুর বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলা হয়েছিলো। সেই মামলায় জেল খেটেছেন বাবু। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ১৮নং ওয়ার্ডে গিয়ে প্রকাশ্যে গুলি বর্ষণ করে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করা করার অভিযোগ উঠে ২০১৮ সালে। তবে আব্দুল করিম বাবুর তার এলাকার মানুষকে নানা ভাবে সহযোগিতা করছেন দীর্ঘদিন ধরে।


২০১৫ সালে ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল গ্রুপের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাদের সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনা ঘটে। এছাড়া আলোচিত সাত খুনের প্রধান আসামী নূর হোসেনের ভাতিজা নাসিক কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল ছিলেন প্রথম এজাহারভুক্ত আসামী। যদিও পরবর্তীতে তাকে মামলা থেকে নিষ্পত্তি করা হয়। ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফুল হাসান ও তার দুই বন্ধুকে বিয়ার ও বিদেশী মদ নিয়ে আটক করেছিলো র‌্যাব। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ৬ নংওয়ার্ডের কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। 


নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের দুই কাউন্সিলরের মধ্যে হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছিলো। তখন কাউন্সিলর ওমর ফারুক তার ব্যক্তিগত অস্ত্র বের করে কাউন্সিলর বাবুলকে হুমকি দিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিলো। আরেক ঘটনায় কাউন্সিলর ওমর ফারুককে প্রধান আসামী করে ৬ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা হয়েছিলো। ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে হুমকি দেয়ার অভিযোগে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা হয়। তাছাড়া কাউন্সিলর ফারুকের বিরুদ্ধে হুমকি দেয়ার অভিযোগে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় আরেকটি অভিযোগ করেছিলেন এক যুবলীগের কর্মী।


সব শেষ করোনার শুরুর দিকে সংকটকালীন সময়ে মৃত দেহের দাফন ও সৎকার করে আলোচনায় আসা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেছেন এক নারী। ওই নারী খোরশেদের বিরুদ্ধে এর পূর্বে সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছিলেন। ওই নারী দাবি ছিলো, কাউন্সিলর খোরশেদের আচরণ গুন্ডার মতো।