শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১   ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

দুই নেতার বিভাজনে বেসামাল মহানগর

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:৪৬ পিএম, ৫ অক্টোবর ২০২১ মঙ্গলবার

# ২৭টির মধ্যে ১৮টি ওয়ার্ডে কমিটি হয়নি দীর্ঘ বছরেও


# দু’জনের দুরত্বের কারণে কমিটি হচ্ছে না : হেলাল


# বিভাজনের নেপথ্যে প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমান


# তারা দল ভাঙার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত : আনোয়ার হোসেন


 
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলছে। তাদের বিরোধ ও বিভাজনের কারণে বেসামাল হয়ে পড়েছে মহানগর আওয়ামী লীগ। সিটি করপোরেশনের আওতায় আসার পর ২০১৫ সালে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু মেরুগত দুরুত্ব এবং ব্যক্তি বিশেষ বিভাজনের ফলে দীর্ঘ বছরেও ঘর গুছাতে পারেনি মহানগর আওয়ামী লীগ।

 


জানা গেছে, মহানগরের আওতায় সদরে ৯টি, বন্দরে ৯টি এবং সিদ্ধিরগঞ্জে ৯টিসহ মোট ২৭টি ওয়ার্ড রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সদরের ৯টি ওয়ার্ডে সম্মেলন করা হলেও বন্দর এবং সিদ্ধিরগঞ্জের ১৮টি ওয়ার্ডে এখনো কমিটি গঠন করতে পারেনি মহানগর আওয়ামী লীগ। এর ফলে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনটির ভীত অনেকটা নড়বরে। আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামে এর বিরুপ প্রভাব পরতে পারে বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

 


এদিকে, এই অবস্থার জন্য দলটির নেতাকর্মীরা দায়ী করছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহাকে। নেতারা বলছেন, তারা যেহেতু কমিটির শীর্ষস্থানীয় নেতা, সেহেতু কমিটি করতে না পারার ব্যর্থতা বা দ্বায় তাদের কাঁধেই বর্তায়। তবে, মেরুগত দুরত্বের কারণে এই শীর্ষ দুই নেতার বিভাজনের ফলেই দীর্ঘদিনেও গুছিয়ে উঠতে পারেনি মহানগর আওয়ামী লীগ। শীর্ষ দুই নেতা একে অপরের বিরুদ্ধে প্রায় সময়ই প্রকাশ্যে সমালোচনা করায় এতে বিব্রত হচ্ছেন দলের নেতাকর্মীরা।

 


জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, সভাপতি আনোয়ার ভাই প্রবীন রাজনীতিবীদ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারন করে। সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা ভাইও ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা। কিন্তু তাদের মধ্যে নানা কারণে বিভাজন চলছে। এতে আমরা বিব্রত। এমন বিভাজনের কারণে দলের ক্ষতি হচ্ছে। দলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আগামীর আন্দোলন সংগ্রামেও এর প্রভাব পরতে পারে। তাই আমরা চাই বিভাজন মিটিয়ে দলের কথা মাথায় রেখে তারা যেন একত্রে কাজ করতে পারে।’ ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গুছাতে না পারার বিষয়ে জানতে চাইলে হেলাল বলেন, দু’জনের মধ্যে দুরত্বের কারণেই কমিটি হচ্ছে না। তারা সমন্বয় করলেই কমিটি করা যেত।’

 


দলের অন্যান্য নেতারাও বলছেন, দুই নেতার মধ্যে সমন্বয় তৈরী হলে এতোদিনে ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি হয়ে যেত। অবশ্য, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষ্যে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছিলাম সমন্বয় করে মহানগরের অধিনস্থ ওয়ার্ড কমিটিগুলো গঠন করতে। কিন্তু অনেকের অনিহার কারণে তা পারিনি। চেষ্টা করেছি, বারবার বলেছি, তারপরও হয়নি। দীর্ঘ বছরেও ওয়ার্ড গুছাতে পারিনি। এটা আমাদের চরম ব্যর্থতা। যেখানে আমরা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এক হতে পারিনি, সেখানে আমরা কমিটি করবো কিভাবে? একেক জন যদি একেক জনের নির্দেশে চলে, তাহলে একটি দল কখনই এগিয়ে যেতে পারে না। যারা দল ভাঙ্গার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তাদের আবারও আহবান জানাচ্ছি যে, আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই।’ যদিও এর আগে দৈনিক যুগের চিন্তার এই প্রতিবেদকের কাছে মুঠোফোনের মাধ্যমে আনোয়ার হোসেন জানিয়ে ছিলেন, ‘একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির প্রভাবে কমিটিগুলো হচ্ছে না।’

 


জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমান মহানগর আওয়ামী লীগের অন্যতম সদস্য। বোদ্ধামহলের ধারণা, প্রভাবশালী ব্যক্তি বলতে আনোয়ার হোসেন সাংসদ শামীম ওসমানকে ইঙ্গিত করেছেন। জানা গেছে, সাংসদ শামীম ওসমানের অন্যতম অনুসারী ও বন্ধু মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. খোকন সাহা। তাদের কেউই ওয়ার্ড কমিটি গঠনে তৎপরতা দেখাচ্ছেন না। কিন্তু আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মহানগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে কর্মী সভা করে যাচ্ছেন। যদিও এসব কর্মী সভায় সংগঠনটির সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে দেখা যায়নি।

 

আনোয়ার হোসেন ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, ওই কর্মী সভা দলীয় নয়, ব্যক্তি কেন্দ্রীক। এমনিতেই ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি নেই, তার উপর এমন কর্মী সভার মাধ্যমে মহানগর আওয়ামী লীগে বিভাজন আরো প্রকট হচ্ছে। এর রেশ ছড়িয়ে পড়ছে তৃণমূলেও। এতে মহানগর আওয়ামী লীগে বেসামাল অবস্থা বিরাজ করছে। তবে, মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীর ভাষ্য- এই বিভাজনের নেপথ্যে প্রভাবশালী সাংসদ কলকাঠি নেড়েছেন।