বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০   ১৮ রমজান ১৪৪৫

রং তুলিতে দুর্গাকে সাজালেও সাজে না নিজের জীবন

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৭:৫৬ পিএম, ৮ অক্টোবর ২০২১ শুক্রবার

বিক্রমপুরের মৃৎশিল্পী গোপাল পাল। পূজা-পার্বনে বায়নায় প্রতিমায় রং করার কাজ করেন। চলতি মৌসুমেও দুর্গাপূজার জন্য বায়না পেয়েছেন তিনি। ৩৫ বছর যাবৎ এই কাজ করেন তিনি। রং তুলি দিয়ে দুর্গাকে সাজাতে পারলেও সাজাতে পারেননি নিজের জীবন। তিন মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে খুব অভাব অনটনে চলে তার সংসার। 

 

মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) সকালে নারায়ণগঞ্জের টানবাজার সাার্বজনীন পূজামন্ডপে দেখা মেলে তার। এখানে আড়াই মাস ধরে কাজ করছেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, বাপ-মা পড়াশোনা বন্ধ করে দিলে আমার এক দাদুর সাথে এই কাজে যাই। সেখান থেকেই শুরু হয় এই কাজের। আমি ৩৫ বছর যাবৎ এই প্রতিমা তৈরির কাজ করছি। আমার বাবাও এই কাজ করতেন। এ বছর আমি ৭টি মন্দিরের প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছি। নারায়ণগঞ্জে ৫টি, কুমিল্লায় ১টি ও ফরিদপুরে ১টি। প্রতিমা প্রতি ২৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা নেয়া হয়। তবে করোনার কারণে সবাই মজুরি কম দিচ্ছে। 

 

গত বছরের তুলনায় এই বছর কাজের চাহিদা বেশি। কিন্তু মাঝে করোনার প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় করা হয়নি। নারায়ণগঞ্জে কাজ করছেন আড়াই মাস যাবৎ। তারা এখানে পাঁচজন কাজ করেন। থাকেন মেসে, খাবার খান অন্যের বাড়ি। খাবার সময়ের ঠিক থাকে না। ‘আজকে না খেয়েই কাজে চলে এসেছেন’ বলে জানান। বলেন, ‘হোটেলে খেতে গেলেই জনপ্রতি লাগে এক থেকে দেড়শ টাকা। হোটেলে গিয়ে খাবার খাওয়ারও সামর্থ্য নাই।’

 

গোপাল বলেন, আমাদের এই কাজ খুবই সীমিত, পয়সাও কম। এই আয়ে সংসার ও ছেলে মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালানো যায় না। মৌসুম এলেই কাজের চাপ বেড়ে যায়। তাছাড়া সারা বছর বসেই থাকতে হয়, না হয় অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হয়। এই আয়ে সংসার চলে না। ছেলে মেয়ের পড়াশোনা চলে না। সব কিছু মিলিয়ে খুব অশান্তিতে আছি। আমাদের কেউ সাহায্য-সহযোগিতাও করে না। 

 

তিনি আরও বলেন, আমাদের এই কাজে অনেক কষ্ট কিন্তু তার তুলনায় আমরা উপযুক্ত পারিশ্রমিক পাই না। আমাদের চাইতে বেশি পায় প্যান্ডেল ও ককশিট নিয়ে যারা কাজ করেন তারা। কিন্তু তাদের তুলনায় আমার কষ্টের পরিমাণটা অনেক বেশি। আমাদের কোন দাম নাই। এই মৃৎশিল্পী খুব আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘শিল্পীদেরকে উপরের লেভেল থেকে কোনো সহযোগিতাও করা হয় না।’ 

 

গোপাল পালের চার সন্তান। চারজনই পড়াশোনা করছে। সবার বড়জন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। পড়াশোনা না করাতে পারলে তারাও এই কাজই করতে হবে বলে জানান এই মৃৎশিল্পী। তিনি বলেন, ‘কি আর করার। কিছু একটা করে তো খেতে হবে। কারণ আমারও বয়স হয়েছে। তাদের ভরণপোষণের ভার আর নিতে পারবো বলেও মনে হয় না। এখই অনেক কষ্ট হয় সংসার ও তাদের পড়াশোনার খরচ চালাতে।’