মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৭ ১৪৩১   ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টায় অনেকে : মেয়র

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৭:১৫ পিএম, ১৪ অক্টোবর ২০২১ বৃহস্পতিবার

# সম্প্রীতি নষ্টকারী দুষ্টচক্রের প্রতি সজাগ থাকার আহ্বান আইভীর

# সাতাশ ওয়ার্ডের ৩৬ কাউন্সিলরের মধ্যে কখনও কাউকে ভেদাভেদ করি নাই

# উন্নয়নের খাতিরে আমি ট্যাক্স চাইবোই

# কাজ সঠিক করেছি মনে করলে সাপোর্ট দিবেন, নাহলে দিবেন না

‘অনেকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়’- বলে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন বড় একটি ওয়াটার প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ করছে। অনেকের মধ্যে একটা প্রশ্ন যে, আমাদের তো পানি পর্যাপ্ত নাই তাহলে বিল ধরেছেন কেন? পর্যাপ্ত পানি না থাকলেও আপনারা সব ওয়ার্ডে পানি খাচ্ছেন, পানি পাচ্ছেন। 

 

কারণ প্রতিটি ওয়ার্ডেই প্রত্যেকের বাড়িতে কিন্তু ডিপ টিউবওয়েল বসানো আছে। এই ভূগর্ভের পানি কিন্তু রাষ্ট্রীয় সম্পদ। সুতরাং পানির ট্যাক্স দিতে হয়। যেমন হোল্ডিং ট্যাক্স কিংবা ভূমি অফিসে ভূমি ট্যাক্স দেন। এইগুলো নিয়ে অনেকে না বুঝে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। মাটির নিচ থেকে পানি তোলার জন্য সবজায়গাতেই সরকারি ট্যাক্স দিতে হয়। এটা নিয়ম।

 

বুধবার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে সুমিলপাড়া এলাকায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সিদ্ধিরগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

 

তিনি আরও বলেন, ‘এই অঞ্চলের মানুষের জন্য এই ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে। সকল সেবা যেন এখানে মানুষ পেতে পারে সেই ব্যবস্থা করা হবে।’ সিটি মেয়র বলেন, ‘সিদ্ধিরগঞ্জে খালি জায়গার পরিমাণ খুবই কম। মাঠ, পার্ক করতে খুবই অসুবিধায় পড়তে হয়। পরে এই লেকটা দেখে কাজ করার চিন্তা মাথা আসে। জাইকার মাধ্যমে এই লেকের কাজ আমরা করছি। যদিও সরকার ডিএনডির উপর কাজ করছে। ওই কাজের সাথে এই লেকের কাজের কোনো সম্পর্ক নাই। প্রায় ১০০ কোটি টাকায় এই লেকের কাজ সম্পূর্ণ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন থেকে করছি। জাপানিজরা আমাদের সাথে কাজ করে। তাদের সাথে মিলে কাজটি করার চেষ্টা করছি।

 

শুধু ৬ নম্বর ওয়ার্ডই না, প্রত্যেকটি ওয়ার্ডেই আমরা কাজ করছি।’ তিনি বলেন, ‘বিপরীত পাশের কবরস্থানের পেছনে বিশাল বড় একটা পুকুর রয়েছে। ওই পুকুর সংরক্ষণ করে ঈদগাহ মাঠ করে দেওয়ার ব্যবস্থা ইতোমধ্যে নিয়েছি। আবার আপনাদের মাঝে আসতে পারি কিনা জানি না। ওইটা আল্লাহ নির্ধারণ করবেন। কিন্তু যেই আসুক না কেন, সেই এই কাজ করতে বাধ্য থাকবে। কারণ এগুলো প্রকল্পের মধ্যে ইতোমধ্যে দিয়ে দিয়েছি। আল্লাহ যাকে পছন্দ করবেন তার হাত দিয়ে কাজ করাবেন।

 

’ আইভী বলেন, ‘৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেইর রাস্তার কাজটি টেন্ডার দেওয়ার পরও করতে পারিনি। ডিএনডির পিডি সাহেবের অনুরোধে এই কাজটি বন্ধ রেখেছি। কারণ এইখানে ডিএনডির মেইন পাম্প চালু হবে। ওনারা রাস্তা ও খাল করে দিবে বলেছে। যার কারণে আপনাদের কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। এছাড়া আর কোনো রাস্তাঘাটের ডিমান্ড নাই। কোনো জায়গাতেই কোনো ডিমান্ড নাই। বিগত সময়ও কাজ করেছি, এখনও করছি। সাতাশ ওয়ার্ডের ছত্রিশ কাউন্সিলরের মধ্যে কখনও কাউকে ভেদাভেদ করি নাই। কে কার লোক না দেখে জনগণকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করেছি।

 

তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের উপর অযথা চাপ সৃষ্টি করার কোনো কারণ নেই। সিটি কর্পোরেশন বিভিন্নভাবে লাভবান হলে জনগণের ট্যাক্স অবশ্যই কম নেবো, জনগণকে সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করবো। এই অঞ্চলের বহু কলকারখানা রয়েছে যারা নিয়মিত ট্যাক্স দিচ্ছে না। ট্যাক্স না দিলে আমার কাজ করা কষ্টকর হয়। এইদিকে সকলে খেয়াল রাখবেন। সবাই বলে, ইলেকশন আসলে ট্যাক্স নিয়ে কথা বলতে নাই, মওকুফ করার কথা বলেন, এই বলেন, সেই বলেন। কিন্তু আমি এগুলো পছন্দ করি না। আমার ভেতর-বাহির সব এক। উন্নয়নের খাতিরে আমি ট্যাক্স চাইবোই। আপনারা আমাকে ট্যাক্স দিবেন, আমি আপনাদের ভালো সার্ভিস দেবো। এটাই পৃথিবীর নিয়ম।


স্থানীয়দের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘এই সিদ্ধিরগঞ্জে আমি কী পরিমাণ কাজ করেছি তা একবার বুকে হাত দিয়ে চিন্তা করেন। এমন কোনো ওয়ার্ড নাই যেখানের রাস্তাঘাট পাকা হয় নাই, ড্রেন হয় নাই। উত্তরদিকের নিচু অঞ্চল নিয়ে আমার করণীয় কিছু নাই। সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে। পাম্প স্টেশন করছে। তবে ওই অঞ্চলের নিচু জায়গাকে উচু করে শীতলক্ষ্যার লেভেলে ড্রেন করতে পারলে স্থায়ী সমাধান পাবে। ভবিষ্যতে হয়তো সরকার এটা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে। আমি সমানভাবেই কাজ করার চেষ্টা করেছি।

 

কোনো কাউন্সিলরের সমস্যা তৈরি করে পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলিনি। কাউকে নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বলার মানসিকতা আমার নাই। আমি সারাদিনই কাজ করি। আমি কাজ পাগল মানুষ। কেউ কিছু বললে সেটা শোনার পরই মাথা থেকে চলে যায়। সিদ্ধিরগঞ্জবাসীর কাছে দোয়া চাই। যদি মনে করেন কাজ সঠিক করেছি তাহলে সাপোর্ট দিবেন, নাহলে দিবেন না।’ বক্তব্য শেষে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীদের সাথে নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ কার্যালয় ভবন নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র আইভী। নাসিকের ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর রুহুল আমিন, মিনোয়ার বেগম, মনোয়ারা বেগম, ইস্রাফিল প্রধান, ইকবাল হোসেন, মাকসুদা বেগম, ওমর ফারুক, মহানগর যুবলীগের সিনিয়র সহসভাপতি কামরুল হুদা বাবু, যুবলীগ নেতা আব্দুল মোতালিব, শরীফ হিরা, হিমেল খান প্রমুখ।


এদিকে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ শহরের রামকৃষ্ণ মিশনের পূজামন্ডপ পরিদর্শন করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। বুধবার (১৩ অক্টোবর) সকালে তিনি রামকৃষ্ণ মিশন মন্দিরে যান। সেখানে তাকে ফুল দিয়ে গ্রহণ করে মন্দির কর্তৃপক্ষ। এই সময় উপস্থিত ছিলেন রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ একনাথনন্দ মহারাজ, সাধুনাগ মহাশয় আশ্রমের তারাপদ আচার্য, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায় প্রমুখ। 

 

সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সিটি মেয়র ডা. আইভী বলেন, ‘এই উৎসব আমাদের বাঙালির ঐতিহ্য। আমরা হিন্দু-মুসলমান মিলেমিশে এই উৎসব পালন করি। আমাদের সম্প্রীতি যেন সবসময় বজায় থাকে। কোনো দুষ্ট চক্র যেন আমাদের সম্প্রীতিতে ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে, সেজন্য সজাগ থাকতে হবে। এই দেশ, এই মাটি, এই ভূমি আমাদের সকলের। এটা আমাদের মাতৃভূমি, আমরা আমাদের মাতৃভূমিকে ভালোবাসি। মাকে যেভাবে ভক্তি-শ্রদ্ধা করি, সেভাবেই দেশকে ভালোবাসি। এখানে কোনো বিভেদ নাই।

 

তিনি আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার উপর দাঁড়িয়ে থেকে বাংলাদেশকে বিনির্মাণ করতে চাচ্ছেন। আমরা তাকে সহযোগিতা করে দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবো।’ আইভী বলেন, ‘মিশনের সাথে আমার আত্মিক সম্পর্ক। পূর্বের মহারাজ আমাকে মেয়ের মতো স্নেহ করতেন। বর্তমানের মহারাজও আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন। আমাকে মেয়ে বলে সম্বোধন করেন। এই ভালোবাসা, সম্মান, স্নেহের প্রতিদান যেন দিতে পারি, মানুষকে যেন ভালোবাসতে পারি, সেই আশীর্বাদ করবেন।’