শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১   ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

ছোবায় স্বপ্ন পূরণ, বছরে বাণিজ্য ১৯২ কোটি টাকা

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ১০:৩২ পিএম, ১৬ অক্টোবর ২০২১ শনিবার

অন্ধ বাবার বড় সন্তান। মা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। ঘরে ছোট দু’বোন, এক ভাই। সংসারের ঘানি টানা আর লেখাপড়ার খরচ চালানো সম্ভব ছিলোনা পনের বছর বয়সের আনিকার। পাশের বাড়ির চাচীর কথামতো হাতে তুলে নেয় কুরশি কাটা আর রঙিন সূতা। সেই যে শুরু। বাঁচার তাগিদে আজো কুরশি কাঁটা আর সূতার সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছে আনিকা।
 
 
কলেজে লেখাপড়ার পাশাপাশি রঙীন ছোবা বানিয়ে নিজের জীবন, ছোট ভাই-বোনদের জীবন আর সংসারকে রঙীন করে তুলেছে। কলেজ শিক্ষার্থী আনিকা সুলতানার মতো রূপগঞ্জের গাঁয়ের আরো ৪০ হাজার নারী ছোবা বানিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন। রঙীন ছোবায় বদলে দিয়েছেন রঙিন জীবন। আনিকাদের নিপুণ হাতের তৈরি ছোবা দেশের গণ্ডি পরিয়ে বিদেশও রপ্তানী হচ্ছে । প্রতিমাসে রপগঞ্জ থেকে প্রায় ১৬ কোটি টাকার ছোবা মহাজনদের মাধ্যমে রাজধানীর চকবাজার যায়।
 

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলার নারীদের তৈরি করা এসব ছোবা মহাজনদের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার চকবাজারে পাইকারী বিক্রি করা হয়। সেখান থেকে সারাদেশ এমনকি দেশের বাইরেও যাচ্ছে এখানকার তৈরি ছোবা। জানা গেছে, রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়ন, রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়ন, দাউদপুর ইউনিয়ন, ভোলাব ইউনিয়নের ঘরে-ঘরে নারীরা ছোবা তৈরি করছেন। একেকটি এলাকায় যেনো একেকটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। অনেকটা নীরব-নিভৃত চলছে ছোবা বাণিজ্যের প্রসার।
 
 
ফাতেমা বিবি বলেন, সংসারের ফাঁকে ফাঁকে ছোবা বানাই। আজাইরা বইয়া না থাইক্যা যা আহে পোলাপানগো সংসারে খরচাতা অয়ে । ফাতেমা বিবি, সাহারা বেগমের মতো নগরপাড়া এলাকার মাহমুদা আক্তার, মুক্তা বেগম, ঝুমা আক্তার সবাই এই ছোবা বানানোর কাজে মশগুল।


মহাজন নিলুফা বেগম বলেন, জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। সময় মতো খাওন না খাইয়া পোলাপানেরে গরম পানি জ্বাল দিয়া খাউয়াইছি। আল্লায় অহন একটু সুখ দিছে। প্রতি হপ্তায় খরচ যাইয়া ৭/৮ হাজার টাকা থাহে। এক বছর গেলো আশায় আছি জায়গা কিনুম। নিজে লেহাপড়া করবার পারি নাই। একটা পোলা ও একটা মাইয়া। দুইজনরেই লেহাপড়া করাইতাছি। ওগো মানুষ করবার বড়ই ইচ্ছা।
 

নিলুফা বেগমের মতো বরুনা এলাকার রব মিয়া, আলাল, দুলাল রপগঞ্জ সদর ইউনিয়নর মনির মাঝিনা নদীর পাড়ের গোলজার, ফারুক হাসন, দেলোয়ার ইছাখালী এলাকার বারেকের কারিগর রয়েছে জনপ্রতি ২শ’ থেকে আড়াই’শ।
 

কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাসুম আহম্মেদ বলেন, গ্রামের এসব নারীরা সংসারের কাজের ফাঁকে ছোবা বানিয়ে আয়ের পথ তৈরি করছে। পাশাপাশি অলস সময় কেটে যাচ্ছে।

 
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ নুসরাত জাহান বলেন, আমার জানা ছিলো না এ উপজেলায় নীরবে এতো বড় নিপুণ কাজ হয়। আসলেই অবাক করার বিষয়। নারীদের হাতে এতো টাকা আয় হয়। আমি চেষ্টা করবো তাদের পাশে দাঁড়াতে ও সহযোগিতা করতে ।