বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১   ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত অনেক সাংবাদিক

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:২১ পিএম, ২২ অক্টোবর ২০২১ শুক্রবার

দেশে সব শ্রেণির মানুষের সঙ্গে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন সাংবাদিকদের একটি বড় অংশ। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময়ই ঘটছে অধিকাংশ দুর্ঘটনা। আবার এদের বড় একটি অংশ বাইকার। অর্থাৎ বাইকে দুর্ঘটনার সংখ্যাই বেশি। নিহতদের পরিবার যেমন সংগ্রাম করছে তেমন আহতদের জীবনেও নেমে আসছে চরম বিপর্যয়। তবে কারো কাছে সাংবাদিক নিহত-আহত হওয়ার সঠিক পরিসংখ্যান নেই।


সবশেষ নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় ট্রাকচাপায় এক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এছাড়াও কোনো কোনো সাংবাদিক মারা গেছেন বেপরোয়া বাসের নিচে পড়ে। কেউবা আহত হয়ে পঙ্গুপ্রায়। আর মারা যাওয়া বেশির ভাগ সাংবাদিকের খোঁজ নেয়নি কেউ। চলতি বছরের অক্টোবরে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় ট্রাকচাপায় এক সাংবাদিক নিহত হন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফতুল্লার পঞ্চবটি এলাকায় তিনি দুর্ঘটনায় পড়েন। নিহত শফিকুল ইসলাম জনি বেসরকারি টিভি চ্যানেল এস-টিভির ফতুল্লা প্রতিনিধি ছিলেন। রাতে মোটরসাইকেলে বাসায় ফেরার পথে একটি সিমেন্টবাহী ট্রাক জনিকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু এখনো তার কার্যালয় থেকে কিংবা সাংবাদিক কমিউনিটি থেকে কেউ কোনো খোঁজ-খবর নেয়নি বলে জানিয়েছেন নিহতের স্ত্রী রওশান আরা নিপু। তবে ওই ট্রাক মালিকের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করার জন্য তার সাংবাদিক বন্ধুরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

নিপু জানান, ‘আড়াই বছরের ছেলেটার আর কেউ রইলো না। আমার অবুঝ শিশু কিছুই বোঝে না। বলে আমার বাবা কি কাজে গেছে? বাবাকে আসতে বলো। আমি কোনো উত্তর দিতে পারি না। ছেলের মুখের দিকে তাকাতে পারি না। তার অফিসের লোক বলেছে কোনো দরকার লাগলে বলবেন। আর কিছু করেনি। তবে বন্ধু ও সহকর্মী সাংবাদিকরা ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টা করছেন।

 

এর আগে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় সাংবাদিক এইচ এম আব্দুল্লাহ (২৫) নিহত হন। চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলার উত্তর নলুয়া বাইপাস রোডে ৫ আগস্ট সকালে রাস্তা পারাপারের সময় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ধাক্কা দিলে পা এবং মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন সাপ্তাহিক ইউনানী কণ্ঠের মতলব দক্ষিণ উপজেলার এই প্রতিনিধি।

 


অন্যদিকে ঢাকায় প্রায়ই আহত হচ্ছেন সাংবাদিকরা। ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর শীতের সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে যাচ্ছিলেন কালের কণ্ঠের সাংবাদিক নিখিল ভদ্র। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাস থেকে নামার সময় আরেকটি দ্রুতগামী বাস তাকে চাপা দেয়। বাসটি তার পায়ের উপর দিয়ে যায়। এরপর মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই তার একটি পা কেটেও ফেলা হয়। কিন্তু কেটে ফেলার পর তার পায়ে পচন ধরে। এজন্য তাকে থাইল্যান্ড নেওয়া হয়। সেই থেকে একটি পা নিয়েই জীবনের ঘানি টানছেন তিনি।

 

এ বিষয়ে নিখিল ভদ্র জানান, আমি একটি সেমিনার কাভার করার জন্য প্রেস ক্লাবে যাচ্ছিলাম। সেখানে বাস থেকে নামার পর দ্রুতগামী একটি বাস আমাকে ধাক্কা দেয়। এসময় উপস্থিত জনতা বাসটিকে ধাওয়া করলে আমার পায়ের উপর দিয়ে বাসটি চলে যায়। এরপর আমার চিকিৎসা বাবদ প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন পাঁচ লাখ টাকা। বসুন্ধরা গ্রুপ ও কালের কণ্ঠ পরিবার মিলে ৩৫ লাখ টাকা দেয়।

 

২০২০ সালে সেপ্টেম্বর মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ইকরাম-উদ দৌলা। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে রাজধানীর খিলক্ষেত থানা এলাকার লা মেরিডিয়ান হোটেলের সামনের মোটরসাইকেলে করে যাওয়ার সময় পেছন থেকে যাত্রীবাহী বেপরোয়া বাস (তুরাগ) তাকে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সেই দুর্ঘটনার পর ২২ দিন হাসপাতালে থাকতে হয় তাকে। এরপর অনেক টাকা-পয়সা খরচ হয়েছে। কিন্তু এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেনটি তিনি।

 

ইকরাম-উদ দৌলা জানান, টাকা-পয়সা তো অনেক খরচ হয়েছে। কিন্তু এখনো তো চিকিৎসা চলছে। বুকে এখনো ব্যথা আছে। শরীরের নড়াচড়া এখনো সাবধানে করতে হয়। একজন স্বাভাবিক মানুষের মতো শরীর নড়াচড়া করা যায় না। সপ্তাহে দু’তিন দিন হালকা জ্বর থাকে। বাইক চালনো এখন বাদ দিয়েছি। সেই ঘটনার পর থেকে মনের ভেতর একটা ভয় কাজ করে। অনেকটা ট্রমার মধ্যে আছি। এখনো দুটি হাড় জোড়া লাগেনি। এই দুর্ঘটনার ফলে কর্মজীবনে পিছিয়ে গেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছয়মাস কাজ করতে পারিনি। এই ছয়মাস কাজ করলে হয়তো ক্যারিয়ারে আরেকটু এগিয়ে যেতাম। এছাড়া মোটরসাইকেলও পুলিশ জব্দ করে রেখেছিল। এজন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।

 

দৈনিক দেশ রূপান্তরের সাংবাদিক খায়রুল ইসলাম বাশার ২০২০ সালের এপ্রিলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় এক পথচারীর কারণে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। ওই পথচারী হঠাৎ করে তার মোটরসাইলের সামনে দিয়ে দৌড় দিলে তাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজে পড়ে যান। পরে তার পায়ে সমস্যা দেখা দেয়। চারমাস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ খরচ হয় তার।


পেশাগত কারণে সাংবাদিকরা এভাবে প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। নিহত হওয়ার পাশাপাশি আহত হওয়ার সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু দেশে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন থাকলেও তাদের হিসাব কারো কাছে নেই। এমনকী চিকিৎসার জন্য বেশিরভাগ সময়ই মেলে না কোনো সহায়তা।