বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১   ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবহন মালিকদের কাছে জিম্মি জনসাধারণ

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ১১:৪৯ পিএম, ৬ নভেম্বর ২০২১ শনিবার

# কেন্দ্রীয় নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত ধর্মঘট প্রত্যাহার করবো না- জুয়েল


# ডিজেলের দাম না কমলে ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে- শফিউদ্দিন প্রধান  



জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে পরিবহন মালিকদের ডাকা ধর্মঘট চলছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। গতকাল শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে ডাকা পরিবহন মালিকদের ধর্মঘটের ফলে, সড়কে বিভিন্ন পণ্যবাহী যান ও গণপরিবহনের চলাচল নেই বললেই চলে। এদিকে, ঢাকার নিকটস্থ জেলা নারায়ণগঞ্জে এই ধর্মঘটের প্রভাব বেশ ভালোভাবেই পড়েছে।

 


সরেজমিনে নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড, চাষাঢ়ার লিংকরোড-সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো ঘুরে দেখা গেছে, গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায়, একদিকে সাধারণ যাত্রীরা যেমন চরম ভোগান্তী পোহাচ্ছে। তেমনি পণ্যবাহী পরিবহন (ট্রাক-কাভার্ডভ্যান) না চলায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরাজ করছে দুশ্চিন্তা। তবে, এই ধর্মঘটে মানুষের অবস্থা যেমনই হোক না কেন, নারায়ণগঞ্জের বাস মিনিবাস ও ট্রাক মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, কেন্দ্রীয় ভাবে নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত তারা এই ধর্মঘট প্রত্যাহার করবে না।

 


গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জ শহরের ১ নং রেলগেইট এলাকায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে কথা হয় বন্দরের বাসিন্দা রবিন নামে এক যুবকের সাথে। ক্ষোভ প্রকাশ করে রবিন বলেন, ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে যেতে হবে মায়ের চিকিৎসার একটি রিপোর্ট আনতে। কিন্তু বাস কাউন্টারের এসেই শুনি পরিবহন মালিকরা ধর্মঘট ডেকেছে। আসলে এটার কি কোনো মানে হয়? ডিজেলের দাম বেড়েছে, তাই আপনারা টিকিকের দাম বাড়িয়ে দেন, তাহলেই-তো হয়। ডিজেলের দাম কমলে আবার টিকিটের মূল্য কমিয়ে দিবেন, ঝামেলা শেষ। বাস বন্ধ রাখার কি দরকার!

 


চাষাঢ়ার লিংক রোডে সিএনজির জন্য দাড়িয়ে থাকা ওবায়েদুল্লা নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘১ ঘন্টার বেশি হয়ে গেল সিএনজির জন্য দাড়িয়ে আছি। সন্ধ্যার মধ্যে ঢাকার মোহাম্মদপুরে যেতে হবে। সেখানে আমার ভাতীজির বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে। কিন্তু এখন দেখছি গাড়ি না পেলে যাওয়াই বন্ধ।

 


তিনি বলেন, বাস মালিকরা ধর্মঘটে যাওয়ার আগে কেন একবার সাধারণ মানুষের কথা ভাবেনি? তারা কি বোঝেনা যে, এই দেশে সকলের প্রাইভেট গাড়ী নেই। আজকে দেশের অধীকাংশ মানুষেরই জায়গায় জায়গা সমস্যা। তাই পরিবহন মালিকদেরও সমস্যা হতে পারে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এরজন্য কি তারা মানুষকে জিম্মি করে সেই সমস্যার সমাধান করবে? এটা অপরাধ ছাড়া আর কিছুই না।

 

জানতে চাইলে সিটি বন্ধন পরিবহনের চেয়ারম্যান জুয়েল এ বিষয়ে বলেন, আমরা শুধু ডিজেলের দাম বৃদ্ধির জন্যই ধর্মঘটের ডাক দেই নাই। মূলত পরিবহনের বিভিন্ন যন্ত্রপাতির দামও অত্যাধিক বেড়ে যাওয়ার আমরা অনেক সমস্যায় ছিলাম। এদিকে এরমধ্যেই ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কেন্দ্রীয় ভাবে আমাদেরকে ধর্মঘটের নিদের্শনা দেওয়ায়, আমরা তাতে অংশগ্রহন করেছি। তাই কেন্দ্রীয় নেতারা সরকারের সাথে আলোচনা করে আমাদেরকে নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত আমরা এই ধর্মঘট প্রত্যাহার করবো না।

 


অন্যদিকে, ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নারায়ণগঞ্জ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্যপরিবহনের ব্যবহৃত ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের চলাচল বন্ধ রেখেছে মালিকরা। এতে বিপাকে পরেছে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা। গতকাল শহরের বেশ কয়েকজন থান কাপড়ের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম, গাজীপুর এবং রাজধানী ঢাকায় শুক্রবার সারাদিন তারা কোনো মাল পাঠাতে পারেনি। এছাড়া শঙ্কা প্রকাশ তারা বলছেন যে, এই ধর্মঘট দীর্ঘ হলে সামনে তারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মালামাল ক্রয় করে নারায়ণগঞ্জে আনতেও পারবে না।

 


তবে জানতে চাইলে, নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিউদ্দিন প্রধান বলেন, আমাদের কেন্দ্রীয় ভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তাই আমরা সড়কে পরিবহন চলাচল বন্ধ রেখেছি। ডিজেলের দাম না কমা পর্যন্ত এই ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।