বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৩ ১৪৩১   ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

শহর-বন্দরে ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে চরম দুর্ভোগ

স্টাফ রির্পোটার

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৫:৩১ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০২২ বুধবার

# বেশিরভাগ এলাকায় ওয়াসার পানিতে ময়লা ভাসে
# ময়লা ও দুর্গন্ধে পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে

 

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বেশিরভাগ এলাকায় ওয়াসার পানিতে ময়লা ভাসে। দুর্গন্ধ বের হয়। এছাড়া পানিতে আসছে কালচে হয়েও। পানিতে থাকছে বিদঘুটে গন্ধ। পান করা তো দূরের কথা ব্যবহার করাটাই হয়ে উঠছে দুস্কর। আর ওয়াসার পানির  দুর্গন্ধের কারণে নারায়ণগঞ্জ সদর, বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জের সাধারন মানুষ বছরের পর বছর ধরে যে চরম দুর্ভোগ পোহাতে।

 

রান্নাবান্না, গোসলসহ দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। আবার কোথাও-কোথাও ওয়াসার লাইনের পানিতে কিলবিল করছে পোকা। ফলে রমজানের শুরুতেই চরম দুর্ভোগে নগরবাসী। আর এতে সাধারন মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

 

কেননা, নগরবাসীর কাছে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার দায়িত্ব নাসিকের। কিন্তু সেই দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করছে না বলে দাবি সাধারণ মানুষের। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ওয়াসার পানির এমন চিত্র। ওয়াসা সিটি কর্পোরেশনের আওতায় আসার পর সমস্যা সমাধানে নেই কোনো জোড়ালেও তেমন কোনো উদ্যোগ। তবে নগরবাসীকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে বদ্ধপরিকর সিটি কর্পোরেশন এমনটাই দাবি নগরবাসীর।


ভুক্তভোগীরা জানান, নারায়ণগঞ্জ বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে পঁচা দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা, নোংরা, কীটযুক্ত পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। সরবরাহকৃত পানি পান করা তো দূরের কথা রান্নাবান্না, গোসল ও অজু করা সহ দৈনন্দিন কাজ করা যাচ্ছে না। সরবরাহ কৃত পানি ব্যবহারের কারণে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় জ্বর, বমি, চর্মরোগ সহ বিভিন্ন প্রকার রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

 

অনেক আগে থেকেই ওয়াসার পানিতে সমস্যা। এখন আরও বেড়েছে। ময়লা ও দুর্গন্ধে পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। পানি দিয়ে গোসলে বাচ্চাদের চর্মরোগ হচ্ছে। বড়রাও আক্রান্ত হচ্ছেন রোগব্যাধিতে। এ পানি সরবরাহ করা হয় ভূগর্ভস্থ পাইপের মাধ্যমে। বহু পুরনো এই পাইপের জায়গায় জায়গায় ফেটে ঢুকে যাচ্ছে ময়লা ও স্যুয়ারেজের নোংরা পানি।


শহরের আমলাপাড়ার বাসিন্দা রফিকুল ইসলামের বলেন, সকালে প্রায় সময়ই পানি থাকে না। যাও পানি আসে  দুর্গন্ধ যুক্ত পানি আসে। সেই পানিও ব্যবহার করা যায় না। কালচে রঙের দেখতে, দুর্গন্ধ যুক্ত পানি আসে। যা কেউ খাওয়া তো দূরের কথা হাত মুখ ধোয়ার জন্যও ব্যবহার করে না।


বন্দর এলাকার সুমাইয়া আক্তার বলেন, কি একটা অবস্থা পানির জন্য ঠিক ভাবে রান্না করতেও পারছি না । খাওয়ার ও রান্নার জন্য বাইরে থেকে পানি কিনে এনে ব্যবহার করতে হচ্ছে। ওয়াসার পানি দিয়ে এখন কাপড় পর্যন্ত ধোয়া যাচ্ছে না। দুর্গন্ধমুক্ত পানি সরবরাহের জন্য আমরা মেয়রের কাছে অনুরোধ করছি। দ্রুত সম্ভব আমাদের বিশুদ্ধ পানির সরবরাহের ব্যবস্থা করুন।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জে ওয়াসার সরবরাহ লাইনের পাইপ বহু পুরনো। পাইপের জং থেকে পানি লাল হয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে দলা দলা ময়লা আসে। শীতলক্ষ্যার দূষিত পানি সঠিকভাবে পরিশোধন না করায় দুর্গন্ধ থেকে যাচ্ছে। বারবার লিখিত অভিযোগ জানানোর পরও ওয়াসা র্কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয় না।

 

এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন হওয়ার পর ২০১২ সাল থেকে ওয়াসার কার্যক্রম নাসিকের কাছে হস্থাস্তর করার ব্যাপারে আলোচনা চলছিল। আর গত ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর নাসিকের পক্ষে মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং ওয়াসার পক্ষে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও প্রকৌশলী তাকসিম এ খান রাজধানীর একটি হোটেলে নাসিক এবং ঢাকা ওয়াসার মধ্যে সমঝোতা চুক্তি সই করেন। চুক্তির আওতায় ঢাকা ওয়াসার নারাযয়ণগঞ্জ মডস জোন পরিচালনা করবে নাসিক। আগামী এক বছর ঢাকা ওয়াসা জনবল এবং কারিগরি বিষয়ে নাসিককে সার্বিক সহযোগিতা করবে।


জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে ঢাকা ওয়াসার বর্তমান গ্রাহকসংখ্যা ২৬ হাজারের বেশি। ১৯৯০ সালের পহেলা জুলাই থেকে ঢাকা ওয়াসা (ওয়াটার অ্যান্ড সোয়ারেজ অথরিটি) নারায়ণগঞ্জ জোনে তাদের সার্ভিস পরিচালনা করে আসছিল। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন হওয়ার পর ২০১২ সাল থেকে ওয়াসার কার্যক্রম নাসিকের কাছে হস্থাস্তর করার ব্যাপারে আলোচনা চলছিল।

 

যা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় গত ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর বাস্তবায়িত হয়েছিলো। সমঝোতা স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানা যায় নারায়ণগঞ্জে গভীর নলকূপ আছে ৩১টি, ৩২টি স্ট্রিট হাইড্রেন্ট, ওভারহেড ওয়াটার টাংক আটটি,

 

পানি শোধনাগার আছে দু’টি। ওয়াসার পানি মাঝেমধ্যে কিছুটা ভালোভাবে সরবরাহ করলেও বেশির ভাগ সময়ই পানের অযোগ্য পানি সরবরাহ করে এমন অভিযোগ পাওয়া যায়। বর্তমানে ওয়াসা, নারায়ণগঞ্জ মডস গোদনাইল, সোনাকান্দার পানি শোধনাগারের মাধ্যমে শীতলক্ষ্যার পানি সরবরাহ করছে। এ ছাড়া কয়েকটি গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।