শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১   ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

গাছের প্রতি নির্মমতা বন্ধ করুন

অমিত হাসান

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:৩৬ পিএম, ৯ জুন ২০২২ বৃহস্পতিবার

 


আমাদের আশেপাশের অনেকে নিজের পণ্য অথবা নিজের ব্যক্তি প্রচারে অন্যতম অবলম্বন হিসাবে দুঃখজনকভাবে বেছে নিয়েছে বৃক্ষরাজি অর্থাৎ গাছকে। গাছের বুকে নিষ্ঠুরভাবে পেরেক ঢুকে লাগানো হচ্ছে সাইনবোর্ড, ব্যানার, বিলবোর্ড ইত্যাদি। মানুষের এই নির্মমতার কারণে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে শত শত গাছ। যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে গাছের গায়ে পেরেক মারার কারণে গাছ মাটির নীচ থেকে খাবার সংগ্রহ করে বিভিন্ন শাখা প্রশাখায় পৌঁছাতে পারে না, এতে করে গাছের স্বাভাবিক খাদ্য গ্রহণের প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটে। খাদ্য শাখা প্রশাখায় পৌছাতে না পারার কারণে গাছ শুকিয়ে ধীরে ধীরে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ছে।

 


সরকার, প্রশাসন গাছের উপর নির্মমতা বন্ধে পেরেক না মারার জন্য গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছেন। আর গণসচেতনতা সৃষ্টির প্রধান মাধ্যম হচ্ছে বিভিন্ন এনজিও, রাজনীতিবীদ, জনপ্রতিনিধি। বিশেষভাবে জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবীদরা যদি আমাদের বেঁচে থাকার আধার অক্সিজেনের অবলম্বন গাছকে রক্ষার জন্য গাছের প্রতি এই নির্মমতা রোধে এগিয়ে আসে তবেই মানুষের নিষ্ঠুরতা, নির্মমতা থেকে গাছকে রক্ষা করা সম্ভব।

 

তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, যারা এই কাজটি করার কথা সেই সকল জনপ্রতিনিধি রাজনীতিবিধরা গাছের উপর এই নির্মমতার কাজটি খুব বেশী করে করছেন। আমাদের আশে পাশে একটু চোখ বুলালেই দেখা যাবে জনপ্রতিনিধি এবং রাজনীতিবিদদের অনেকেই নির্মমভাবে তাদের নিজের এবং দলের প্রচারের জন্য পেরেক মেরে ফ্যাষ্টুন, বিলবোর্ড, প্লাকার্ড ক্ষেত্র বিশেষে সাইনবোর্ড লাগিয়ে আমাদের বৃক্ষরাজিকে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

 

এখানে একটি কথা না বললেই নয়, আমরা যাদের সমাজের সামনের সারির মানুষ মনে করি, সেই শিক্ষিত সমাজ, চিকিৎসক, আইনজীবী এমনকি শিক্ষকদের অনেকেই  এই নির্মম কাজটি বেশী বেশী করে যাচ্ছেন। রাস্তার আশে পাশের বৃক্ষরাজিতে অহঃনিশ  এই দৃশ্য দেখা যায়।

 
নারায়ণগঞ্জ জজ কোর্ট, কালেক্টরেট ভবন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়ও দেখা যায় গাছের প্রতি এই নির্মমতার দৃশ্য। এই এলাকার বিভিন্ন গাছে কিছু বিজ্ঞ আইনজীবীদের সাইনবোর্ড অত্যন্ত নির্মমতার সাথে পেরেক ঠুকে ঝুলিয়ে রেখেছে, সবচেয়ে হতাশার বিষয় হচ্ছে নারায়নগঞ্জের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পাশে একটি নিম গাছে একজন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ এবং যথা আইনজীবীরা পেরেক ঠোকা একটি সাইনবোর্ড তথা কথিত শিক্ষিত সমাজে গাছের অবহেলার প্রকৃষ্ট প্রমাণ হিসেবে প্রতিদিন প্রদর্শিত হচ্ছে।

 


সমাজের অগ্রসরমান তথা কথিত শিক্ষিত বিজ্ঞজনদের এ ধরণের কর্মকান্ডে হতাশার কালো মেঘ যখন আমাদের পথরুদ্ধ করে দেয় ঠিক তখনই আশার আলো দেখায় মেহেরপুরের একজন রাজমিস্ত্রি ওয়াহিদ সরদার।

 

ওয়াহিদ সরদার অশিক্ষিত, রাজমিস্ত্রি, দিনমজুর, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়ে যিনি নিজ দায়িত্ববোধ থেকে বৃক্ষের প্রতি ভালোবাসার কারণে নিজ উদ্যোগে পেরেকের নির্মমতা থেকে বৃক্ষরাজিকে রক্ষা করার জন্য প্রতিদিন কাজ করে যাচ্ছেন নিজ হাতে পরম যত্নে গাছের শরীরে থেকে পেরেক তুলে যাচ্ছেন ২০১৮ সাল হতে। ইতিমধ্যে এই বৃক্ষ প্রেমিক ওয়াহিদ সরকার ২২/২৩ হাজার গাছের পেরেক নিজ হাতে তুলেছেন, যার পরিমাণ প্রায় ১০ মণ। ওয়াহিদ সরকারের আশা বাংলাদেশের সকল জেলা ঘুরে ঘুরে তিনি পেরেক তুলে ফেলবেন।


আমরা যারা নিজেদের শিক্ষিত মনে করি সেই সকল সার্টিফিকেট ধারী শিক্ষিত মানুষ ওয়াহিদ সরকারের অনুকরনীয় মহতী উদ্যোগের প্রতি সম্মান, সাধুবাদ জানিয়ে গাছের উপর পেরেক মারার এত নিষ্ঠুর কাজটি বন্ধ করে দেই এবং অন্যকে এই নির্মম কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য উদ্যোগী হইতে সচেতন করে তুলি। কারণ গাছ বাঁচলেই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়, আর পরিবেশের ভারসাম্যের উপর নির্ভর করে আমাদের জীবন। আসুন, আমরা সবাই রাজমিস্ত্রি ওয়াহিদ সরদারের পথে হাঁটি।এমই/জেসি